অতসী মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: জল্পনার অবসান। অবশেষে প্রকাশ্যে নুসরতের বেবি বাম্পের ছবি। ছবিতে দেখা গিয়েছে সাদা গাউন ও হালকা লিপস্টিক পরে দাঁড়িয়ে হাসছেন নুসরত। ঢিলে পোষাকের মধ্যে দিয়েও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাঁর বেবি বাম্প। ছবিতে রয়েছে টলিউডের আরও দুই অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় ও তনুশ্রী চক্রবর্তীও।



২০১৯ সালে তুরস্কে স্বপ্নের বিয়ে। তারপর কলকাতায় ফিরে রাজকীয় রিসেপশান। নুরসত জাহান আর নিখিল জৈনের বিয়ের জৌলুস এখনও ভুলতে পারেননি সাধারণ মানুষ। কিন্তু দু'বছর না ঘোরার আগেই সেই সম্পর্ক যে কার্যত কাদা ছোঁড়াছুড়ির জায়গায় পৌঁছে যাবে, তা আঁচ করা যায়নি।


নিজের ও নিখিলের সম্পর্ককে বিয়ে বলে মানতে অস্বীকার করেছিলেন নুসরত জাহান। একটি বিবৃতি দিয়ে নুসরত লেখেন, 'নিখিলের সঙ্গে আমার আইনত বিয়ে হয়নি। আমরা লিভ ইন করতাম। তাই বিচ্ছেদের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।' নিখিলের দিকে তাঁর গয়না পোষাক ও অন্যান্য দামি জিনিস আটকে রাখার জন্যও আঙুল তুলেছিলেন নুসরত। তিনি লিখেছিলেন, 'যেহেতু ওটা বিদেশের মাটি ছিল, তুরস্কের বিবাহ নিয়ম অনুযায়ী ওই অনুষ্ঠান অবৈধ। তাছাড়া যেহেতু এটা ইন্টারফেথ ম্যারেজ ছিল, তাই ভারতে বিশেষ বিবাহ আইনে এর বৈধতার প্রয়োজন। যা করা হয়নি। আইন অনুযায়ী, এটা বিয়ে নয়। কিন্তু, এটা এক ধরনের সম্পর্ক। বলা যেতে পারে, লিভ-ইন রিলেশনশিপ। কাজেই ডিভোর্সের প্রশ্নই ওঠে না। বহু আগে আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এনিয়ে আমি কিছু বলিনি। কারণ, আমি ব্যক্তিগত জীবন নিজের মধ্যেই রাখতে চাইছিলাম। কাজেই বিচ্ছেদ ইস্যুতে নিশ্চয়ই মিডিয়া বা অন্য যাদের সঙ্গে আমি জড়িত নই, তাদের তরফে আমার পদক্ষেপ নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠবে না। অভিযুক্ত এই বিয়ে আইনি বা বৈধ নয়। কাজেই আইনের চোখে ওটা আদৌও বিয়ে নয়।'


গতকাল নুসরতের পাল্টা একটি বিবৃতি জারি করে নিখিল জৈন জানান, '২০১৯-র জুনে তুরস্কে গিয়ে নুসরতকে বিয়ে করেছিলাম। তারপর কলকাতায় ফিরে রিসেপশন। স্বামী-স্ত্রীর হিসেবেই আমরা একসঙ্গে ছিলাম। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই নুসরতের আচরণ বদলে গিয়েছিল। ২০২০-র অগাস্টে একটি ফিল্মের শ্যুটিংয়ের সময় নুসরতের আচরণ বদলাতে থাকে। কেন হঠাৎ আমার প্রতি আচরণ বদলে যায়, সে কথা বলতে পারবে নুসরতই। বারবার বলা সত্ত্বেও বিয়ের রেজিস্ট্রেশন এড়িয়ে গিয়েছিল নুসরত। নুসরতের বাইরে যাওয়া নিয়ে নানা তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। নুসরত সম্পর্কে নানা খবর আসার পরেই নিজেকে প্রতারিত মনে হতে থাকে আমার। ২০২০-র ৫ নভেম্বর সমস্ত দামি জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যায় নুসরত। বাড়ি ছাড়ার পরে নুসরতের বাকি দামি জিনিস, আইটি রিটার্নের নথি পাঠানো হয়। সমস্ত জিনিস, কাগজপত্র নিয়ে বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে চলে যায় নুসরত। তারপর থেকে আমরা আর একসঙ্গে থাকিনি। বিয়ের পর বিপুল পরিমাণ গৃহঋণের ভার এড়াতে টাকা চেয়েছিল নুসরত। পারিবারিক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই টাকার অনেকটা এখনও বকেয়া আছে। টাকা, গয়না নিয়ে যা অভিযোগ করেছেন নুসরত, তা অসত্য।'


গত বৃহস্পতিবার নিজের প্রোফাইল থেকে নুসরতের সমস্ত ছবি ডিলিট করে দেন নিখিল। তার প্রোফাইলে শুধু তৃণমূল সাংসদ অভিনেত্রী ও নুসরতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিমির ছবি রয়েছে। আর রয়েছে নুসরতের বোনের ছবি। নিজের স্মৃতি থেকে কি নুসরতকে মুছে ফেলতে চাইছেন নিখিল? সেই কথা স্পষ্ট করে বলেননি নিখিল। অন্যদিকে এখনও নুসরতের প্রোফাইলে জ্বলজ্বল করছে তাঁর বিয়ে থেকে শুরু করে নিখিলের সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি। 


নুসরতের অন্তঃস্বত্ত্বা  হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই জল্পনা শুরু হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে। নুসরতের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে অভিনেতা যশের নামও। অন্যদিকে নিখিল জানিয়েছেন, নুসরতের অনাগত সন্তানের বাবা তিনি নন। কারণ নুসরতের সঙ্গে ৬ মাসেরও বেশি সময় তাঁর দেখা হয়নি। অজমের শরিফে নুসরত ও নিখিলের একসঙ্গে যাওয়ার পর থেকেই তাঁদের সম্পর্কের জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে অনুরাগীদের মধ্যেও। 


নিজের ও নুসরতের সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেও নিজের অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়া নিয়ে মুখ খোলেননি নুসরত। অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল, নায়িকা কি সত্যিই অন্তঃস্বত্ত্বা নাকি এটা কোনও ছবির প্রচার। কিন্তু আজ এবিপি লাইভে এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর আর কোনও সন্দেহ রইল না। ছবিতে স্পষ্ট নুসরতের বেবি বাম্প। তাঁর আলগা হাসিতে লালিত্যের ছোঁয়া। তবে নুসরতের সন্তানের বাবা কে, তা নিয়ে এখনও জারি রয়েছে তরজা। এবিষয়ে মুখ খোলেননি নুসরত নিজেও। অন্যদিকে চুপ রয়েছেন অভিনেতা যশ দাশগুপ্তও। তবে ছবিতে স্পষ্ট, নিজের মাতৃত্ব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন নুসরত।


নির্বাচনের পরেও নুসরতের ব্যক্তিগত জীবনকে হাতিয়ার করে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী শিবির। ট্যুইট করে নুসরতকে কটাক্ষ করেছেন অমিত মালব্য। মুখ খুলেছেন দিলীপ ঘোষও। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল।