কলকাতা: প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী পিলু ভট্টাচার্য্য। সূত্রের খবর, কয়েক দিন ধরেই বুকের ব্যথায় ভুগছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী। গত ১৭ অগস্ট সেই কারণে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পিলু ভট্টাচার্য্যর পেজ থেকে পোস্ট করে তাঁর ছেলে ঋতর্ষি ভট্টাচার্য্য বাবার মৃত্যুসংবাদের কথা জানান।
শুধু গান নয়, আসর জমিয়ে দিতে পারতেন শিল্পী। প্রিয় মানুষের চলে যাওয়ার মনখারাপ ফুটে উঠেছে অপর সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলামের কথায়। লম্বা পোস্টে তিনি ভাগ করে নিয়েছেন বিভিন্ন স্মৃতি। রূপম লিখছেন, 'ছোটবেলা থেকেই পিলুদা আমার টিম মেম্বার ছিলেন। তিনি সেলভেলের সূত্রে বহুবার হোর্ডিং পাবলিসিটির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার প্রথম গ্রুপ, আমার শৈশবের গ্রুপ ‘ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী’-র জন্য। বিশেষ করে মনে পড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান করেছিলাম ‘এ দেশ তোমার আমার’। আমি কীবোর্ড বাজিয়ে শীর্ষগানটি গেয়েছিলাম, আমার মার লেখা, বাবার সুরে। তা ছাড়াও মনে পড়ে আরও ছোটবেলায়, ‘এক জাতি এক প্রাণ’ অনুষ্ঠানের হোর্ডিংও পিলুদার ব্যবস্থা করে দেওয়া। তখন তো তাঁর সাথে পরিচয় ছিল না, তাই তখনকার প্রসঙ্গ ‘আপনি-আজ্ঞে’ করেই লিখতে হবে।
বাবা খুব ভক্ত ছিলেন পিলুদার পারফর্মেন্সের। আমাকে শিখতে বলতেন, দ্যাখ কী করে পিলু ‘এক দঙ্গল ছেলে’ গেয়ে হলভর্তি মানুষকে নাচিয়ে দিল— তুই পারবি? শিশিরমঞ্চ থেকে অনুষ্ঠান দেখে এসে বাবা বলেছিলেন। একথা অবশ্য নয়ের দশকের।
তারপর পিলুদার সঙ্গে আমার নিজ পরিচয়ে আলাপ হল। পিলুদা আমার বাবাকে যেমন শ্রদ্ধা করত, তেমনই স্নেহ করত আমায়। ‘দাদা না দিদি’ অনুষ্ঠানে আমার ক্যাপ্টেনসিতে ‘রকবাজ‘ টিমে তার অংশগ্রহণ আমাদের আরও কাছাকাছি এনে দেয়। যে কোনও টিমেরই মূল্যবান সম্পদ হতে পারত পিলুদা, আমাদের টিমের হয়ে লড়েও গোটা প্রতিযোগিতা মাতিয়ে রেখেছিল। আমরা কম্পিটিশন জিতিনি, কিন্তু মানুষের মন জয় করেছিলাম। আবার কিছু মানুষ আমাদের ঘৃণা করত, আমায় ঘৃণা করত। সে ধরনের মানুষের ভালবাসা বা সমর্থন তো আমরা চাইনি! তাদের ঘৃণা আজও আমাদের পাথেয় হয়ে আছে।
এই দেখুন, ‘আছে’ লিখে ফেললাম। রকবাজ টিমের স্পিরিট আজও আমার সঙ্গে আছে। থাকবে চিরদিন। পিলুদাও বেঁচে থাকবে আমার জীবনে ‘রকবাজ’ হয়েই। আর কোন কোন টিম এখনও স্পিরিটে বেঁচে আছে শুনি? মনে হয় না আর কেউ মনে রেখেছে বলে। সবার কাছে ওটা ছিল নেহাত একটা প্রতিযোগিতা। আর আমার টিম তৈরি করে ফেলেছিল সংসার। আমার সব টিমেই সেটা হয়। কী করে হয় কে জানে!
এখানেই ‘রকবাজ’দের জিতে যাওয়া। পিলুদা ফসিলস মঞ্চেও আমার সঙ্গে মঞ্চে থেকেছে। তার গানও আমি রেকর্ড করেছি। যখনই দেখা হয়েছে আমরা মজা করেছি। আমার কালো জামার সম্ভার দেখে পিলুদার সেই অমর উক্তি ‘রূপমের আলমারি খুললেই লোডশেডিং হয়ে যায়’— আমার মনের দেওয়ালে বরাবর টাঙানো থাকে। সে সব কিছু তো আছেই। কিন্তু তারপরেও থেকে যায় আসল সংহতির জায়গাটা— আমরা ‘রকবাজ’। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তগুলো আমরা কেউই ভুলিনি। তবুও পুরো ব্যাপারটাই এতদিন পরে আমাদের কাছে ‘মজা’ হয়ে গিয়েছে।
পিলুদার চলে যাওয়ার খবরটা ভুলে আমি জাস্ট লিখতে যাচ্ছিলাম— ‘পিলুদা, ঘাবড়াও মৎ— রকবাজদের রিইউনিয়ন হবেই, তোমাকে ফাটিয়ে পারফর্ম করতে হবে, তৈরি হও!’ —আমার ফোনে ঢুকে এল ‘রকবাজ’ টিমের আসল দাদা, ‘সব দাদার সেরা দাদা’ অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের মেসেজ— ‘একজন রকবাজ চলে গেল রূপম, খুব খারাপ লাগছে!’
সব মনে পড়ে গেল। লোডশেডিং হয়ে গেল, আলমারিতে নয়, মনে।
পিলুদা যে চলে গেছে না ফিরবার দেশে, কাল রাতে।' (অপরিবর্তিত)
কেবল গান গাওয়া নয়, নিজে গান লিখতেনও পিলু ভট্টাচার্য্য। তাঁর লেখা একাধিক গান মন জয় করেছিল মানুষের। জনপ্রিয় হয়েছিল অ্যালবামগুলিও।