নয়াদিল্লি: বর্তমান দিনে মানুষের অন্যতম নির্ভরতার বিষয় হল ইন্টারনেট।এর মাধ্যমে একই জায়গায় বসে এখন অনেক কিছু করা যায়। ইন্টারনেট নানান ধরনের তথ্য আহরণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় রোগ, রোগের উপসর্গ ও সমস্যা সম্পর্কে ইন্টারনেটে তথ্য জানার চেষ্টা করেন। রোগের প্রতিরোধ, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রোগ সংক্রান্ত তথ্য খোঁজার চেষ্টা কাউকে আরও ‘অসুস্থ’ করে তুলতে পারে। এ বিষয়ে ড, আবরার মুলতানি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন।
ইন্টারনেটে রোগ সম্পর্কে খোঁজখবর কাউকে কেন আরও অসুস্থ করে তুলতে পারে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবরার মুলতানি বলেছেন, বর্তমান সময়ে ছোটোখাটো বিষয়েও জানতে আমরা প্রথমেই ইন্টারনেটের সহায়তা নিই। করোনাভাইরাস সক্রান্ত অতিমারীর তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেটের প্রচুর ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু সবার আগে ওই সমস্ত তথ্য বিশ্বাসযোগ্য কিনা, তা যাচাই করে দেখতে হবে। কারণ, ইন্টারনেটে অনেক সময়ই একেবারে আনকোরা বা অসম্পূর্ণ তথ্য ঘোরাফেরা করে। আর এই সব তথ্য গ্রহণ করলে তা কারুর স্বাস্থ্যে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন দেখে নেওয়া যাক, ইন্টারনেটে রোগ সংক্রান্ত তথ্য কাউকে অসুস্থ কেন করে তুলতে পারে, সেই বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাথা ব্যাথা সংক্রান্ত বিষয়ে যখন তথ্য জানতে চাওয়া হয়, তখন ইন্টারনেটে ব্রেন টিউমার বা ফ্যাটিগ সংক্রান্ত বিষয়েও সবকিছু তথ্য উঠে আসে। আর স্বাভাবিত প্রবণতাই হল সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়টি সম্পর্কেই উদ্বেগ বোধ কর। সেজন্য, এই সব তথ্যের মধ্যে ব্রেন টিউমারকেই অগ্রাধিকার দিয়ে বসতে পারেন। আর ব্রেন টিউমারের আশঙ্কায় এভাবে ঘুমও উড়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বেড়ে যেতে পারে নার্ভাসনেস ও উদ্বেগবোধ। আর এই বিষয়গুলিই একেবারে সাধারণ সমস্যাকেই জটিল করে তুলতে পারে। মেডিক্যাল সায়েন্সে এই রোগটিকে বলা হয়, সাইবারকোন্ড্রিয়া। এটা হল ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্যের পর নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অস্বাভাবিক উদ্বেগ।
চিকিৎসক আবরার মুলতানি জানিয়েছেন,এই সাইবারকোন্ড্রিয়ার ফলে রোগী নিজেকে সামান্য কাশি ও ব্যথা হলেও গুরুতর অসুখে আক্রান্ত বলে মনে করতে থাকেন। এরপর তিনি চিকিৎসকের কাছে যান এবং প্রায় জোর করেই অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি জানিয়েছেন,. তাঁদের কাছে এ ধরনের অনেক মানুষ আসেন, যাঁরা গ্যাসের জেরে বুক ব্যাথার সমস্যাকেও হার্ট অ্যাটাক বলে মনে করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ইসিজি, ইকো-র মতো পরীক্ষা করানোর জন্য জোর করতে থাকেন। আর এর কারণ শুধু ইন্টারনেটই নয়, অনেক সময় আশেপাশের লোকজনও হতে পারেন, যাঁরা সাধারণ সমস্যাকে গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ বলে কারুর মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পারেন।
সাইবারকোন্ড্রিয়া থেকে রক্ষার উপায়
চিকিৎসক মুলতানি বলেছেন, এর থেকে রক্ষা পেতে হলে এই পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক থেকে দূরে রাখতে হবে এবং আর মনে রাখতে হবে যে, ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্ত নয়। কোনও রোগ ও অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকের ওপর ভরসা রাখতে হবে এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনও ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।