কলকাতা: ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছে গানকে সঙ্গে করেই। বাড়িতে গানের পরিবেশ, সবাই রেওয়াজ করছেন, সেটাই যেন ছুঁয়ে গিয়েছিল দুই কিশোরীকে। আর সেই পথ ধরে হেঁটেই দুই কন্যা এখন শ্রোতাদের মুগ্ধ করছেন তাঁদের সুরে-গানে। নিজেরাই তৈরি করছেন গান, সুর দিচ্ছেন... তুলে ধরছেন শ্রোতাদের সামনে। প্রশংসিতও হচ্ছে। আগামীকাল, শুক্রবার কলকাতার বুকে আরোও এক অনুষ্ঠান আনন্দী আর আহেরির। তাঁদের আরও এক পরিচয়.. তাঁরা সঙ্গীতশিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের দুই কন্যে। 


আগামীকাল, 'চ্যাপ্টার ২' ক্যাফেতে সন্ধে সাড়ে সাতটায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করবেন আনন্দী আর আহেরি, উপস্থিত থাকবেন বাবা রাঘবও। কী কী থাকছে এই অনুষ্ঠানের সূচীতে? সঙ্গীতশিল্পী আনন্দী বলছেন, 'আমি আর আহেরি জুটিতে পারফর্ম করি। আমরা আমাদের নিজেদের লেখা ও সুর করা হিন্দি ও বাংলা বেশ কয়েকটি গান গাইব এদিন। এছাড়া কিন্তু জনপ্রিয় হিন্দি কভার, নতুন আঙ্গিকে বেশ কিছু পুরনো ইংরেজি গান গাইব। আর থাকবে বেশ কিছু ফিউশন। আমি ধ্রুবদী সঙ্গীত শিখি। সেখান থেকেই বেশ কিছু গানের ফিউশনের পরিকল্পনা করেছি। তালিকায় থাকছে বাবার গানও। শেষমেষ আমাদের সঙ্গে বাবাও গান গাইবেন। এভাবেই অনুষ্ঠানটা সাজিয়েছি।'


আনন্দী-আহেরির গান শেখা কী বাবার হাত ধরেই? আনন্দী বলছেন, 'আমাদের বাড়িতে গানের পরিবেশ পেয়ে এসেছি ছোট থেকেই। বাবা, মা, ঠাকুমা সবাই গানের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও আমরা অন্যান্য গুরুদের কাছে গান শিখি। এখনও চর্চা করছি।' এই প্রথম নয়, এর আগেও জুটিতে একাধিক কাজ করেছেন আনন্দী-আহেরি। সঙ্গীতশিল্পী বলছেন, 'আগের মাসেও আমরা একটা শো করেছি জি-ডি বিড়লা সভাঘরে। কখনও আমি আহেরি, কখনও আমরা ৩ জন পারফর্ম করি।' সদ্য কলেজ পাশ করেছেন আনন্দী, আহেরি সবেমাত্র ভর্তি হয়েছেন কলেজে।


ভবিষ্যতে কী গান নিয়েই কেরিয়ার তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে আনন্দী-আহেরির? আনন্দী বলছেন, 'সেভাবে না ভাবলেও, আমরা মিউজিক নিয়েই কাজ করছে। ট্র্যাক তৈরি করি, অন্যান্যদের জন্যও গান বানাই। আমাদের বাড়িতে স্টুডিও রয়েছে, সেখানে কাজ করি। বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি ছাড়া অন্যান্য ভাষাতেও কাজ করেছি। কন্নড় কিছু প্রোজেক্ট করেছি। তেলুগু কাজের কথা চলছে। মুম্বইতেও বেশ কিছু কাজ করেছি। ফেসবুক ইনস্টাগ্রামেও মিয়মিত ভিডিও শেয়ার করে আমরা।'


এ তো গেল মেয়েদের কথা, দুই মেয়েকে নিয়ে কতটা স্বপ্ন রয়েছে শিল্পী রাঘবের? মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে শিল্পীর গলায় আবেগ, পরিতৃপ্তি। বললেন, 'আমি কখনও আমার মেয়েদের কিছুর জন্য জোর করিনি। কখনও ওদের বলিনি যে গান করতেই হবে। কিন্তু নিজের সন্তানেরা যদি নিজেরই পছন্দের বিষয়কে বেছে নেয়, তাহলে তো একটা ভাললাগা কাজ করেই। সেটা সবসময় হবেই এমনটা নয়। আমার বড় মেয়ে আনন্দি ছোট থেকেই গান ভালবাসত। ৩-৪ বছর বয়সেই সুরে গান গাইত। ছোট মেয়ে আহেরি কিন্তু তেমন ছিল না। ওর বেশি আগ্রহ ছিল বাদ্যযন্ত্রে। এখন ও ধীরে ধীরে গানের দিকে এসেছে। ও জ্যাজ় শেখে, মূলত গিটার বাজায়, সঙ্গে কম্পোজ়িশন। দিদির সঙ্গেও গান গায়, একসঙ্গে পারফর্ম করে। এখন দুজনেই গান করছে, নিজেরাই নিজেদের মিউজ়িক তৈরি করছে। প্রোডাকশন করছে। এটা আমার কাছে বড় স্বপ্নের, আনন্দের। আমার দুই মেয়ে আমার মতোই গান পাগল হয়েছে আর সেটা নিয়েই থাকতে চায়। আমি কখনও ওদের বাধা দিইনি। কেবল বলেছি, 'আনন্দ করে যেটা করবি সেটাই কর, কিন্তু মন দিয়ে কর।' ওরাও জানে এই বিষয়টায় আমি খুব কড়া। ওই এক দুই দিন গান গেয়ে ছেড়ে দিলে হবে না। আমার ৭৭ বছরের মা এখনও রোজ রেওয়াজ করেন। স্ত্রীও তাই। আমার একদিনও রেওয়াজ বাদ পড়ে না যতই কাজ থাকুক। ওদের গানবাজনা মানুষের পছন্দ হয়েছে, এটাই প্রাপ্তি। আমি যেমন ক্লাসিক্যাল থেকে শুরু করে ফিল্মে গেয়েছি, ফিউশন করেছি, রবীন্দ্র-নজরুল গেয়েছি.. ওরাও তেমনই সবরকম মিউজ়িক নিয়ে কাজ করছে। এটাই আমায় ভীষণ তৃপ্তি দেয়।'




আরও পড়ুন: Vikram Chatterjee: সিনেমায় মুখ্য চরিত্র পাওয়ার জন্য ১২ বছর অপেক্ষা করেছি


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।