স্ত্রীর পাশে থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত
‘জীবনে এর থেকে ভাল সময় আর কিছু হতে পারে না,’ কোভিড পরিস্থিতিতে বসেও উচ্ছ্বসিত রাজ। এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘আমি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি। ১০০ দিনের ওপর বাড়ির বাইরে যেতে পারিনি। কিন্তু জীবনের এই বিশেষ অধ্যায়টাকে ভীষণভাবে উপভোগ করছি। এখন তো খুব কম সময়ের জন্য অফিস যাচ্ছি। কেবল শুভশ্রী নয়, গোটা পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাচ্ছি। আর অবশ্যই, যতটা সম্ভব শুভশ্রীর পাশে থাকতে পেরেছি। একজন স্ত্রীর তাঁর স্বামীকেই তো সবচেয়ে বেশি দরকার। এই সময়টার জন্য আমি তৈরিই ছিলাম।’
অপেক্ষার আর ২ মাস
কবে আসতে চলেছে নতুন অতিথি? ‘সেপ্টেম্বরের শেষে! রোজই কাউন্টডাউন করি, আর কত সপ্তাহ বাকি,’ কথাগুলো বলে এক মুহূর্ত কী যেন ভেবে নিলেন রাজ। বোধহয় ভবিষ্যৎ নিয়ে এক টুকরো স্বপ্ন। জানালেন, ছবি মুক্তির অপেক্ষা নিয়ে তেমন উৎকন্ঠা থাকে না কোনদিনই। কিন্তু এই নতুন অপেক্ষায় মিশে রয়েছে অনেকটা আনন্দ আর উদ্বেগ। নতুন অতিথির জন্য সময় পেলেই আগাম পরিকল্পনা সেরে রাখছেন বাড়ির সবাই। রাজ বললেন, ‘তাকে কীভাবে সন্তুষ্ট রাখা যায়, খুশি করা যায় সেই কথাই ভাবছি খালি।’
‘আমি কি মোটা হয়ে যাচ্ছি?’
বাড়িতে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিচরণ ‘মাদার টু বি’ শুভশ্রীর। মাতৃত্ব তিনিই তো সবচেয়ে বেশি উপভোগ করছেন। তাই কখনও ফ্রিজ খুলে চকলেট খাচ্ছেন, কখনও পোস্ট করছেন বেবি বাম্পের ছবি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আড়ালে নায়িকা মাথায় ঘুরছে কোন চিন্তা? রাজ চুপিচুপি বললেন, ‘শুভশ্রী একেবারেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। কিন্তু বারবার আমাদের জিজ্ঞাসা করছে, আমি মোটা হয়ে গেছি না? আমরা তখন সবাই মিলে ওকে আশ্বস্ত করছি। বলছি, ‘তুমি একই রকম আছো।’ রাজ আরও বললেন, ‘শুভশ্রীর মধ্যে কিছুই বদলায়নি, কেবল হ্যাপিনেস অ্যাড অন হয়েছে। অদ্ভুত একটা মা মা হয়ে উঠছে ও। এখন নিজের যত্ন নিচ্ছে। বাড়ির সবাইও ভীষণ খুশি। আর শুভশ্রীর এই খুশিটা দেখেই আমার ভালো লাগছে। আমি সবসময় বলছি, উই আর প্রেগনেন্ট।’
‘পরের জন্মে শুভশ্রীর শাশুড়িই হতে চাই’
রাজের মায়ের কোলে শুয়ে রয়েছেন শুভশ্রী। আর পরম যত্নে তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন শাশুড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিওতে অনায়াসেই ধরা পড়ে শাশুড়ি-বৌমার সম্পর্কের মধুর রসায়ন। রাজ বললেন, ‘মা তো সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড! মা আর শুভশ্রী দুজন বন্ধুর মতো। শুভশ্রী সব ভূমিকাতেই সমান সাবলীল, আন্তরিক। আমি মা কে জিজ্ঞাসা করেছি, তোমার কাছে কে বেশি ইম্পর্টান্ট? মা বলল, তোরা দুজনে। তবে যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকে, তাহলে আমি আবার শুভশ্রীর শাশুড়ি হয়েই জন্মাতে চাই।’
বন্ধ চিৎকার, ফোনের ব্যস্ততা
নতুন অতিথির অপেক্ষা চলছে। বাড়িতে তাই বন্ধ চেঁচামেচি। অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, সকলকে কথা বলতে হবে নিচু ডেসিবেলে। ফোনে ব্যস্ত থাকা চলবে না। চিৎকার নৈব নৈব চ। সারাদিন বাড়িতে চলছে ভালো গান, সিনেমা। বাদ যাচ্ছে না বই পড়াও! সন্তানের জন্য এমন পরিবেশই নাকি তৈরি করেছেন রাজ-শুভশ্রী। রাজ বললেন, ‘সবকিছু খেয়াল রাখছে শুভশ্রী। বাড়িতে সারাক্ষণ একটা আনন্দের পরিবেশ বজায় রাখা হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠেই হাসি-ঠাট্টা চলতে থাকে। সবাই খুব আস্তে কথা বলছে।‘ বদল এসেছে খাওয়া-দাওয়াতেও। কোভিড পরিস্থিতির জন্য মানা হচ্ছে বিশেষ সতর্কতা। রাজ বললেন, ‘এখন মাস্ক, স্যানিটাইজারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। বাইরের সমস্ত জিনিসকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। পরিচারিকারা ছুটিতে রয়েছেন। গাড়িও নিজে চালানোর চেষ্টা করছি।’
কোভিড বনাম সিনেমা
‘ফিল্মস অ্যান্ড ফ্রেমস’-এর ৭টা পুরস্কার পেয়েছে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘পরিণীতা’। প্রধান ভূমিকায় ছিলেন শুভশ্রী। আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা জানতে চাওয়ায় রাজ বললেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মুক্তি পাবে ‘ধর্মযুদ্ধ’। রয়েছে অপর নতুন ছবি ‘হাবজি গাবজি’-ও। টেলিভিশন শো ও ওটিটির জন্যও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কোভিড পরিস্থিতিকে এখন ছবির পর্দায় ফুটিয়ে না তোলাই ভালো। আমি এখন কেবল খুশির ছবিই বানাব।’ তবে সিনেমা হল খুললেও মানুষ সাহস করে ছবি দেখতে আসবেন কি না, নিশ্চিত নন পরিচালক। বললেন ‘সমস্ত কিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।’
‘স্বজনপোষণ মানেই বুঝি না’
কেবল বলিউড নয়, গোটা সিনে দুনিয়াকে ধাক্কা দিয়েছে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু। সেই সঙ্গে বার বার উঠে এসেছে বলিউডে স্বজনপোষণ বা নেপোটিজমের কথাও। টলিউডের অন্দরেও কি চলে স্বজনপোষণ? উত্তরে রাজ বললেন, ‘সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে ভীষণ চর্চা হয়েছে। আমি এই সব থেকে দূরে থাকতে চাই। সবসময় ভালো কিছু ভাবার চেষ্টা করি। আমি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে এসেও নিজেকে নিজে কাউন্সেলিং করেছি।’ পরিচালক আরও বললেন, ‘নেপোটিজম মানেটাই আমি বুঝি না। আমি কারও থেকে সাহায্য পাইনি। দরকার শুধু পারফরম্যান্স, আত্মবিশ্বাস, নিষ্ঠা, সংকল্প।’
‘মায়ের মতোই দেখতে হোক’
সন্তানকে নিয়ে ইতিমধ্যেই স্বপ্ন বুনছেন দম্পতি। মা না বাবা, কার মতো হবে ছোট্ট তারকা? রাজ বলছেন, ‘আমি চাই শুভশ্রীর সব গুণ সন্তান পাক। ওর মায়ের মধ্যে এমন অনেক গুণ আছে যা হয়তো কেউই জানি না। আমার একদম ধৈর্য্য নেই। যে আসছে, সে যেন ধৈর্য্যশীল হয়ে জীবনে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর, ওকে দেখতেও শুভশ্রীর মতোই হোক।‘ লাজুক হাসলেন রাজ।
শুভশ্রীর জন্য...
‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে একটা মেয়ে যা করে, শুভশ্রী তা-ই করছে। ও একটা প্রাণ সৃষ্টি করছে,‘ রাজের গলায় আবেগ। শুভশ্রীর জন্য প্রেমিক, স্বামী, পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর কোনও বিশেষ বার্তা? রাজ গেয়ে উঠলেন, ‘প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই, সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই, তোমাকে...’