মুম্বই: সুশান্ত সিংহ রাজপুত মৃত্যু মামলায় নয়া মোড়। রিয়া চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তি বান্দ্রা থানায় প্রয়াত অভিনেতার দুই দিদি প্রিয়ঙ্কা সিংহ ও মীতু সিংহর বিরুদ্ধে দায়ের হল এফআইআর। দুই বোনের বিরুদ্ধে সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। সুশান্তর দুই দিদি ও এক চিকিত্সক তরুণ কুমারের বিরুদ্ধে রিয়ার অভিযোগ দায়েরর ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই এফআইআর দায়ের করা হল ।


বান্দ্রা থানার ইন্সপেক্টর প্রমোদ কুমার সুশান্তর দুই দিদি ও এক চিকিত্সকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। চিকিত্সক তরুণ কুমার দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের কার্ডিওলোজির অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর। তাঁর বিরুদ্ধে সুশান্তর জন্য প্রেসক্রিপশন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, প্রতারণা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ( প্রতারণা), ৪৬৪ ( ভুয়ো নথি তৈরি), ৪৬৫ (জালিয়াতি), ৪৬৬ ,৪৬৬ ( প্রতারণার উদ্দেশে জালিয়াতি), ৪৭৪(নথিপত্র হাতানো), ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) ও ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে নারকোটিক্স ড্রাগস ও সাইকোট্রোপিক সাবস্ট্যান্স আইনের আওতায় ৮(১), ২১,২২ ও ২৯ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। এর আগে রিয়া সাত পাতার অভিযোগ পুলিশকে দিয়েছিলেন।

মুম্বই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) (হেডকোয়াটার্স-১) ও এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে বান্দ্রা থানায় একটি এফরআইর দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই মামলা পরবর্তী তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়েছে।

গত রাত প্রায় একটা নাগাদ মুম্বইয়ের বান্দ্রা থানা থেকে বেরিয়ে আসেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। এনসিবি-র জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি থানায় যান এবং সেখানে বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন । তিনি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের দিদি প্রিয়ঙ্কা সিংহ ও মীতু সিংহ ও আরএমএলের চিকিত্সক তরুণ কুমারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। রিয়া সুশান্তর জন্য ভুয়ো প্রেসক্রিপশনের অভিযোগ দায়ের করেন।
রিয়ার অভিযোগ, প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত বায়পোলার ডিসঅর্ডারের সমস্যা সম্পর্কে জানা গিয়েছিল এবং তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে চিকিত্সা চলছিল। রিয়ার অভিযোগ, সুশান্ত সঠিকভাবে চিকিত্সা করাচ্ছিলেন না এবং প্রায়ই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিতেন।
রিয়ার অভিযোগ অনুসারে, সুশান্ত গত ৮ জুন তাঁকে ফোনে মেসেজ দেখিয়েছিলেন, যাতে তাঁর ও তাঁর দিদি প্রিয়ঙ্কার কথাবার্তা হয়েছিল। প্রিয়ঙ্কা সুশান্তকে ওষুধের একটি তালিকা পাঠিয়েছিলেন। রিয়ার দাবি, তিনি সুশান্তকে বলেন যে, যে চিকিৎসকদের দেখিয়েছিলেন, তাঁদের ওষুধ আগে থেকেই চলছে।
রিয়ার দাবি, সুশান্ত তাঁর সঙ্গে সহমত হননি এবং বলেন যে, তাঁর দিদি যে ওষুধ বলেছেন, সেই ওষুধই তিনি খাবেন।
রিয়া বলেছেন, ওই দিনই সুশান্ত তাঁকে চলে যেতে বলেছিলেন। কারণ, তাঁর দিদি মীতু সিংহ কিছুদিনের জন্য বাড়িতে থাকতে আসছেন।
অভিযোগ অনুসারে, এ কথাও সামনে এসেছে যে, গত ৮ জুন সুশান্ত তাঁর দিদি প্রিয়ঙ্কাকে বলেছিলেন যে, ওই ওষুধগুলি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া পাওয়া যাবে না। ওই দিনই প্রিয়ঙ্কা সুশান্তকে দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক তরুণ কুমারের স্বাক্ষর যুক্ত প্রেসক্রিপশন পাঠিয়ে দেন। রিয়ার অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে ওই প্রেসক্রিপশন ভুয়ো বলেই মনে হচ্ছে। চিকিত্সক যে ওষুধের বন্দোবস্ত করেছেন, তা রোগীর সঙ্গে কথা না বলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া যায় না।
রিয়ার অভিযোগ, ওই প্রেসক্রিপশনে অবৈধ উপায়ে মানসিক অসুস্থতা সংক্রান্ত ওষুধগুলি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সুশান্তর মৃত্যুতে মাদক যোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত চালাচ্ছে নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। রবিবারের পর সোমবারও রিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনসিবি। এদিনও ফের তলব করা হয়েছে রিয়াকে। এনসিবি-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মুথা অশোক জৈন এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিয়াকে ডাকা হয়েছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও জানার প্রয়োজন। তদন্তে রিয়া সহযোগিতা করছেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে এনসিবি আধিকারিক বলেছেন, ডাকলেই তিনি আসছেন।