কলকাতা: প্রথম জীবনে ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না তিনি, এমনকি মঞ্চে দর্শকদের সামনেও না! তাঁকে অনেক বেশি টানত মঞ্চের সেট, আলো আর শব্দগ্রহণের কাজ। ভেবেছিলেন, সেটাই হতে চলেছে তাঁর ভবিষ্যৎ জীবিকা। তবে তাঁর মধ্যে যে অভিনয় সত্ত্বা ছিল.. সেটা প্রথম আবিষ্কার করেছিল এই নাটকের মঞ্চই। ধীরে ধীরে ছোটপর্দা.. তারপরে বড়পর্দা। একাধিক চরিত্রে অভিনয় করে মনজয় করলেও, দর্শক আজও তাঁকে একডাকে স্মরণ করে ফেলুদা হিসেবে। পর্দায় এখনও পর্যন্ত ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন যে সমস্ত অভিনেতারা, তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যাই এখনও সবচেয়ে বেশি। তিনি সন্দীপ রায়ের (Sandip Roy)-এর ফেলুদা। তিনি সব্যসাচী চক্রবর্তী (Sabyasachi Chakraborty)। আজ তাঁর জন্মদিন।
যাঁকে ফেলুদা হিসেবে দর্শকের সামনে প্রথম এনেছিলেন সত্যজিৎ পুত্র, তাঁর জন্মদিন আর টলিউডের 'বেণুদা'-র জন্মদিন একই দিনে। কখনও কখনও একসঙ্গে শ্যুটিংয়ের মধ্যেই পালন করেছেন জন্মদিন, কখনও আবার পরিবারের সঙ্গেও পালন করেছেন বিশেষ এই দিনটা। তবে এই দিনটায় বিশেষ উদযাপন এখন আর পছন্দ করেন না সব্যসাচী। এবিপি লাইভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'এক বছর শ্যুটিং-এ ছিলাম সন্দীপ রায়ের সঙ্গে। ওনারও একই দিনে জন্মদিন। সেদিন শ্যুটিং-এর মধ্যেই কেক কাটা হল। আবার কখনও হয়ত বেড়াতে গিয়েছি। তার মধ্যেই জন্মদিন পড়েছে। তখন কেক পাওয়া গেলে ভাল, না হলে ওই দই, পায়েস। তবে খুব একটা বাড়াবাড়ি কিছু হয় না। জন্মদিন পালন করার বয়স এটা নয়। এই বুড়ো বয়সে জন্মদিন হওয়া মানেই তো শেষের দিকে আরও এক পা এগিয়ে দিচ্ছি। সবচেয়ে মনে রাখার মতো তো ছোটবেলার জন্মদিনগুলোই। ছোটবেলায় এই দিনটি বেশ বড় করে পালন হত। আমার আর আমার বোনের জন্মদিন একই মাসে। সেই জন্য মাঝামাঝি একটা দিন বেছে নেওয়া হত। সেদিন মা রঙিন কাগজ-বেলুন টাঙিয়ে, খাবার বানিয়ে বলতেন, বন্ধুদের ডাকো। পাসিং দ্য পার্সেল, মিউজিক্যাল চেয়ার সব খেলা হত। সেইসব দিনের কথা মনে পড়লে খুব আনন্দ হয়।'
যে চরিত্রে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, কখনও ভেবেছিলেন তিনিই হবেন পর্দার ফেলুদা? সব্যসাচী এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রথম ফেলুদা-প্রেম পর্দা নয়, বই থেকেই। নিজের বাবার সঙ্গে ফেলুদার চরিত্রের মিল পেতেন তিনি। সেই ভালবাসা থেকেই প্রথমে গল্প পড়া আর তারপরে পর্দায় আলাপ ফেলুদার সঙ্গে। 'সোনার কেল্লা', 'জয় বাবা ফেলুনাথ' দেখে ইচ্ছা হয়েছিল ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করার। তখন পুরোদমে অভিনয় করছেন নিজেও। সাহস করে একবার পৌঁছে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের কাছে। ফেলুদার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু সন্তোষ দত্ত নেই বলে 'ফেলুদা'-র ছবি তৈরি করতে চাননি সত্যজিৎ। তবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন রাস্তাটা। বলেছিলেন, সন্দীপ রায় কখনও ফেলুদার ছবি তৈরি করলে, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সত্যজিৎ রায়ের সেই কথাই যেন কিছু বছর পরে ঘুরিয়ে দিয়েছিল সব্যসাচীর কেরিয়ারের মোড়। পর্দায় সন্দীপ-সব্যসাচীর জুটি দর্শকদের একের পর এক উপহার দিয়েছে ফেলুদার গল্প। আট থেকে আশিকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেই কৈশোরে.. যেখানে ফেলুদার সঙ্গে রহস্য সমাধানে বেরিয়ে পড়া যায় মনে মনে। বাক্সরহস্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সব্যসাচী চক্রবর্তীর ফেলুদার স্বপ্নসফর... আজও রাস্তায় কোনও খুদে তাঁকে ডেকে ফেলে ফেলুদা বলে..
বাঙালির জীবনে যিনি মিশে থাকলেন 'ফেলুদা' হয়ে... সেই অভিনেতাকে এবিপি লাইভের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।