মুম্বই: তনুশ্রী দত্ত নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনার পর থেকেই বলিউডে খুলে গিয়েছে প্যান্ডোরার বাক্স। এমন সব অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠছে, যাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কিছুদিন আগেও কার্যত অকল্পনীয় ছিল। আর এবার যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁকে বলি দর্শকরা চেনেন সংস্কারী বাপুজি নামে, যিনি বিশ্বের লোককে উপদেশ দেন, ঠিক কীভাবে সমাজকে সঠিক পথে চালিত করা যাবে। হ্যাঁ, স্বয়ং অলোক নাথ। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।


অভিযোগকারিণী নামী লেখক-পরিচালক-প্রযোজক বিনতা নন্দ। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ১৯ বছর আগে বলিউডের সব থেকে ‘সংস্কারী’ অভিনেতা ধর্ষণ করেন তাঁকে। বিনতা বলেছেন, ১৯৯৩ সালে তারা নামে একটি টিভি সিরিয়ালের মুখ্য অভিনেতা তাঁকে ধর্ষণ করেন। তাঁর সঙ্গে যা যা ঘটে সব কিছুর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত অভিনেতার নাম লেখেননি বিনতা, শুধু বলেছেন, তিনি সংস্কারী নামে পরিচিত। কিন্তু তারা সিরিয়ালের মুখ্য ভূমিকায় যে অলোক নাথ ছিলেন তা সকলের জানা, বলিউডের সংস্কারী অভিনেতা বলে তাঁকেই মানা হয়। ফলে দুয়ে দুয়ে চার করতে কারও অসুবিধে হয়নি।

বিনতা লিখেছেন, তখনকার এক নম্বর সিরিয়াল তারা-র লেখক ছিলেন তিনি। সিরিয়ালের নায়িকাকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করতেন মুখ্য অভিনেতা কিন্তু নায়িকা তাঁকে পাত্তা দিচ্ছিলেন না। তিনি ছিলেন মাতাল, নির্লজ্জ, মানুষ হিসেবে অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু যেহেতু তিনি টেলিভিশন স্টার তাই অনেকে জেনে বুঝে প্রশ্রয় দিত তাঁকে। নায়িকাকে নিয়মিত উত্যক্ত করতেন ওই ব্যক্তি। তিনি অভিযোগ করলে বিনতারা সিদ্ধান্ত নেন, দুজনের শেষ শটের পর অভিযুক্তকে সিরিয়াল থেকে বার করে দিতে হবে। তা জেনে যান অভিযুক্ত। তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন, সেটে বসেও ক্রমাগত মদ খাচ্ছিলেন। ক্যামেরা চালু হওয়ার পর অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে তিনি নায়িকাকে জাপটে ধরেন। তাতে নায়িকা থাপ্পড় মারেন তাঁকে। তখনই অভিযুক্তকে সেট থেকে বার করে দেওয়া হয়।

ওই অভিনেতার স্ত্রী ছিলেন বিনতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একদিন বিনতাকে তাঁর বাড়িতে পার্টিতে নিমন্ত্রণ করা হয়। অভিযুক্তের স্ত্রী তখন শহরের বাইরে ছিলেন। তাতে বিনতার অসুবিধে হয়নি, নিজের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পার্টি শুরু হওয়ার পর তাঁর পানীয়তে কিছু একটা মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর শরীর খারাপ লাগছিল। রাত দুটো নাগাদ বেরিয়ে আসেন তিনি। কেউ তাঁর সঙ্গে আসেনি, বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেনি। কিন্তু তাঁর মনে হচ্ছিল, এখানে আর থাকা ঠিক হবে না, এখনই বাড়ি যেতে হবে। তাঁর বাড়ি ছিল অনেকটা দূরে কিন্তু তিনি হেঁটেই যাচ্ছিলেন। তখন একজন গাড়ি নিয়ে তাঁর কাছে আসেন, বলেন, উঠে পড়তে, তিনি বাড়ি পৌঁছে দেবেন। বিশ্বাস করে গাড়িতে ওঠেন তিনি। তারপর বেহুঁশ হয়ে যান।

শুধু মনে ছিল, তাঁর মুখে মদ ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল, অত্যাচার করা হচ্ছিল তাঁর ওপর। পরের দিন দুপুরে হুঁশ ফিরলে তিনি দেখেন, শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। শুধু ধর্ষণ নয়, তাঁরই বাড়িতে তাঁর ওপর মারাত্মক শারীরিক অত্যাচার চলেছে। নিজের বিছানা থেকে ওঠার সাধ্য ছিল না তাঁর। এ ব্যাপারে বন্ধুদের বলেন তিনি, সবাই পরামর্শ দেয় ভুলে যেতে। এক চ্যানেলে পরিচালকের কাজ পান তিনি। কিন্তু ওই ব্যক্তি সেখানেও পৌঁছে যান। তখন কাজ ছেড়ে দেন তিনি, কারণ অভিযুক্তের কাছাকাছি তিনি কোনওমতেই থাকতে চাইছিলেন না।

ওই ঘটনার পর মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে যায়। নতুন করে কাজ  করতে চাইতেন কিন্তু চ্যানেল আর সেট দেখে ঘাবড়ে যেতেন। মিটিংয়ের মধ্যে মাঝে মাঝেই কেঁদে ফেলতেন। ১৯ বছর পর এখন তিনি পুরোপুরি সেরে উঠেছেন। সবথেকে বড় বিড়ম্বনা হল, ওই ব্যক্তি ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে সংস্কারী অভিনেতা হিসেবে পরিচিত।

মুখ খোলার জন্য ১৯ বছর অপেক্ষা করেছেন তিনি। এখন সুযোগ এসেছে। বিনতার সবাইকে আর্জি, আপনারাও মুখ খুলুন।

দেখুন তাঁর ফেসবুক পোস্ট