কলকাতা :  আজ থেকে এক সত্তর বছর আগে এক পরিচালক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি ঘুঁটে দিতে পার? বাসন মাজতে, ঝাঁট দিতে ? হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। পরিচালকের নাম মৃণাল সেন। ছবির নাম বাইশে শ্রাবণ। অভিনেত্রীর নাম মাধবী মুখোপাধ্যায়। আর তারপরেরটা তো ইতিহাস। ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতেই তিনি হলেন মাধুরী থেকে মাধবী।


সে সময়কার কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন, 'বাইশে শ্রাবণের সময়কার কথা মনে পড়ে। আমি তো স্টেজ থেকে এসেছি। একটা জায়গায় ছিল আমার চরিত্রটি পুরনো বাড়িতে এসে দেখছে। যখন মনিটর হল আমি ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম। শট নেওয়ার সময় বাঁ পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম। মৃণাল বাবু চটে গেলেন। তখন ডান পা ও বাঁ পায়ে ভরের পার্থক্যটা বুঝতাম না। পরে বুঝেছি।'


বাঙালিদের মধ্যে এঁরা শুধু সেরা নয়, এঁরা বিশ্ববরেণ্য। সৌভাগ্যক্রমে তাঁরা বাঙালিও। সেরা বাঙালির মঞ্চ বেছে নেয় এমন মানুষদেরই। যাঁদের কাজ, যাঁদের জীবন, হয়ে উঠেছে অন্যের অনুপ্রেরণা। তেমনই মাধবী মুখোপাধ্যায়। এবার লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মানে ভূষিত। 



তিনি তপন সিনহা ও প্রেমেন্দ্র মিত্রর নির্দেশনায় কাজ করেছেন । তাঁর ভ্রুর বাঁকে ধরা পড়েছে অসংখ্য হৃদয় আর দূরবীনে ধরা পড়েছে বাংলা সিনেমার বিরাট ক্যানভাস।  তিনি চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি মাধবী মুখোপাধ্যায়।  ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘শঙ্খবেলা’ হিটের পর হিট তাঁর ঝুলিতে।  শ্রেষ্ঠ তিন পরিচালক সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং মৃণাল সেনের ছবির তিনি নায়িকা। 


চরিত্র থেকে চরিত্রে বদলে নিয়েছেন নিজেকে। সর্বহারা মেয়ের যন্ত্রণা  থেকে মধ্যবিত্ত গৃহবধূর আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াই, নানা চরিত্রে তিনি অনবদ্য। যদিও জীবনের এই প্রতিটি ইস্টিশনই তাঁর বড় প্রিয়। মনে করেন একঘেয়েমি নয় বৈচিত্রই জীবনের মূল মন্ত্র। তাঁর কথায় যখন বাইশে শ্রাবণ করি তখন মালতীকেই আমার ভাল লাগে, যখন সুবর্ণরেখা করি তখন সীতাকেই ভাল লাগে। যখন চারুলতা করি তখন চারুলতাই ভাল লাগে।'


 ‘চারুলতা’ হিসেবে তিনি আজও বহু মানুষের হৃদস্পন্দন। তাঁর কথায় 'সে সময়টা তো অন্য রকম ছিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল গুরু শিষ্যার মতো। তারপর একদিন অমল আসে, ঝড়ের মতো উড়িয়ে নিয়ে যায় ...প্রতিটি মেয়েরই সবকিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছে ভালবাসা।'


স্বয়ং উত্তম কুমার যাঁকে ম্যাডাম বলে ডাকতেন , তিনি এখন অভিনয় করছেন টিভি ধারাবাহিকেও। প্রবীণ অভিনেত্রী মনে করেন, পরিবর্তন তো হবেই, কিন্তু ওরা আমায় মায়ের মতো ভালবাসে যে!
 
তাঁর জীবন যেন রূপকথার মতো। যাতে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না আছে, উত্থান আছে, পতনও আছে। সেই রূপকথার কেন্দ্রে আছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়।