কলকাতা: বলিউড সূত্রে খবর, ২০২১-এর ১ জানুয়ারি ‘পাঠান’-এর ফার্স্টলুকটি উপহার পাবেন শাহরুখ অনুরাগীরা। ‘পাঠান’-এর মূল কাহিনির আভাস যাতে প্রকাশ্যে না আসে সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে। শাহরুখের অধ্যাবসায়, অক্লান্ত পরিশ্রম আর ব্যক্তিত্বের ক্যারিশ্মাতেই মানুষ শাহরুখকে ছাপিয়ে তাঁর পৈতৃক ‘পাঠান’ পরিচয়ের সঙ্গে এই ছবির সংযোগ খোঁজার ন্যূনতম কল্পনাও কারও মাথায় আসেনা। আফগানিস্তানে তালিবানি ছায়া বিস্তারের আগে ছোটদের অবসর যাপনের সঙ্গী ছিলেন শাহরুখই। বাড়ির উঠোনে শাহরুখকে অনুকরণ করেই নাচের ছন্দে পা মেলাত খুদেরা। ভারতীয় অভিনেতার পরিচয়েই এভাবে বিশ্বজনীন হয়ে ওঠেন শাহরুখ খান।
চোখে দেখা এমন কিছু অভিজ্ঞতার কাহিনিই শোনানো যাক।
সালটা ২০১১। টরোন্টো রজার সেন্টারে সবার গলায় একটাই নাম প্রতিধ্বনিত হচ্ছে - শাহরুখ...শাহরুখ...। আইফা অ্যাওয়ার্ড সন্ধ্যা ছিল সেটি। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে সৌরভের আর মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে সচিনের নাম যে ভাবে ধ্বনিত হতো, নায়েগ্রা পাড়ে বাণিজ্য নগরীর অডিটোরিয়ামে সেই চেনা উত্তেজনা, উন্মাদনা। রজার সেন্টারের মূল গেটের বাইরে তখন এন্ট্রি-পাসের কার্যত কালোবাজারি চলছে। অনেক বেশি দামে বিকোচ্ছিল এন্ট্রি-পাস। স্থানীয়রাই বিক্রি করছিল, আর কিনছিলও স্থানীয়রাই।
ঘটনাটা ঘটেছিল অ্যাওয়ার্ড সন্ধ্যার আগের দিন। শাহরুখকে সংবর্ধনা দিচ্ছিলেন টরোন্টোর মেয়র। অনুষ্ঠান শেষে অডিটোরিয়ামের বাইরে দেখা গেল এক কিশোরী একা দাঁড়িয়ে কেঁদেই চলেছে। বাঁ হাত দিয়ে চেপে রেখেছে তার ডান হাতের তালু। হঠাৎ দেখলে মনে হবে কোনওভাবে হাতে ব্যথা পেয়েছে। তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল এই কান্না বেদনার নয়, আবেগের। অভ্যর্থনা সভায় যাওয়ার সময় শাহরুখের হাত ছুঁয়ে গিয়েছিল তার ডান হাত। শাহরুখের সহজাত করমর্দন ওই সোনালি চুলের কিশোরীর জীবনে পরম প্রাপ্তি।
টরোন্টো এয়ারপোর্টের মূল এক্সিট গেট। শাহরুখকে শুধু একঝলক দেখার জন্য ২১ ঘন্টা ধরে সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছিল আরও এক কিশোরী। এয়ারপোর্টে নেমে শাহরুখ বেরিয়ে এসে তাঁর অনুরাগীদের ভিড়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়তে নাড়তে গাড়িতে ওঠেন। কিশোরী চোখের সামনে তার স্বপ্নের নায়ককে দেখে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। অ্যাম্বুল্যান্স আসে, পুলিশ দ্রুত তাকে নিয়ে ছোটে হাসপাতালে।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে এমন এক-আধটা নয়, বহু ঘটনার সূত্রে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয় যে ভৌগলিক সীমানার গণ্ডিতে শাহরুখকে বাঁধা সম্ভব নয়।
হলিউড বুলেভার্ডের মেমেন্টো শপের অশীতিপর মালকিন জড়িয়ে ধরেন এক তরুণীকে তার ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয় পাওয়ার পর। মুহূর্তে এক হয়ে যায় মুম্বইয়ের চৌপাটি আর ক্যালিফোর্নিয়ার ফুটপাথ।
এর ঠিক দু’দিন বাদে রোদ ঝলমল বিকেলে সানফ্রান্সিকোয় কেবল-কার। বৃদ্ধ চালক তাঁর এক সওয়ারিকে জিজ্ঞেস করেন দেশের পরিচয়। ভারতীয় শোনার পরেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলে ওঠেন - ‘ওহ্! দ্য ল্যান্ড অফ অশোকা’। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের সূত্র ধরে এক বিংশ শতাব্দীর ভারতের প্রসঙ্গ উত্থাপনে যাত্রী যখন যারপরনাই বিস্মিত, তখন খুব স্বাভাবিক ছন্দে বৃদ্ধ জানিয়ে দিলেন তাঁর যোগসূত্রের উৎস। শাহরুখ খানকে রূপোলি পর্দায় তিনি দেখেছেন অশোকের চরিত্রে। শাহরুখই তাঁকে চিনিয়ে দিয়েছেন অশোকের ভারতকে। সেই জন্য তাঁর কাছে ভারত হল অশোকের ভূমি।
ইস্তানবুলের আইসক্রিম বিক্রেতাই হোক বা নীল নদের ধারে ফ্রিজ-ম্যাগনেট বিক্রেতা বা দুবাইয়ের মরুভূমিতে উট-খামারের মালিক, শাহরুখকে নিয়ে সবার প্রতিক্রিয়ায় একই উষ্ণতা, একই উত্তেজনা। পলকে তাঁরা ভারতীয় পর্যটকের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান শাহরুখের সূত্রে। সাহারা মরুভূমির একলা কফির দোকানের স্থানীয় কিশোর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতালিয় বংশোদ্ভূত ফিটনেস ট্রেনারের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকের মধ্যে শাহরুখ সেতু তৈরি করে দেন মুহূর্তে। আঙ্কোরভাটের মন্দিরের কলেজ পড়ুয়া গাইড থেকে শুরু করে মাসাইমারার জঙ্গল বিশেষজ্ঞ, ক্যাপেডোশিয়ার বেলুন-পাইলট থেকে শুরু করে অ্যাডিস আবাবার বিমান সেবিকা - ভাষা না জেনেও সকলে শাহরুখের সংলাপ বলে চলেন নাগাড়ে।
সিঙ্গাপুরের রেসকোর্সের দুর্গামণ্ডপে যাওয়ার পথেই হোক বা কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টাওয়ারের রাস্তায় ট্যাক্সি চালকের মাতৃত্বর সাক্ষী হতে হতে যাত্রী বুঝতে পারে ভিডিও কলে বাড়িতে থাকা সন্তানদের পড়তে বসা নিয়ে বকুনি চলছে পুরোদমে ঠিক বাঙালি মায়েদের মতোই। ভারতীয় পরিচয় পাওয়া মাত্রই তাঁদের সঙ্গেও ভৌগলিক ব্যবধান, ভাষার পার্থক্য নিমেষে উধাও, যোগসূত্র শাহরুখ খান।
২ বছর ধরে শাহরুখের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। বারে বারে গুঞ্জন উঠেছে, গুজবই ছড়িয়েছে শুধু। সুখে-দুঃসময়ে, অভিমানে-আনন্দে, বিধ্বস্ততায়-বিশ্বস্ততায়, দেশ-কাল-সীমানা পেরিয়ে শাহরুখ খানের মধ্যে খণ্ড থেকে পূর্ণতা খুঁজে পায় মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে অতিমারি পেরিয়ে যাওয়ার আশা নিয়েই নতুন বছরে জীবন জাগে ‘পাঠন’-এর হাত ধরে, শাহরুখের হাত ধরে। আড়াই দশক ধরে ভারতীয় সংস্কৃতির বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব উদযাপনের মুখ হয়ে ওঠেন শাহরুখ খান। সেই উদযাপন আজও চলছে।
অতিমারির মধ্যে আনন্দ উৎযাপনে নিজস্ব রূপে পাঠান আসার সম্ভাবনা ২০২১ এর প্রথম দিনে
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
12 Dec 2020 01:01 PM (IST)
২ বছর ধরে শাহরুখের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। বারে বারে গুঞ্জন উঠেছে, গুজবই ছড়িয়েছে শুধু। সুখে-দুঃসময়ে, অভিমানে-আনন্দে, বিধ্বস্ততায়-বিশ্বস্ততায়, দেশ-কাল-সীমানা পেরিয়ে শাহরুখ খানের মধ্যে খণ্ড থেকে পূর্ণতা খুঁজে পায় মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে অতিমারি পেরিয়ে যাওয়ার আশা নিয়েই নতুন বছরে জীবন জাগে ‘পাঠন’-এর হাত ধরে, শাহরুখের হাত ধরে।
NEXT
PREV
বিনোদন (entertainment) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -