কলকাতা: শেষবার দেখার সুযোগ দিলেন না কাউকে। সবার অলক্ষ্যে জীবনের মঞ্চ থেকে চিরবিদায় নিলেন শাঁওলি মিত্র (Shaoli Mitra)। যখন সবাই তাঁর মৃত্যুর খবর পেল, তখন তাঁর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এমনটাই তো চেয়েছিলেন তিনি। আইনি কাগজের ইচ্ছাপত্রে লিখে গিয়েছিলেন, 'আমার একান্ত ইচ্ছা আমার পিতাকে অনুসরণ করেই, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব আমার সৎকার সম্পন্ন করা হয়। এই শরীরটিকে প্রদর্শন করায় আমার নিতান্ত সংকোচ।' সেই ইচ্ছাকে সম্মান দিয়েই সিরিটি শ্মশানে সবার অগোচরে শেষকৃত্য হল তাঁর। নাটকের মঞ্চের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মৃত্যুতে শোকাহত বিনোদন জগত। নাট্যব্যক্তিত্বের স্মৃতি হাতড়ালেন আরেক নাট্যব্যক্তিত্ব, দেবশঙ্কর হালদার (Debshankar Haldar)।


এবিপি আনন্দকে দেবশঙ্কর হালদার বলছেন, 'খুব কাছের থেকে শাঁওলি মিত্রকে দেখলেও একটা অন্যরকম সম্মানের দূরত্ব ছিল আমাদের মধ্যে। অথচ সেই দূরত্বটা উনি বুঝিয়ে দিতেন অভিনয় দিয়ে। যখন অভিনয় জগতে আসব বলে সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের শিক্ষার অংশ ছিল শাঁওলি মিত্রের অভিনয় দেখা। উনি যখন অভিনয় করতেন আমরা হাঁ হয়ে দেখতাম আর শিখতাম অভিনয় কাকে বলে বা কোন পথে অভিনয় যেতে পারে। অভিনয় কোথায় কোথায় আমাদের স্পর্ধিত করে, শিখিয়ে দেয় কী কী করার আছে সেটা শাঁওলি মিত্রের অভিনয় দেখেই শেখা। শাঁওলি মিত্র আমাদের কখনও হাতে ধরে অভিনয়ের ক্লাস করাননি কিন্তু অভিনয় দিয়ে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন একের পর এক পাঠ।'


আরও পড়ুন: 'ফুলভারে' আপত্তি, ইচ্ছাপত্রে সকলের অগোচরে শেষকৃত্য


নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “শাঁওলি সাম্প্রতিক কালে অভিনয় করেননি। একরকম  স্বেচ্ছা নির্বাসনেই ছিলেন। একজন মানুষ রয়েছেন এটাই ভাল কথা। আবার কাজ করব এরকমটাই আশা থাকে। ওঁর মধ্যে শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের ক্ষমতা সন্নিহিত ছিল। আমার পারিবারিক ক্ষতি।’’ নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। সকাল থেকেই শরীর খারাপ ছিল। দুপুর ৩টে ৪০ নাগাদ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। প্রচারের আলোয় না থেকে শেষ কাজ যেন সম্পন্ন হয়, সেটাই তাঁর ইচ্ছা ছিল। সেটা করার চেষ্টা করেছি। একটা যুগের অবসান। আমরা অভিভাবককে হারালাম।’’