মুম্বই: ৪ অগাস্ট। আপামর ভারতবাসীর প্রিয় কিশোর দার জন্মবার্ষিকী (Kishore Kumar Birth Anniversary)। সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র কিশোর কুমার ওরফে আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায় (Abhas Kumar Ganguly)।
কিংবদন্তী এই সঙ্গীতশিল্পী জন্মগ্রহণ করেন ৪ অগাস্ট, ১৯২৯ সালে, মধ্যপ্রদেশের খণ্ডওয়ায়। বাঙালি বাড়িতে জন্ম। কর্মজীবন শুরু করে দাদা অশোক কুমারের মতোই অভিনেতা হিসেবে। ১৯৪৬ সালে তাঁর প্রথম ছবি 'শিকারি' মুক্তি পায়। শুরু করলেও বিশেষ মন মজেনি অভিনয়ে। এরপরেও কিছু ছবিতে কাজ করলেও ১৯৪৮ সালে 'জিদ্দি' ছবির হাত ধরে প্রথম সঙ্গীত জগতের পথচলা শুরু। এরপর ধীরে ধীরে গায়ক (Singer), গীতিকার (Lyricist), সঙ্গীত পরিচালক (Music Director) হিসেবেই কেরিয়ারে এগিয়ে চলেন তিনি। গান তৈরি করেছেন ও গেয়েছেন হিন্দি, বাংলা, তামিল প্রভৃতি ভাষায়। এছাড়াও একাধিক আঞ্চলিক ভাষা তিনি শিখেছিলেন যেমন মরাঠি, গুজরাতি, অসমীয়া, মালয়লম, ওড়িয়া ও কন্নড়। শিল্পীর ৯৩তম জন্মদিনে, রইল কিছু মজার ও আকর্ষণীয় তথ্য তাঁর সম্পর্কে।
কিশোর কুমার সম্পর্রে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য
কিশোর কুমার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রাজেশ খন্নার জন্য। তাছাড়াও তিনি জিতেন্দ্র, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চনের মতো তাবড় তারকাদের কণ্ঠেও গান গেয়েছেন।
কিশোর কুমারের প্রতিভার কথা বলতে শুরু করলে শেষ করা যাবে না। তারই মধ্যে অন্যতম, তিনি পুরুষ এবং নারী, উভয় কণ্ঠেই অত্যন্ত সাবলীলভাবে গান গাইতে পারেন। তাঁকে প্রথম মহিলা কণ্ঠে গাইতে শোনা যায় 'আকে সিধি লগি দিল পে...' গানে।
জানেন কি, দীর্ঘ একটা সময় কিশোর কুমারকে জাতীয় স্তরের ব্রডকাস্টার যেমন 'অল ইন্ডিয়া রেডিও' ও 'দূরদর্শন' থেকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়! কারণ তিনি মুম্বইয়ে 'ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস'-এর মিছিলে গান গাইতে অস্বীকার করেছিলেন।
কিশোর কুমারের অনুরাগীর সংখ্যা তো আজও অগুন্তি। আর তিনি কাদের 'ফ্যান' ছিলেন? হলিউড অভিনেতা ও গায়ক ড্যানি কে-র ভক্ত ছিলেন তিনি। কিশোর কুমার নিজের বাড়িতে প্রিয় তারকার পোস্টারও ঝুলিয়ে রাখতেন।
কিশোর কুমারের দাদা অশোক কুমার চেয়েছিলেন ভাইও তাঁর মতোই বড় অভিনেতা হয়ে উঠবে। কিন্তু অভিনয়ে কখনওই ভাইয়ের বিশেষ আগ্রহ ছিল না। তাই দাদার কথা বিশেষ কানেও তোলেননি কিশোর কুমার।
কিশোর কুমারের বিয়ে। এখনও অনেক অনুরাগীর মনেই এই বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়। কিশোর কুমার চার বার বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায়ের বড় বোনের মেয়ে ছিলেন। ১৯৫০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। কিশোর কুমারের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন মধুবালা। ১৯৬০ সালে বিয়ে হয় তাঁদের। এই বিয়ের জন্য কিশোর কুমার ধর্মান্তরিত হন, নাম নেন করিম আব্দুল। ১৯৭৬ সালে তিনি বিয়ে করেন যোগিতা বালিকে। এবং ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন লীনা চন্দ্রভারকরকে। শোনা যায়, যোগিতা বালি তাঁকে ছেড়ে মিঠুন চক্রবর্তীকে বিয়ে করার পর থেকে নাকি কিশোর কুমার অভিনেতার জন্য গান গাওয়া বন্ধ করে দেন।
কিশোর কুমারের প্রতিভা ও সৃজনশীলতা অপরিসীম। তাঁর সঙ্গীত জীবনে তিনি ১৮টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। ১৯৭০ সালে 'রূপ তেরা মস্তানা' গানের জন্য প্রথম তিনি ফিল্মফেয়ার জেতেন। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় সৃষ্টি এই গানটি।
বাকি সকল সঙ্গীতশিল্পীর থেকে একেবারেই আলাদা ছিলেন কিশোর কুমার। তিনি নাকি বাড়ির বাইরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখতেন 'বিওয়্যার অফ কিশোর' অর্থাৎ 'কিশোর হইতে সাবধান'! একবার এক প্রযোজক-পরিচালক তাঁকে পাওনা টাকা দিতে যান। তখন কিশোর কুমার নাকি তাঁর হাত নিজের মুখে পুরে নেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, 'বাইরে বোর্ড দেখেননি'! কিশোর কুমারের এই আজব কায়দার জন্যই তিনি খ্যাত ছিলেন।
কিশোর কুমার একা থাকতে ভালবাসতেন। সেই কারণেই নাকি কোনওদিন তিনি খুব বেশ বন্ধু বানাননি। এছাড়াও নিজের হাতে বড় করা গাছপালার সঙ্গেও কথা বলতেন। একবার নাকি এক সাংবাদিকের সঙ্গে বাগানে নিয়ে গিয়ে তাঁর গাছেদের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দিয়েছিলেন।
কিশোর কুমারের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় গান 'পাঁচ রুপইয়া বারা আনা'। এই গানের উৎপত্তি খুব অনন্যভাবে। ইনদওর কলেজের হস্টেল ক্যান্টিনে কিশোর কুমারের ৫.৭৫ টাকার ধার ছিল, সেই থেকেই নাকি এই গানের চিন্তাটা মাথায় আসে।
তাঁর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তো তোলা সম্ভব নয়। এবং শোনা যায়, নিজের পাওনা নিয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। টাকাপয়সার গন্ডগোল হলে সেই ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের নানা মজার পন্থাও বের করতেন। একবার এক সিনেমায় কাজ করার সময়, অর্ধেক মুখে মেকআপ করে বেরিয়ে আসেন তিনি, কারণ ততক্ষণে তাঁর কানে চলে গেছে যে প্রযোজন তাঁর অর্ধেক পারিশ্রমিক দিয়েছেন। তাই পরিচালক যখন তাঁকে অর্ধেক মেকআপের কারণ জিজ্ঞেস করেন, তিনিও বলেন, 'অর্ধেক পয়সা তো অর্ধেক মেকআপ'।
কিংবদন্তি শিল্পী কিশোর কুমারের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা, প্রণাম।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন