কলকাতা: ৩০ বছর পার। সন্দীপ আর বিমলা আবার মুখোমুখি, ফ্লোরে। চোখে চোখ। এবার আর সন্দীপ, বিমলাকেকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে যেতে নয়। এবার তাদের দেখা বেলা শেষে। কিন্তু বিমলা এখনও ততটাই বিহ্বল। ‘আগের মতোই ওঁর মতো মহাতারকার দিকে তাকাতে মুগ্ধতাই আসে।’ বলছিলেন ‘ঘরে বাইরে’-র নায়িকা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যখন মহাশ্মশানের পথে, তাঁর সঙ্গে ‘বেলাশুরু’-র অপেক্ষায় স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। ‘বড় সাধ ছিল, একসঙ্গে বসে ‘বেলাশুরু’ দেখব, হল না। এটা ভাবনারই অতীত।’ বললেন স্বাতীলেখা। শ‍্যুটিং শেষ হয়েছে। কিন্তু ‘বেলাশুরু’ মুক্তি পাওয়ার আগেই তো তিনি পাড়ি দিলেন মুক্তির দেশে।

‘এখনও মনে পড়ছে, শুটিংয়ে কত গল্প হত। কত স্মৃতিচারণা। অত বড় স্টার, কিন্তু খেতেন বাইরের খাবারই, বাড়ি থেকে খাবার আনতেন না। বলতেন,  তুমি শুধু আমার খাবার সময়টা মনে করাবে। ওটা যেন মিস না হয়। খেতে বড্ড ভালবাসতেন।’ গলা কেঁপে আসছিল অভিনেত্রীর।

‘আমার সঙ্গে ওঁর প্রথম কাজ সবাই জানেন ঘরে-বাইরে। মানিকদার পরিচালনা। আমি তো নতুন। সঙ্গে ভিক্টর, সৌমিত্র। আমি ওঁ‌র কাজ, আত্মবিশ্বাস, ভঙ্গিমা হাঁ করে দেখতাম। যতদূর মনে পড়ে, বিমলা দরজার বাইরে পা রেখে দেখছে সন্দীপকে। সেটাই শ‍্যুট করা প্রথম দৃশ‍্য‍। তারপর প্রতিটা শট আরও-আরও সফল হয়েছে ওঁ‌র কোঅপারেশনে।’ স্মৃতি যেন ছবির মতো ভাসছে সত‍্যজিতের নায়িকার।

‘ঘরে বাইরে’-তে সেই সময় দাঁড়িয়ে সন্দীপ-বিমলার চুম্বন দৃশ্য ঝড় তুলেছিল দর্শক মহলে। সেই যুগে বাংলা ছবিতে চুম্বন জল-ভাত ছিল না।

‘কিন্তু জানো, আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। ৭-৮ বার টেক দিতে হয়েছিল। বারবার ওঁর শালে আমার হাত চাপা পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ওই দৃশ‍্যে শাঁখা পলা দেখানোটা খুব দরকার ছিল, অর্থাৎ এয়ো-স্ত্রী র চিহ্ন। সৌমিত্রবাবু এত সহজ করে দিলেন বিষয়টি, নবাগতা আমি কত সহজেই করে ফেললাম বিষয়টি। এখনও মনে পড়ে।’ স্মৃতিতে ডুবে গেলেন তিনি।

‘আমার শরীরটা এখন মাঝেমধ্যে খারাপ হয়‌ হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছে। কিন্তু সৌমিত্রবাবু সেই ক্ষিদ্দা স্টাইলে বলতেন, হারলে হবে না স্বাতীলেখা। মনটা শক্ত রাখতে হবে। কাজ করতে হবে। সৌমিত্রবাবুই আসল ক্ষিদ্দা,’ স্মৃতিচারণায় নায়িকা।