কলকাতা: সেটে তখন উপস্থিত ছিলেন সন্দীপ রায় (Sandip Roy), সব্যসাচী চক্রবর্তী (Sabyasachi Chakraborty), আর.. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)। পরিকল্পনা করা হয়েছিল, গল্পে.. আড্ডায় জানা যাবে অজানা নায়ককে, আর সেই গল্পই হবে ক্যামেরাবন্দি। সেদিনের শ্যুটিংয়ে অভিনেতা যেন একটু বেশিই ঝলমলে, বেশিই প্রাণোচ্ছ্বল ছিলেন, ঠিক যেন বছর কুড়ির যুবক। শ্যুট শেষে সেদিন যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তিনি.. কেউ ভাবতে পারেননি, এটাই তাঁর জীবনের শেষ শট! আজ তাঁর জন্মদিনে সেই স্মৃতি ফিরে দেখলেন পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় (Shayantan Mukherjee)। 


নন্দনে মুক্তি পেয়েছে 'আমি সৌমিত্র' (Ami Soumitra)। এটি মূলত একটি তথ্যচিত্র। সায়ন্তন বলছেন, 'সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শুধু একজন অভিনেতা নন। উনি একজন থিয়েটার শিল্পী, অসাধারণ লেখক, কবি ও চিত্রশিল্পী। উনি ভ্যান গগের ভক্ত ছিলেন, মুখ আঁকতে ভালবাসতেন। ওঁর লেখা কবিতার সমগ্র রয়েছে। আমার সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে প্রথম আলাপ ২০১৩ সালে। আমার প্রথম ছবি করতে গিয়ে। সেই সময়েই ভেবেছিলাম, নায়ক সৌমিত্রকে সবাই না চেনেন, কিন্তু তাঁর বাইরেও সৌমিত্রবাবুর অসম্ভব ব্যাপ্তি। সেটাকেই ফ্রেমবন্দি করতে চেয়েছিলাম। ওঁর কন্যা পৌলমীদির সঙ্গেও কথা বলি। কিন্তু রাজি হননি খোদ সৌমিত্রবাবুই। সেইসময় ওঁকে জোর করতে চাইনি। কিন্তু ২০১৯ সালে সৌমিত্রবাবু নিজেই রাজি হলেন ছবিটা করার জন্য। হয়তো উনি ভেবেছিলেন কিছু কথা পরের প্রজন্মকে বলে যাওয়া উচিত। কিন্তু তখনও আমরা ভাবতে পারিনি এটাই ওঁর শেষ কাজ হয়ে থেকে যাবে।'


শেষ শট 'আমি সৌমিত্র'-তেই? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়ন্তন বললেন, 'আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম, সৌমিত্রবাবু বসে গল্প করবেন বাবুদা, বেণুদার সঙ্গে। আর সেই গল্পেই উঠে আসবে ওঁর অজানা দিকগুলি। এই দৃশ্যটা যেদিন শ্যুট হল, সেইদিন যেন একটু বেশিই ঝলমলে ছিলেন সৌমিত্রবাবু। কত কথা বলেছিলেন, আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছিলাম। উনি যখন বেরিয়ে চলে যাচ্ছেন, তখনও ভাবতে পারিনি এটা ওঁর শেষ কাজ হবে।'


আরও পড়ুন: Tunisha Sharma Death: তুনিশা শর্মার সঙ্গে শ্যুটিংয়ের স্মৃতিচারণা সায়ন্তনীর


ছবির শ্যুটিং শেষ করতে পারেননি সৌমিত্র। সায়ন্তন বলছেন, 'একটা দৃশ্য শ্যুটিংয়ের পরিকল্পনা ছিল ওঁর গোটা পরিবারকে নিয়ে। গঙ্গার ধারে গিয়ে একটা শ্যুটিং পরিকল্পনা করার দৃশ্য ছিল। সেটা শ্যুটিং করা হল না। তবে এখন মনে হয়, হয়তো কিছু অপূর্ণতাই সম্পূর্ণতা দেয় জীবনকে। এই ছবিও তেমন। শেষ দৃশ্য হল না... আমাদের ক্যামেরায় ধরা রইল সৌমিত্রবাবুর শেষযাত্রার ছবি। আমার জীবদ্দশায় এত বড় শেষযাত্রা কখনও দেখিনি।'


নন্দনে জনসাধারণের জন্য রয়েছে এই ছবি। জন্মদিনে সেখানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছিল।