পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: ভাবনার কোনও অবকাশ নেই। মানবীয় কোমলতা থেকে জন্ম নেওয়া দ্বিধার অবকাশ নেই। ইস্পাত কঠিন স্নায়ুতে ট্রিগারে আঙুলের চাপে প্রতিপক্ষের মৃত্যু নিশ্চিত করাই স্নাইপারদের এক ও একমাত্র কর্তব্য। একজন স্নাইপার জীবনে একবারই দ্বিধাগ্রস্ত হয়। ওই একবারই। আর নয়। জি ফাইভে মুক্তি পাওয়া অরিজিনাল ফিল্ম ‘স্টেট অফ সিজ-টেম্পল অ্যাটাক’ এই সারসত্যটুকু বুঝিয়ে দেয়।


এনএসজি, মানে ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ডের লড়াকুরা প্রতিটি মিশনে জীবন বিপন্ন করে কী ভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ায়, সেই কাহিনিই ধরা পড়েছে এই ছবিতে। অক্ষয় খন্না ছবিটির মুখ্য চরিত্রে। কাশ্মীরের বরফাবৃত উপত্যকা থেকে পরিচালক এই ছবির কাহিনিকে টেনে এনেছেন গুজরাতের প্রেক্ষাপটে। কঠিন এক মিশনের সাফল্য নিশ্চিত করতে এনএসজি কম্যান্ডোদের শিরায় শিরায় যে উত্তেজনা বইতে থাকে, সেই উত্তেজনাই দর্শকদের মধ্যেও ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।


বাড়তি কোনও প্রসঙ্গ উত্থাপন নয়। একদম পাখির চোখের মত নির্দিষ্ট ঘটনাকেন্দ্রিক চিত্রনাট্য। হাতে গুনে বলা যায় কম্যান্ডোদের শক্ত চোয়ালে গুলির লড়াইয়ের মাঝে কতবার একটু হাসির আভাস দেখা গিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে জঙ্গিদের নাশকতার এক বিরাট চক্রান্তকে ঘিরে এই ছবি। গুজরাতের এক মন্দিরের ভেতরে সাধারণ মানুষকে বন্দি বানিয়ে সরকারকে চাপ দিয়ে জঙ্গি নেতার মুক্তি নিশ্চিত করাই ছিল জঙ্গিদের লক্ষ্য। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই মন্দিরে ঢুকে পড়ে এনএসজি কম্যান্ডোরা। তারপর ধৈর্য, বুদ্ধি, আর ক্ষিপ্রতার লড়াই।


ছবিতে অ্যাকশন দৃশ্যের ধারাবাহিকতায় অক্ষয় খন্নার যে খুব গভীর অভিনয়ের সুযোগ রয়েছে, তা বলা যায় না। অভিনেতাদের ছাপিয়েও কাহিনির অনিশ্চিত প্রতিটি মুহূর্তকে একটি চেহারা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যেন। ওয়েব সিরিজ ‘পঞ্চায়েত’-এ বিকাশের ভূমিকায় যিনি অভিনয় করেছিলেন, সেই চন্দন রায় এই ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে নজর কেড়েছেন। তবে এই ছবির কাহিনি আরও গভীরে যেতে পারত। বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গায় ঘটনাপ্রবাহের উপর দিয়ে সাঁতরে যাওয়া কাহিনি ডুব সাঁতার দিলে তা হয়তো আরও চিত্তাকর্ষক হত। নির্মাতারা হিরোইজমের উপরে গুরুত্ব দেননি ঠিকই, কিন্তু ফিকশনাল এলিমেন্টের অনাবশ্যক প্রয়োগ কোথাও কোথাও একটু ভারী করেছে ছবিটির আবহ। তবে যেভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে মিশনের মাঝে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে লড়তে এগিয়ে গিয়েছে অক্ষয় খন্নার চরিত্রটি, তা সামরিক নিয়মানুবর্তিতার পরিপন্থী এবং বাস্তব বিচ্যূত।


ছবিটি দেখতে দেখতে উর্দিধারীদের নিয়ে তৈরি নানা ছবি আর সিরিজের কথা মনে পড়বে ঠিকই, কিন্তু একথা বলতেই হয়, ‘স্টেট অফ সিজ-টেম্পল অ্যাটাক’ ধারাবাহিক ভাবে মৌলিকত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। মেজর হানৌত সিংয়ের চরিত্রে অক্ষয় খন্নার পাশাপাশি বিবেক দহিয়া, গৌতম রোডেও নিজেদের চরিত্রে মানানসই। উল্টোদিকে আবু হামজার চরিত্রে অভিমন্যু সিং, বিলাল নাইকোর চরিত্রে মীর সারওয়ারও নজর কেড়েছেন।


সময়ের হিসেবে এই কমব্যাট ড্রামার দৈর্ঘ্য ১১২ মিনিট। তেজন প্রমোদ শেঠীর সিনেম্যাটোগ্রাফি প্রশংসার দাবি রাখে। তবে মন্দার বর্মা আর রিঙ্কু বচ্চনের অ্যাকশন-কোরিওগ্রাফিতে আরও নতুনত্বের প্রত্যাশা রয়েই যায়। ছবিটির শেষে কাহিনির নতুন এক অধ্যায়ের আগাম ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন পরিচালক কেন ঘোষ। বন্দুকে নতুন করে ম্যাগাজিন পুরে নিজের টিম নিয়ে  নতুন মিশনের মুখোমুখি মেজর হানৌত সিং। এই ছবিটি দেখার পর দর্শকেরা অপেক্ষায় থাকবেন, পরবর্তী কাহিনির।