কলকাতা: লকডাউন শেষ। চলছে আনলকপর্ব। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে মাস্ক, স্যানিটাইজারকে সঙ্গী করেই নিউ নর্মালে অভ্যস্থ হয়ে উঠছে মানুষ। দর্শক শূন্য হলেও বিদেশের মাঠে শুরু হয়েছে আইপিএল। কলকাতায় চালু হয়েছে মেট্রো রেল। এবার স্বাভাবিকত্বের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল রাজ্য। সোমবার থেকে খুলে গেল রাজ্যের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ। হল খোলার নির্দেশিকা শুনেই ছবি মুক্তির কথা ঘোষণা করেছিলেন পরিচালক, প্রযোজকরা। এবার পুজোয় আসতে চলেছে একঝাঁক নতুন বাংলা ছবি। অনেক পরিচালক আবার পিছিয়ে দিয়েছেন ছবি মুক্তির দিনও। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে পুজোর সময় চেনা ভিড় দেখতে পাবে তো রুপোলি পর্দা? ছবি নিয়ে কী প্রত্যাশা রয়েছে টলিউডের? খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ।


ছাপোষা এক স্কুলশিক্ষক হয়ে উঠছে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার! বেশ ভয় ধরাচ্ছে মিমি চক্রবর্তী ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যের নতুন ছবি ‘ড্রাকুলা স্যার’-এর ট্রেলার। প্রেক্ষাগৃহ খোলার ঘোষণা হবার পরেই প্রথম এই ছবি মুক্তির কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। লকডাউনের আগে থেকেই বহু প্রতীক্ষিত ছিল ‘ড্রাকুলা স্যার’। কী প্রত্যাশা রয়েছে নতুন ছবিকে ঘিরে? এসভিএফ সংস্থার ডিরেক্টর ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র সোনি বলছেন, ‘সমস্ত সাবধানতা মেনেই নিউ নর্মাল পরিস্থিতিতে সবাই আবার বড় পর্দায় ছবি দেখার স্বাদ নেবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এখন যে কোনও ছবিই দর্শককে হলমুখী করবে। কারণ মানুষ তাঁদের প্রিয় চরিত্রদের বড়পর্দায় দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। এবার পুজোয় এসভিএফ থেকে মুক্তি পাচ্ছে ড্রাকুলা স্যার। রুপোলি পর্দায় অনির্বাণ-মিমির অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করবেই।’ ছবির মঞ্জরী অর্থাৎ মিমি চক্রবর্তীও ড্রাকুলা স্যারের মুক্তি নিয়ে উৎসাহী। এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ‘ড্রাকুলা স্যার বড় পর্দাতেই দেখার ছবি। ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রির যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, সবার থেকেই খুব পজিটিভ রিভিউ পেয়েছি। লকডাউনের সময় অনেক ছবি ওটিটিতে মুক্তি পেলেও ‘ড্রাকুলা স্যার’ যাতে বড় পর্দায় মুক্তি পায় সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন ছিলেন পরিচালক-প্রযোজক। তাই আমরা অপেক্ষা করেছি।’


 


একটি নয়, এবার পুজোয় একসঙ্গে ২টি ছবি নিয়ে আসছে সুরিন্দর ফিল্মস। ‘রক্তরহস্য’ ও ‘লাভ স্টোরি’। মিতিন মাসির পর আবার একটি নারীকেন্দ্রীক ছবির মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন কোয়েল মল্লিক। আর সেটাই দর্শককে হলমুখী করবে বলে মনে করছেন সুরিন্দর ফিল্মের কর্ণধার নিসপাল সিং রানে। এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘আমরা ২টো ছবি নিয়েই খুব আশাবাদী। রক্তরহস্য-এর বিষয়বস্তু বেশ আকর্ষণীয়। আর এই ছবিতে কোয়েলকে অন্য ভূমিকায় দেখতে পাবেন দর্শকেরা। অন্যদিকে লাভ স্টোরিতে রয়েছে বনি সেনগুপ্ত ও ঋতিকা সেনের রসায়ন। পুজোয় কলেজ পড়ুয়াদের মনজয় করবে এই ছবি।’ দর্শকদের থেকে কী প্রত্যাশা রয়েছে? নিসপাল বলছেন, ‘এবার পুজোয় সবাই হলে আসবেন। প্রায় ৮ মাসের বিরতি ছিল। দর্শকও প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। আশা করব হল মালিকেরা সমস্তরকম সুরক্ষার ব্যবস্থা নেবেন।’



 


মাত্র ২ সপ্তাহ সিনেমাহলে চলেছিল ছবিটি। আর তাতেই সুপারহিট। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জেরে তারপর প্রায় ৮ মাস বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ। এই পুজোয় তাই ফিরছে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে ‘শর্বরী’ ওরফে ঋতাভরী চক্রবর্তী। তাঁর বিপরীতে কাজ করেছেন সোহম মজুমদার। ‘উইন্ডোজ’-এর প্রযোজনায় অরিত্র মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’-র ফের মুক্তি নিয়ে প্রথমবারের মতোই উৎসাহিত নায়িকা ঋতাভরী। মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘আমাদের ছবিটাকে ২ সপ্তাহতেই বক্স অফিস হিট ঘোষণা করা হয়েছিল। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ আবার মুক্তি পাচ্ছে শুনে আমি ভীষণ খুশি। লকডাউনে অনেকেই আমায় প্রশ্ন করেছিলেন ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ওটিটিতে মুক্তি পাবে না? আমি পরিচালক, প্রযোজককে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম। ওঁরাই আমায় জানিয়েছিলেন, সিনেমাহল খুললে ফের বড় পর্দায় আসবে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি।’ পুজোয় মুক্তি পাওয়া একগুচ্ছ ছবির মধ্যে ঋতাভরীর ছবির ইউএসপি কী? অভিনেত্রীর উত্তর, এই ছবির বিষয়বস্তু। ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে হয়, এখন নারীকেন্দ্রীক ছবির বড্ড প্রয়োজন। যদি কোনও ছবি একটু হলেও প্রশ্ন তুলতে পারে, সচেতনতা ছড়াতে পারে তাহলে সেটাই সাফল্য। আমাদের চোখের সামনে হাথরসকাণ্ডই তো রয়েছে। সেটা ছাড়া সামান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও এখন মেয়েদের বিনা কারণে কটুক্তির শিকার হতে হয়। সেই জায়গা থেকে এই ছবিটি ভীষণ সময়োপযোগী। আর ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটিই পুজোয় মুক্তি পাওয়া একমাত্র পারিবারিক ফিল্ম। পুজোর সময় সবাইকে নিয়েই তো আনন্দ করতে চায় মানুষ।’ ২১ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। কেবল অনুরাগী নয়, ঋতাভরীর নিজেও চান পুজোয় সিনেমাহলে গিয়ে আবার ছবিটি দেখতে।




মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে নতুন ২টি ছবি। ‘ধর্মযুদ্ধ’ ও ‘হাবজি গাবজি’। ছবির মুক্তির ঘোষণা করলেও পুজোর সময়কে বেছে নিচ্ছেন না পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। চলতি বছরের শেষের দিকে মুক্তি পাবে ‘হাবজি গাবজি’। রাজ বলছেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল ধর্মযুদ্ধ প্রথমে রিলিজ করার। কিন্তু পুজো খুশির উৎসব। ধর্মযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনীতি ও সামাজিক বার্তা। তাই ধর্মযুদ্ধ ২০২১-এর প্রথমদিকে মুক্তির কথা ভাবছি। দীর্ঘ এই লকডাউনটার পর ছোটরা আরও বেশি মোবাইল বা গেমস অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়েছে। সেই জায়গা থেকে ‘হাবজি গাবজি’ ভীষণ প্রাসঙ্গিক একটা ছবি।’ আর ক্রিসমাস সময় ছোটদের নিয়ে এই সাইকো থ্রিলার একেবারে অন্য স্বাদ দেবে বলেই মনে করছেন রাজ। তবে পুজোর সময়ও মানুষ ছবি দেখতে যাবে বলেই প্রত্যাশা পরিচালকের।



পুজোয় মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’-ও। পুজোর সময় কাকাবাবু মুক্তির সেই রীতি ভাঙছে এই প্রথমবার। শোনা যাচ্ছে, ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ বড় পর্দায় দেখার জন্য দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে ক্রিসমাস পর্যন্ত।


কী কী সুরক্ষা ব্যবস্থা নিচ্ছে শহরের মাল্টিপ্লেক্সগুলি? আইনক্সের রিজিওনাল ডিরেক্টর মিঃ অমিতাভ গুহ ঠাকুরতা বলছেন, ‘সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মানা হবে সমস্ত নিয়মবিধি। সমস্ত দর্শকদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে তবেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। মাস্ক ছাড়া হলে আসতে পারবেন না কেউ। প্রত্যেক প্রেক্ষাগৃহের বাইরে থাকবে পিপিই কিট, স্যানিটাইজার। ইচ্ছা হলে কিনে নিয়ে তা ব্যবহার করতে পারেন দর্শকরা। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে ৫০ শতাংশ দর্শকদের নিয়ে আপাতত চালু হবে শো। টিকিট থেকে খাবার অর্ডার, পেমেন্ট, সবটাই হবে মোবাইলের মাধ্যমে।’


মন্ডপে মন্ডপে শুরু বাঁশ বাঁধা। প্রতিমা রঙও প্রায় শেষের মুখে। আর প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহে শুরু নির্দেশিকা মেনে সুরক্ষার প্রস্তুতিও। নিউ নর্মালে প্যান্ডেল হপিং-এর পাশাপাশি চলবে সিনেমা দেখাও, আশা টলিউডের।