5G In India: দিল্লিতে ইন্ডিয়ান মোবাইল কংগ্রেস (IMC)-তে শুরু হয়েছে যুগ পরিবর্তনের পালা। ১ অক্টোবর  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে দেশে ৫জি যুগের সূচনা হয়েছে আগেই।  ৪জি থেকে ৫জি যুগে পদার্পণের পরে আরও দ্রুত ইন্টারনেটের গতি পাব আমরা।  পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ দেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যাক্ষেত্রে আরও সুবিধা। দেশে ৫জি আসার ফলে এইসব খাতে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।  


আগেই ২০২৪-২৫ সালের মধ্য়ে ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর এই ভাবনায় বড় ভূমিকা নেবে ৫জি প্রযুক্তি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০৩৫ সালের মধ্য়ে ৫জি ভারতের ১ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। এমনকী এই প্রযুক্তি আসার ফলে দেশে অতিরিক্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি পেতে পারে ভারত সরকার। ২০২৫-৪০ সালের মধ্য়ে ভারত ছুঁতে পারে এই আর্থিক মূল্যায়ন।


পরিসংখ্যান বলছে,চিনের পরে সারা বিশ্বে সবথেকে বড় টেলিযোগাযোগের বাজার রয়ছে ভারতে । দেশে ১১৭ কোটি টেলিকম সাবক্রাইবার রয়েছে। ৫জি কেবল দেশের ৯৮ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাজে আসবে না, পাশাপাশি দেশজুড়ে একটা যোগাযোগের পরিসর তৈর করবে এই নতুন প্রযুক্তি। স্মার্ট সিটিতে আরও দ্রুত যোগাযোগ ও বৈদ্যুতিক পরিষেবা সহজ করবে ৫জি।


5G কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলবে ?


5G-র বৃহত্তর প্রভাব আমাদের ব্যবহারকারীদের কীভাবে প্রভাবিত করবে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।


আমেরিকান নেটওয়ার্ক অপারেটর ভেরিজন বলছে, 5G 20Gbps পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফারের গতি দিতে সক্ষম। 4G-র 100Mbps বা 3G এর 2Mbps এর সর্বোচ্চ গতির সঙ্গে তুলনা করলে, আপনি নিজেই ৫জি-র সম্ভাবনাগুলি কল্পনা করতে পারবেন।চলতি বছরের শুরুতে পুনেতে Vodafone Idea-র 5G ট্রায়ালের সময়, 5.92Gbps-এর সর্বোচ্চ ডাউনলোড স্পিড দেখা গিয়েছিল। অন্যান্য ভারতীয় টেলিকম কোম্পানিগুলির মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এই কোম্পানির প্রযুক্তি সেই সময় নজরকাড়া ডাউনলোডের গতি দেখিয়েছিল।


কীভাবে এই গতি আমাদের সাহায্য করবে ? ৫জি থেকে যা প্রত্যাশিত :


> HD ফরম্যাটে 5G-তে তিন ঘণ্টার একটি সিনেমা ১-২ সেকেন্ডের মধ্যে ডাউনলোড করা যায়। বর্তমানে 4G-তে এই সিনেমা ডাউনলোডের ক্ষেত্রে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে৷


> ইউটিউব ভিডিও বা OTT প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিম করার সময় কোনও বাফারিং করবে এই নতুন প্রযুক্তি৷


> কল ড্রপ এখন অতীতের বিষয় হওয়া উচিত।


> ভিডিও কলগুলি আরও বেশি উপভোগ্য হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে এতে কম কল ল্যাগ হবে। পাশাপাশি ভিডিও কলের গুণমানও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


> ব্রডব্যান্ড গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেসেজ ও ডেটা অবিলম্বে স্থানান্তর হবে। অন্তত তেমনই আশা করা যায়।


> স্মার্ট ডিভাইস, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, বা স্মার্ট কারের সঙ্গে এই পরিষেবা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্ত করা যাবে।


> প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, জরুরি পরিষেবাগুলি আরও উন্নত সংযোগের সঙ্গে পাওয়া যাবে। জরুরি ট্র্যাকিং পরিষেবাগুলিও 5G গতি এলে আরও ভালভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।


এটি লক্ষ করা উচিত যে, আসল 5G গতি অ্যাক্সেস করতে আপনার একটি 5G ফোন প্রয়োজন। আজকাল আমরা যে বেশিরভাগ ফোন ব্যবহার করি, সেগুলি 5G রেডি নাও হতে পারে (বিশেষত যদি আপনি যে হ্যান্ডসেটটি ব্যবহার করেন তা দুই বছরের বেশি পুরনো হয়)। সুতরাং, আপনার ফোনে 5G কানেক্টিভিটি চেক করা ও একটি 5G সক্ষম ফোন নেওয়াই এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উত্তম কাজ। ভারতে ব্র্যান্ডগুলি আরও 5G স্মার্টফোন লঞ্চ করবে। শোনা যাচ্ছে, Jio একটি অতি-সাশ্রয়ী মূল্যের Jio Phone 5G লঞ্চ করতে পারে। ইন্ডিয়ান মোবাইল কংগ্রেস থেকেই জিওর সঙ্গে ঘুরপাক খাচ্ছে এই খবর।


যেসব সেক্টর 5G থেকে উপকৃত হবে


5G  আসার সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করবে এই সেক্টরগুলি। দ্রুত নজর দিন এই খাতগুলির দিকে।


উত্পাদন শিল্প: ৫জি আসার ফলে আরও 5G ফোন ও অন্যান্য 5G-রেডি ডিভাইসের প্রয়োজন হবে। যা উত্পাদন খাতের গতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে খুচরো খাতে। যেখানে 5G ডিভাইস ও 5G অ্যাপ্লিকেশন থেকে গতি পাবে এই সেক্টর। এখানে যত বেশি পণ্য বিক্রি হবে, সার্ভিসিং ও পুনঃবিক্রয় শিল্পগুলিও তত বৃদ্ধি পাবে।


বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরিভাবে দেশীয় উত্পাদনের দিকে নজর দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই স্যামসাং নয়ডায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোবাইল কারখানা করেছে। এমনকী অ্যাপলের সাম্প্রতিক আইফোন 14 সিরিজও ভারতে তৈরি হচ্ছে। ভারতে বছরে প্রায় ১৫ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি হয়। এরিকসন, নোকিয়া ও মোটোরোলার মতো প্রধান মোবাইল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকদের ভারতে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটা অনুমান করা যেতেই পারে যে, 5G আসার ফলে ভারতে ফোন উত্পাদন খাতে দারুণ গতি আসবে।


ভারী শিল্প: 5G-র উন্নত নেটওয়ার্ক সংযোগের ফলে কারখানাগুলিতে আরও রিমোট-নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম তৈরি হবে, যা বিপজ্জনক পরিবেশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবে। কারখানাগুলিকে ব্যাপকহারে অটোমোশন বা স্বয়ংক্রিয়তার পরিবেশ দেখা যাবে। যা কারখানার উত্পাদন, দক্ষতা ও  নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করবে।


স্বাস্থ্য পরিষেবা: যেকোনও সময় যেকোনো জায়গায় ডিজিটাল হেলথ রেকর্ড সহজেই নথিভুক্ত থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা অনেক বেশি দক্ষ ও সহজ হয়ে উঠবে। দূরের কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ছাড়াও তাঁকে ডায়াগনস্টিক পরিষেবার আওতায় আনতে পারবে এই প্রযুক্তি। ভিডিও কলগুলি আরও উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গ টেলিমেডিসিন সাপোর্ট দেওয়া সহজ হবে। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বুস্ট দেখা যাবে।


শিক্ষা: মহামারীর সময় লকডাউন থাকাকালীন দূরবর্তী শিক্ষা  ও  অনলাইন ক্লাসরুমগুলি কতটা প্রয়োজনীয় তা এখন সবাই বুঝতে পেরেছে। 5G সংযোগ আসার ফলে যেকোনও জায়গা থেকে বিশ্বমানের শিক্ষার কোর্সগুলি আরও সহজে পাওয়া যাবে।


লাইফস্টাইল: 5G AR/VR ডিভাইসের মাধ্যমে বহুল আলোচিত মেটাভার্সে একটি নতুন অ্যাক্সেস সিস্টেম তৈরি হবে। যা ডাউনলোডিং ও ডেটা শেয়ারিং স্পিড বাড়াবে। অনলাইন গেমারদের জন্য আরও ভাল যোগাযোগ ও সামগ্রিকভাবে মসৃণ অভিজ্ঞতা  দেবে ৫জি পরিষেবা।


চাকরি: 5G প্রযুক্তির আবির্ভাব নেটওয়ার্ক অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ ও এই জাতীয় অন্যান্য খাতে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। ওয়েব 3, মেটাভার্স ও অনলাইন গেমিং শিল্পগুলিতে দ্রুত বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও উদীয়মান 5G প্রযুক্তিগুলিতে ফোকাস করার জন্য একাধিক নতুন স্টার্টআপ শুরু হবে। যা আরও বেশি চাকরির জায়গা তৈরি করবে।


ভারতে 5G কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ?


এখনও পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের আরও 5G ফোনের প্রয়োজন, যা এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। 5G রেডি ফোনগুলির বেশিরভাগের দাম প্রায় ২০,০০০ টাকার মধ্যে। যা শহুরে মানুষদের কাছে সমস্যার বিষয় নাও হতে পারে।তবে গ্রামের নাগরিকদের জন্য এই টাকায় ফোন কেনা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।


অন্তত শুরুতে ট্যারিফ চার্জ বেশি হতে পারে। ভারতে যখন 3G চালু হয়েছিল, তখনও দাম বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। একই বিষয় চোখে পড়ে 4G চালু হওয়ার সময়ও। সুতরাং, এটি অনুমান করা যায় যে, 5G পরিষেবাগুলি এখন কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে, আগামী মাসগুলিতে এর দাম হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।


আপাতত, 5G কেবল ভারত জুড়ে কয়েকটি নির্বাচিত শহরে চালু করা হবে। দেশব্যাপী পরিষেবা বাস্তবায়নের জন্য, দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।


সবশেষে, 5G নেটওয়ার্ক সেট আপ করার জন্য বেশ কয়েকটি ছোট সেল স্টেশনের প্রয়োজন হবে। এগুলি 4G টাওয়ারের মতো বিশাল নয়। সাধারণ ল্যাম্পপোস্ট বা ছাদে ইনস্টল করা যেতে পারে এই টাওয়ার, তবুও টেলকোগুলির জন্য এই ধরনের 5G সেল স্টেশনগুলি সব জায়গায় সঠিকভাবে সেট আপ করতে কিছু সময় লাগবে৷


এটি উল্লেখ করা উচিত যে , পরিষেবাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা 5G ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পাব।