সঙ্ঘমিত্রা মজুমদার: পঁচাত্তর বছর আগে, যখন আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, তখন স্বপ্ন ছিল একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল ভারত গড়ার। দেশের স্বাধীনতা শক্তি এবং দায়িত্ব নিয়ে এসেছিল। আর বৈচিত্র্যের এই দেশটি ভবিষ্যতের সমস্ত দেখা এবং অদেখা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি প্রয়াসী যাত্রা শুরু করেছিল। ৩৪ কোটির সেই তরুণ দেশ থেকে আমরা এখন ১৩৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে পরিণত হয়েছি। ভারতবাসী এখন বিভিন্ন বর্ণ, ধর্ম, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ গণতন্ত্রে একসঙ্গে বসবাস করছে। 


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট মাঝরাতে (intervening night of August 14 and August 15) দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত ‘Tryst with destiny’ ভাষণে বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ আরাম বা বিশ্রামের নয় বরং অবিরাম প্রচেষ্টার’। আর এই অবিরাম প্রচেষ্টার ফলে দেখা গিয়েছে আমরা কখনও এগিয়ে গিয়েছি, আবার ছিটকে গিয়েছি, কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছি এবং আমাদের দিগন্তকে প্রশস্ত করেছি। যে ভারত ৭৫ বছর আগে তথাকথিত 'দরিদ্র' তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, শতাব্দীর পর শতাব্দী বিদেশী শাসন ও লুণ্ঠনের পর এখন এই দেশে একটি সাফল্যের গল্প রয়েছে যা বিশ্ব অনুপ্রেরণার জন্য জানতে চায়।


একটি দরিদ্র দেশ থেকে যাত্রা শুরু করে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার আকাঙ্খা, ৭৫ বছরের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস দৃঢ়তা, স্থিতিস্থাপকতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লেখা হয়েছে। আমরা একাধিক যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মহামারী এবং সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলিকেও মোকাবেলা করেছি। কিন্তু তারপরেও আমরা সমস্ত ক্ষেত্রে সফল ভাবে অগ্রসর হয়ে উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছি — শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, কৃষি থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামাজিক কল্যাণ থেকে বৈদেশিক সম্পর্ক, অর্থনীতি থেকে পরোপকার এবং বিনোদন থেকে খেলাধুলা — সব ক্ষেত্রেই সুযোগের সন্ধান করে উন্নতি করেছি।


কিন্তু আমরা যেমন অতীতের গৌরব নিয়ে থাকি, তেমনই বর্তমান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। আজ থেকে ২৫ বছর পরে ভারত কোন অবস্থায় থাকবে? ১০০ বছর পরেই বা কী হবে দেশের পরিস্থিতি? ২০৪৭ সালের ভারতের জন্য আমাদের কী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। এমন এক ভারত, যে ভারত বিশ্বমঞ্চে অন্যতম প্রভাবশালী দেশ হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখবে। যে দেশ সমৃদ্ধির নতুন এক উচ্চতা স্পর্শ করবে। অতিমারির অভিশাপের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসে যে দেশে উন্নয়ন শুধু শহরে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়বে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।


আরও পড়ুন- 'ক্রিপ্টো সেক্টর' বুঝতে সময় নিচ্ছে ভারতে, কেন অন্যদেরও শেখা উচিত