নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: আজ ১ জুলাই। জাতীয় চিকিৎসক দিবস (National Doctor's Day)। মানবজীবনে চিকিৎসকদের গুরুত্ব অপরিসীম। অসুস্থ হলে ভরসা করতে হয় চিকিৎসকদের উপরেই। বহু জটিল রোগ, সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচাতে নিজেদের জীবন বাজি রেখে লড়েন চিকিৎসকরা। তাঁদের অবদানকে সম্মান জানাতে এই দিনটি পালন করা হয়। ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের অবদানকে সম্মান জানাতে প্রথম এই দিনটি পালন শুরু করা হয়। এই দিনটি উপলক্ষেই দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনের নানা সময়ের অনুভূতি তুলে ধরলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। 


সাধারণ মানুষের কাছে বিপুল প্রত্যাশা থাকে ডাক্তারদের। কীভাবে সামলান এই চাপ?

চিকিৎসক কুণাল সরকার:
মানুষের প্রয়োজনের সময় তাঁদের যাতে সাহায্য করতে পারি, তাঁদের পাশে থাকতে পারি। সেরকম একটা লোক হতে পারি,  সেটাই আমাদের এই পেশার পাওনা। ঈশ্বরবাদের থেকে চিকিৎসাকে আলাদা করা হয়েছে, সেই কারণেই ডাক্তারিটা ডাক্তারি হয়েছে।


খারাপ সময়ে ডাক্তারের কাছে আসেন সকলে। সকলেই প্রত্যাশা নিয়ে আসেন, সেটায় কোনও সমস্যা হলে, বিচ্যুতি হলে হিংসা হয়। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

চিকিৎসক কুণাল সরকার:
এই বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়েই অসুস্থ রোগীর প্রতি সমব্যাথী হওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের দীর্ঘ ডাক্তারি জীবনের একটি অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন।  তিনি বলছেন, 'অনেকেই চিকিৎসা করাতে এসে বলে ফেলেন ডাক্তারবাবু ছেলেটা বড় ছোট বা মেয়েটা বড় ছোট। প্রথম দিকে চাপ হতো, কাউকে কাউকে কখনও কখনও মুখ  ফস্কে বলেও ফেলেছি, অসুখটা তো  আপনার, আপনার পরিবারের কথা শুনে কি করব? এটা কি কোনওভাবে প্রাসঙ্কিক? কিন্তু, আজকের দিনে আমি বুঝি এটা প্রাসঙ্গিক। কারণ আমি শুধুমাত্র ধমনী বা অসুস্থ হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসা করছি না। সেই হার্টের পিছনে মানুষটা, সেই মানুষটার পিছনে যে সামাজিক দায়িত্ব সেটা বোঝাও আমার কাজ।


এখন চিকিৎসকদের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ কী?


চিকিৎসক কুণাল সরকার: এখন আমরা একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের রাজ্য এখন একটা বোল্ড এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যসাথীর কথা বলছি। এর আগে তো ভেবে দেখেনি যে একটা মানুষকে চিকিৎসার কথা বলার পরেই খরচার কথা আসে। তারপর অনেক উপায় দেখেছি। একটা চেষ্টা চলছে সবাইকে একটা চিকিৎসার পরিধির মধ্যে আনার জন্য। দিন ইজ দি বেস্ট থিং।


এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে কোনটা পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে জরুরি মনে হয়?


চিকিৎসক কুণাল সরকার: একটা দেশ, একটা রাজ্য, একটা সমাজ হিসেবে একটা মানুষের যে কোনও পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়াতে গেলে। চিকিৎসার মধ্যে আরও রিসোর্স, আরও টাকা পয়সা, আরও ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। যেভাবে কারখানা গড়া হয়, টাকা খরচ করে সেনাবাহিনী তৈরি করা হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কেনা হয়। হেলথ ইজ দি রাইট অফ নেশন, রাইট অফ পিপল।


খরচ নিয়েও বোঝালেন সহজেই:  


চিকিৎসক কুণাল সরকার: খরচ নিয়ে খোলাখুলি মুখ খুললেন চিকিৎসক কুণাল সরকার (Kunal Sarkar)। চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, খুব সাধারণ ভাবে একটি হাসপাতালে একটি বেডের জন্য খরচা চালাতে গেলে ওই একটি বেড থেকে দিনে অন্তত ১৫ হাজার টাকা আয় প্রয়োজন। আজ ভারতে সাধারণ মানুষের দৈনিক আয় ৩০০ টাকা। ডাক্তারের কাছে এই দুটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।


আত্মসমীক্ষার বার্তা:


চিকিৎসক কুণাল সরকার: ডাক্তাররাও নানা বিভ্রান্তির শিকার। আমাদের মধ্যে পরশ্রীকাতরতা কাজ করে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পারদর্শিতার সঙ্গে বিভিন্ন লোককে একসঙ্গে থেকে একে অপরকে মর্যাদা দিয়ে কাজ করতে হবে।


আরও পড়ুন: 'চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বের থেকে কোথায় এগিয়ে ভারত?' যা বললেন প্রখ্যাত চিকিৎসক