কলকাতা: 'চৈত্রের শেষ থেকে ২৫ বৈশাখ, আজ এর বাড়ি অনুষ্ঠান তো কাল ওর বাড়ি। লেগেই থাকত। নাচ.. গান.. যে যেমন পারত। একটা জিনিস প্রত্যেকবার বাঁধা ছিল। অনুষ্ঠানের আগেরদিন, বা সেইদিনই কালবৈশাখী ঝড় আসবে। আর তাতে আমাদের প্যান্ডেল উড়ে যেত। একবছর তো কারেন্টই চলে গেল.. সেই লণ্ঠনের আলোয় নাচ.. উফ...' স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রাণখোলা হাসিতে ফেটে পড়লেন অপরাজিতা আঢ্য। কথা হচ্ছিল নববর্ষের স্মৃতি নিয়ে।


বাঙালিদের কাছে নববর্ষ মানেই একরাশ নস্টালজিয়া। কর্মব্যস্ত জীবনের ইঁদুরদৌড়ের মধ্যেও এই দিনটায় মনে পড়ে যায় হালখাতার মিষ্টির বাক্স, নতুন জামার গন্ধ। আলাদা নয় অপরাজিতার শৈশবের স্মৃতিটাও। অভিনেত্রী বলছেন, 'আমি হাওড়ার মেয়ে। পয়লা বৈশাখ মানেই আমাদের কাছে ছিল বাবার সঙ্গে হালখাতা করতে যাওয়া। কতগুলো মিষ্টির বাক্স পেয়েছি গুনতাম বসে বসে। তখন এত চাহিদা ছিল না। বুঝতামই না এত। মিষ্টির বাক্স গুনেই আনন্দ। আর ছিল গোল্ডস্পট কোল্ডড্রিকস। তখন ওইটা খেতে কী ভালো লাগত। নতুন বলতে কখনও নেলপলিশ কিনতাম আবার কখনও ওড়না।'


হালখাতার পাশাপাশি ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবিপি লাইভকে অপরাজিতা বলছেন, 'বিয়ের পর আমাদের বাড়িতে পুজো হয়। বিয়ের আগে পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠান হত। আমাদের চাহিদা বলতে ছিল চারটে লুচি, একটু আলুর দম আর একটা দরবেশ। চৈত্রের শেষ থেকে শুরু করে ২৫ বৈশাখ পর্যন্ত টানা অনুষ্ঠান চলত। একদিন এর বাড়ি একদিন ওর বাড়ি। আর প্রত্যেক বছর একটা জিনিস বাঁধা ছিল। নববর্ষের দিন বা তার আগেরদিন কালবৈশাখী ঝড় উঠত। আর সেই ঝড়ে আমাদের প্যান্ডেল উড়ে যেত। একবছর তো ঝড়ের দাপটে লোডশেডিং। গোটা এলাকা অন্ধকার। কিন্তু তাতে তো আর অনুষ্ঠান বন্ধ করা চলে না। অগত্যা লণ্ঠনের আলোয় নাচ হল। সেই ছবি এখনও আছে আমার কাছে। তখন বড়জোর ১০ কি ১১ বছর বয়স আমার।'


 




 


ছোটবেলা থেকেই নাচ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি, নৃত্যশিল্পী অপরাজিতার খ্যাতিও কম নয়। তাঁর নাচের স্কুল প্রথম অনুষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িয়ে নববর্ষের স্মৃতি। গল্প করতে করতে অভিনেত্রী বলছেন, 'মনে আছে, আমার স্কুলের প্রথম নাচের অনুষ্ঠান ছিল নববর্ষের দিন। সেই উপলক্ষ্যে ২২ টাকা দিয়ে একটা আইলাইনার কিনেছিলাম। প্রথমবার সবাই সেই আইলাইন দিয়ে চোখ আঁকলাম। সে কি আনন্দ। সেই অনুষ্ঠানে প্রথমবার আমাদের রোজগার হয়েছিল কিছু টাকা।


 




 


এখন নববর্ষে বেশিরভাগ সময়েই শ্যুটিং থাকে। তবু পুরনো রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করেন অপরাজিতা। বললেন, 'এখন সময় পেলে এই দিনটায় একটু বড়দের সঙ্গে দেখা করে আসি। প্রণাম করি। আর বাড়িতে পুজো হলে সবাই আসেন। নাচ-গান করে বেশ ভালোই কেটে যায় দিনটা।'