মুঞ্জারো (Mounjaro), ওজেমপিক (Ozempic)। এই ওষুধগুলি ভারতে নতুন হলেও হঠাৎ করেই অতি দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়েছে আলোচনায়। শুধু আলোচনা নয়, এক শ্রেণির মানুষ কার্যত উন্মুখ হয়ে রয়েছেন এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য।  পরিসংখ্যান বলছে, মুঞ্জারো (Mounjaro) নামের ওষুধটি  সেপ্টেম্বরে ভারতে সর্বাধিক বেশি অঙ্কের ব্যবসা করা ওষুধগুলির একটি। কিন্তু কেন হঠাৎ মুঞ্জারো (Mounjaro), ওজেমপিক (Ozempic) নিয়ে এতটা উৎসাহ?

Continues below advertisement

কী কাজ করে মুঞ্জারো (Mounjaro), ওজেমপিক (Ozempic)

এই দুই ওষুধই আদতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। যা হরমোন নিঃসরণের ওপর প্রভাব খাটিয়ে খিদে কমায়। পরোক্ষভাবে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে ওজনও কমায় লক্ষণীয় দ্রুত গতিতে। আর এটাই এখন মানুষের কাছে বিরাট আকর্ষণের বস্তু। রোগা হওয়া, চটজলদি কাঙ্খিত ফিগার পেয়ে যাওয়া এগুলো যেন হাতের পাঁচ! কিন্তু এই মুঞ্জারো (Mounjaro), ওজেমপিক (Ozempic) ব্যবহার করে রোগা হওয়ার শর্টকাট পদ্ধতি কি আদৌ ভাল? কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তো? এবিপি লাইভের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সুমন মিত্র ( বিশেষজ্ঞ ইন্টারনাল মেডিসিন, সিএমআরআই হাসপাতাল, কোডওয়েলনেস)। 

Continues below advertisement

চিকিৎসক সুমন মিত্র ব্যাখ্যা করলেন, আমাদের শরীরের একটি সহজাত ব্যালেন্স রয়েছে। শরীরের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ হয়, সেটাই শরীরের সব কার্যকলাপের ভারসাম্য বজায় রাখে, ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। হরমোন নিঃসরণে তারতম্য বা ইমব্যালেন্স হলেই বিপত্তি। ডায়াবেটিসের ম্যানেজমেন্টের জন্য সারা পৃথিবীতে নিত্যনতুন গবেষণা চলছে। প্রতিটি গবেষণারই উদ্দেশ্য হল, ব্লাড সুগার লেভেল কমানোর পাশাপাশি শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও যাতে ভালভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করবে এমন কিছু আবিষ্কার করা। টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের থাকে, তাঁদের সাধারণত ওজন বেশি হয়। তাঁদের বিএমনআই অত্যন্ত উচ্চ, তাই তঁদের ইনসুলিন রেজিসট্যান্স তৈরি হয়। তাই ব্লাড সুগার বাড়তে থাকে। এঁদের সাধারণত দুধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওজন কমলে সুগার নামার প্রবণতা তৈরি হয়। সেই সঙ্গে রোগীর অন্যান্য অর্গানগুলি যাতে ভালভাবে কাজ করে তার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। এই মুঞ্জারো বা ওজেমপিক, GLP 1 AGONIST হিসেবে কাজ করে খিদে পাওয়া কমাতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে খাবার শোষিত হওয়া কমিয়েও কাজ করে।এর ফলে শরীরে ওজন কমে দ্রুত। মনে রাখতে হবে, এই ওষুধগুলির আবিষ্কার কিন্তু শুধু ওজন কমানোর জন্য নয় বরং ওজন কমিয়ে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের জন্য। এখন যাঁরা কম মেহনত করে, শর্টকাট পদ্ধতিতে ওজন কমাতে চান, তাঁরাই এই ওষুধের পিছনে ছুটছেন। এই ওষুধগুলি কিন্তু এখনও গবেষণার আওতায়, আরও অনেক বৈজ্ঞানিক ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে। তাছাড়া  মুঞ্জারো বা ওজেমপিক কিন্তু আদৌ নিজের ইচ্ছেয় খাওয়ার কথা নয়। ডাক্তার  একজন রোগীর পরিস্থিতি বিচার করে তবেই এই ওষুধ দেন। তাই ডাক্তাররা প্রেসক্রাইব না করলেও , এই ওষুধের চাহিদা ঝড়ের মতো বাড়ছে। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: মানুষের শরীর কিন্তু ভারসাম্যের উপর নির্ভরশীল। এখন এই ওষুধের প্রভাবে সেই ভারসাম্য নষ্ট হলে কিন্তু আমাদের শরীর আর নিজেকে নিজের মতো করে চিনতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসতেই পারে। বিপাকক্রিয়ার উপর এর প্রভাব মূলত দেখা যায়। যেমন খিদে কমে যাওয়া, বমি ভাব, বমি হওয়া, ক্লান্তি, পেটের গণ্ডগোল লেগেই থাকবে। বহু রোগীর মধ্যেই এই সাইড এফেক্ট দেখা গিয়েছে। তাই অনেকেই এই ওষুধ চালিয়ে যেতে পারেননি। আবার অনেকে স্লিম ফিগার পাওয়ার লক্ষ্যে সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনেই ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। 

চিকিৎসক সুমন মিত্রর মতে, এই ওষুধগুলি খুবই ভাল ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টের জন্য। চিকিৎসক সবদিক বিবেচনা করে ব্লাড সুগারের রোগীদের এই ওষুধ দিতে পারেন যাঁর ব্লাড সুগার অত্যন্ত বেশি, ওজনও অতিরিক্ত, বিএমআই হাই, তাঁদেরকে। কিন্তু শুধুই রোগা হওয়ার দৌড়ে নেমে এই ওষুধ খেলে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে এই ওষুধকে সার্টিফাই করার জন্য আরও অনেক ট্রায়াল প্রয়োজন। খরচ সাপেক্ষ : এই ওষুধ অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ। তাই ভারতের মতো দেশে সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ওষুধ কেনা সাধ্যাতীত। তবে অনেক উচ্চবিত্ত মানুষ দামের তোয়াক্কা না করেই, রোগা হওয়া করার জন্য এই এই ওষুধ খাচ্ছেন।  

 

চিকিৎসক সুমন মিত্র