কলকাতা : হজমের সমস্যা ঘরে ঘরে। উঠতে বসতে.... উফ কী গ্যাস ... অম্বল !  এই শুনতে শুনতে ক্লান্ত সকলে। অথচ মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খেয়েও কাজ হচ্ছে না ! কেন বলুন তো ? এই নিয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনায় ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়। 


হজমের সমস্যা কেন হয় 
হজমের সমস্যা কিন্তু কোন একটি নির্দিষ্ট অসুখ নয়। হজম একটা লম্বা পদ্ধতি।  আমরা একটি খাবার মুখে ঢোকানো থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে হজমের শেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছই। এই পুরো সিস্টেমটি বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত । প্রথমে খাদ্য গ্রহণ।  তারপর তা চিবিয়ে নরম হওয়া । এই নরম হওয়ার জন্য প্রয়োজন লালারস। তারপর তা খাদ্যনালীর মারফত গিয়ে পৌঁছয় পাকস্থলীতে । পাকস্থলীতে কিছুটা খাদ্য পাচিত হয় ।  তারপরে কিছুটা পাচ্য, অপাচ্য গিয়ে পৌঁছায় ক্ষুদ্রান্ত্রে।  ক্ষুদ্রান্ত্রের রস, অগ্ন্যাশয় রস এবং পিত্তরস মিলে বাকি অংশটি পাচিত হয়ে , শোষিত হয় আমাদের শরীরে। হজম বলতে আমরা এই পুরো পদ্ধতিটাকে বোঝানো হয় । তাই হজমের সমস্যা বলতে এই সম্পূর্ণ পদ্ধতির মধ্যে যে কোনও একটি ধাপের সমস্যাকে বোঝানো যেতে পারে। 



  •  খাবার সঠিকভাবে চিবিয়ে খাওয়া হল না, তার ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে।

  • আবার যথেষ্ট পরিমাণের লালা রস নিষ্কৃত না হওয়ার ফলেও খাবার ঠিকমতো ভাবে মণ্ডে রূপান্তরিত হয় না।  তার থেকেও হজম এর সমস্যা হতে পারে। লালা গ্রন্থির ক্ষরণ কমে যায় কয়েকটি অসুখে। তার থেকেও হজমের সমস্যা হয় ।

  • খাদ্যনালীর সমস্যা থাকলেও হজমের সমস্যা হতে পারে। 

  • হজমের সমস্যার কারণ নিহিত থাকতে পারে পাকস্থলীতেও ।

  • আবার ক্ষুদ্রান্ত্রের সমস্যা, যকৃতের সমস্যা কিংবা অগ্ন্যাশয়ের সমস্যাও হজম ঠিকমতো না হওয়ার কারণ হতে পারে।

  • যাদের দাঁত পড়ে গেছে বা দাঁত কোনও কারণে না থাকলে, ঠিকভাবে খাবার চিবানো হয় না । এর ফলে হজমের সমস্যা আসতে পারে । আমাদের দাঁতগুলির আকার ও অবস্থান অনুসারে, এক-একটির একেকরকম কাজ। কোনও দাঁত খাবার কামড়াতে সাহায্য করে, কোনও দাঁত আবার ছিঁড়ে, চিবোতে সাহায্য করে। বয়সকালে তাই দাঁত পড়ে গেলে খাবার ভাল ভাবে ছিঁড়ে চিবানো হয় না। তার থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়। 

  • পাকস্থলীর সমস্যার জন্য আমরা হজমের ওষুধ ব্যবহার করে থাকি । বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টাসিড অনেকে খেয়ে থাকেন।  খাবার ঠিকমতো হজম করানোর জন্য নানা ধরনের  অ্যান্টাসিড পাওয়া যায়। অ্যান্টাসিডেরও নানা গোত্র রয়েছে। 

  • কিছু  ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং অ্যালুমিনিয়াম সালফেট সমৃদ্ধ ওষুধ রয়েছে যা সরাসরি ক্ষার হয়ে  অম্লকে নিউট্রালাইজ করে। কারো যদি অ্যাসিডিটির সমস্যার জন্য হজমের সমস্যা হয় তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো ভালো কাজ করে।  দীর্ঘক্ষণ খাবার সঠিকভাবে না খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে, অত্যন্ত তেল ঝাল মশলা সমৃদ্ধ খাবার খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে , বেশি পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে , অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করা বা তেল যুক্ত খাবারের থেকে অ্যাসিডিটি হতে পারে । কিছু কিছু খাবার থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হয় । সে ক্ষেত্রে গ্যাস কম করতে পারে এমন ওষুধ খেতে হবে। 

  •  যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাকে ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপ্যাথি বলে। সেক্ষেত্রে পাকস্থলীর সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা  কমে যায়।  সেক্ষেত্রে খাবারটা ঠিক সময়ে পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে  গিয়ে পৌঁছয় না।  দেখা যায় সেই কারণে পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি হয় । ফলে ঢেকুড় ওঠার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে । এই ধরনের ক্ষেত্রে হজমের  ন্জন্য কিছু এনজাইম ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণত লিক্যুইড ফর্মে  পাওয়া যায়।

  • গলব্লাডারের সমস্যা হলেও বদহজম হতে পারে ।

  • আবার দীর্ঘদিন লিভারের সমস্যা থাকলেও হজমের সমস্যাটা নিয়মিত হয়ে যায়।  অত্যধিক মদ্যপানের ফলেও লিভার খারাপ হতে পারে । এছাড়া লিভারের আরো নানারকম অসুখ রয়েছে যা লিভার থেকে সঠিক পরিমাণে পিত্ত ক্ষরণে বাধা সৃষ্টি করে ।

  • গলব্লাডারে স্টোন হলে হজমের সমস্যা হতে পারে। 

  • তাই হজমের সমস্যাটা কার কোন কারণে হচ্ছে তা জানা জরুরি।  হয়তো কারও অগ্ন্যাশয়ের কোনও সমস্যার জন্য হজম হচ্ছে না, সে যদি পাকস্থলীর হজমের সমস্যার জন্য তৈরি ওষুধ খায়, তাহলে তা কিন্তু কোন কাজ হবে না। তাই দরকার আগে সমস্যা নির্ণয়। তারপর চিকিৎসা। 
    মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টাসিড খেয়ে গেলে কিন্তু ক্ষতিই হয়। অ্যান্টাসিড খেতে খেতে দেখা যায়, বিনা ওষুধে হয়ত আর তার হজমই হচ্ছে না। আসলে হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটাই বিপর্যস্ত হয় এতে। তাই কোনও অসুবিধেয় পড়লে রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসককে দেখান। তারপর ঠিক ওষুধ খান, সুস্থ ভাবে বাঁচুন। 


    চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়