কলকাতা: শীত মানেই অনেকের কাছে গাঁটে গাঁটে ব্যথা (Joint Pain) বেড়ে যায়। যারা আর্থ্রাইটিসে ভোগেন, ব্যথার জেরে তাদের এই সময়টা বেশ অসুবিধায় কাটাতে হয়। কিন্তু শীত পড়লেই এই ব্যথা বাড়ে কেন? তাপমাত্রার সঙ্গে আদতে এর কী সম্পর্ক? আর কীভাবেই বা এই ব্যথা কাবু করা যায়? এই গোটা ব্যাপারে এবিপি লাইভের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করলেন ফর্টিস হাসপাতালের রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত অর্থোপেডিক সার্জেন অনিন্দাংশু বসু।


শীত পড়তেই কেন গাঁটের ব্যথা বাড়ে (Joint Pain in Winter reasons)?


চিকিৎসকের কথায়, আমাদের শরীরের আদতে দুই ধরনের তাপমাত্রা হয়। একটি হল হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলির তাপমাত্রা। যার পোশাকি নাম কোর টেম্পারেচার। অন্যটি হল শরীরের আবরণী কলাকোশ, হাড় ও ত্বকের তাপমাত্রা। যাকে বলা যায় পেরিফেরাল তাপমাত্রা। শীতকালে পেরিফেরাল টেম্পারেচার কমে গেলেও কোর টেম্পারেচার কমে না। তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে মাংসপেশি, হাড়ের জয়েন্টের সংকোচন ঘটতে থাকে। এতে সেই সব অংশে তৈরি হতে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম। এই দুই উপাদান ওই অংশের পিএইচ মাত্রা কমিয়ে দেয়। যা ব্যথার মূল কারণ। এর জেরে শীতকালে গাঁটের ব্যথার সমস্যা বাড়তে থাকে।


ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে রেহাই পাব ব্যথা থেকে (Join pain tips to manage)?


ঘরোয়া উপায়ে কি ব্যথার থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে? হ্যাঁ, তাও সম্ভব। তেমনই কয়েকটি উপায় বাতলে দিলেন চিকিৎসক নিজেই। বাড়িতেই সহজ তিনটি কাজ করতে পারলে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।


হিট থেরাপি প্রথমেই চিকিৎসক জানালেন, হিট থেরাপির কথা। শীতকালে তাপমাত্রা কমে যায় বলে কেন এই ব্যথা বাড়ে তা আগেই বলা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই অনিন্দাংশু জানালেন হিট থেরাপি নিয়মিত নিতে হবে। এর জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ বা হট প্যাডের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। হিট থেরাপি পেরিফেরাল উষ্ণতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।


সক্রিয় থাকা শীত মানেই জবুথবু গুটিসুটি মেরে থাকার সময় যেন। কিন্তু এই প্রবণতাই সবচেয়ে খারাপ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। বরং শীত পড়লে বেশি করে সক্রিয় থাকতে হবে। বেশি করে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এতে হার্ট আরও দ্রুত রক্ত পাম্প করতে শুরু করে। এতে পেরিফেরি অর্থাৎ ত্বকের নিচে শিরা উপশিরা দিয়ে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এতে সেই অংশে জমে থাকা মেটাবলাইটস বেরিয়ে যায়। যার ফলে শরীরের উষ্ণতা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। শরীরের উষ্ণতা বাড়লেই ল্যাকটিক অ্যাসিড কমে যাবে। ব্যথাও কমে যাবে।


ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজনের কারণে গাঁট ও হাড়ের ব্যথা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা বিশেষ করে জরুরি। এর জন্য বিএমআই সবসময়  ২৪-২৬-এর মধ্যে থাকলে ভাল।


রোদ পোহানো: শীতকালে রোদের সঙ্গে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ কমে যায়। সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন অনিন্দাংশু। শুধু গাঁটের ব্যথা নয়, এই সময় হাড়ে ব্যথাও বাড়তে থাকে। যার মূল কারণ ভিটামিন ডি-এর অভাব। এর অভাবেও ব্যথা বাড়ে। রোদ শীতকালের দুর্দান্ত হিট থেরাপি হতে পারে। তাই অবসর পেলে রোদও পোহাতে পারেন। 


আরও পড়ুন: Red Ant Chutney GI tag: লাল পিঁপড়েতে এমন কী জাদু ? কেনই বা এর চাটনি জিআই ট্যাগ পেল? খেতে হলে কীভাবেই বা রাঁধবেন