কলকাতা : রক্তশূন্যতা হলো রক্তের এমন একটি রোগ যেখানে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা (RBC) বা হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে কম থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, Anemia কোনও অসুখ নয়, অসুখের লক্ষণ মাত্র। এর অনেক কারণ আছে। সেই কারণ গুলি ধরতে পারলি তবে অ্যানিমিয়া সারানো সম্ভব। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন, পিয়ারলেস হাসপাতালের বিশিষ্ট হেপাটোলজিস্ট সাজিয়া গুলশনপিয়ারলেস হাসপাতাল ও ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানসের উদ্যোগে কলকাতার নভেম্বর সম্মেলনে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তার মধ্যেই এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে কথা বলেন তিনি। 

অ্যানিমিয়ার লক্ষণগুলি কী কী 



  • শ্বাসকষ্ট অনুভব করা

  • দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া

  • ত্বক ফ্যাকাশে হওয়া

  • ক্লান্তি

  • শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া


কী কী কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে ? 



  • কোনও কারণে যদি শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যায়।

  • বা কোনও কারণে যদি শরীরে রক্ত কম তৈরি হয় ।

  • অথবা রক্ত তৈরি হয়ে যদি নষ্ট হয়ে যায়। 

    ঋতুস্রাব -
    মহিলাদের শরীর থেকে রক্ত কমে যাওয়ার নানা কারণ  থাকতে পারে। যেমন - ঋতুস্রাব। ঋতুস্রাবের জন্য অনেকটা রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে আয়রনের ঘাটতি হয় । তার ফল অ্যানিমিয়া ।  অনেক সময় মেয়েরা জানেনই না তাঁরা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। এমনকী বেশি ঋতুস্রাব হওয়া, দীর্ঘদিন ধরে এই পর্যায় চলা যে কোনও সমস্যার, তাও তাঁরা মনে করেনই না। তাই ডাক্তার দেখানো জরুরি। 

     অপুষ্টি  -
    সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পুরুষদের থেকে মহিলারাই বেশি অ্যানিমিয়ায় ভোগেন। বিশেষত গ্রামের মেয়েরা। কেন ? কারণ অপুষ্টি। আমাদের দেশে এখনও মেয়েরা নিজের শরীরের প্রতি অনেকটাই উদাসীন। তার ফলে বাড়ে অ্যানিমিয়ার সমস্যা।  যাঁদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়, তাঁদের সমস্যাও বেশি।

    অপারেশন - 
    কোনও বড় অপারেশন হলে, শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যায়। তার জেরে হতে পারে রক্তাল্পতা। 

    রক্ত তৈরিতে সমস্যা

  • হাড়ের মজ্জার মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হয়। তাই মজ্জায় কোনও অসুখ হলে রক্ত তৈরিতেই সমস্যা হতে পারে।  

  • অনেক সময় কিডনির সমস্যার জন্যও লোহিত কণিকা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হয়। 

  • অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন হয়। 

  • সিকেল সেল অ্যানিমিয়া হলে রক্ত কণিকার আকার কাস্তের মতো হয়। তাই রক্তবাহিকার মধ্যে দিয়ে তাদের চলাচল ব্যাহত হয়। 

  • থাইরয়েডের সমস্যা, ক্যানসার, এডস,  থ্যালাসেমিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, লিভারের সমস্যা, ম্যালেরিয়া, ইত্যাদি অসুখও রক্তাল্পতার অন্যতম কারণ। 

  • অনেক সময় শরীরের ভিতর ছোট ছোট আলসার তৈরি হয়। তার থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণেও রক্তাল্পতা হত পারে। 

  • দীর্ঘস্থায়ী রোগের ফলেও রক্তাল্পতা আসতে পারে। এই ধরনের রক্তাল্পতার জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিত্সকরা অন্তর্নিহিত রোগের চিকিত্সার দিকে মনোনিবেশ করেন তখন।

    রক্ত তৈরি হয়েও নষ্ট হয়ে যাওয়া 

  • অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন হয়। 


ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা ঘটতে পারে । ফোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন B12এর অভাবেও  রক্তাল্পতা হতে পারে।

অ্যানিমিয়া কাটিয়ে ওঠার উপায় 



  • বেশিরভাগ অ্যানিমিক রোগীদের প্রতিদিন 150 থেকে 200 মিলিগ্রাম আয়রন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

  • এছাড়া কারও বেশ ঋতুস্রাব হলে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিতে হবে কোনও ঘাটতি হল কিনা। 

  • মাথা ঝিমঝিম , ক্লান্তি, বারবার ঘুম আসা, দুর্বল লাগার মতো উপসর্গ দীর্ঘদিন থেকে গেলে পরীক্ষা করার ।