নয়াদিল্লি: একাধিক রোগের কথা আমরা শুনে থাকি। বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধির কথা শুনি। নানারকম মারণরোগের প্রকোপের কথাও শোনা যায়। কোভিডের মতো সংক্রামক ব্য়াধিও সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়াল আরও একটি খবর। একাধিক গবেষকদের গবেষণায় উঠে এল ছত্রাক সংক্রমণের একটি পরিসংখ্যান।
বিভিন্ন রোগের ভিড়ে ছত্রাক সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুলনায় অনেক কম হয় বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতে প্রায় ৬ কোটি বাসিন্দা ছত্রাক সংক্রমণের শিকার। তার মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ মোল্ড সংক্রমণ (Mold Infection)।
ভারতে ছত্রাক সংক্রমণের ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। কিন্তু ঠিক কী হয়, কোথায় কোথায় হয়-এই ব্যাপারে বেশি কিছু তথ্য় নেই। বিভিন্ন গবেষণা লব্ধ তথ্যের উপর যে সমীক্ষা হয়েছে তা থেকে এই প্রথম ভারতে ছত্রাক সংক্রমণের ঘটনা, তার গভীরতা এবং প্রকারভেদের বিষয়ে জানা গেল।
কাদের গবেষণা:
নয়া দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সস, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর AIIMS, চন্ডীগড়ের PGIMER, UK-এর ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষকরা জানাচ্ছেন, সারা ভারতে ৫.৭ কোটি বাসিন্দা- ছত্রাক সংক্রমণের শিকার। যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪.৪ শতাংশ।
দিল্লি এমস-এর অনিমেষ রায় এই প্রবন্ধের মূল লেখক। তিনি বলেন, 'ছত্রাক সংক্রমণের সংখ্যা বিপুল কিন্তু তা নিয়ে বেশি ভাবা হয়নি।' তিনি আরও বলেন, 'যখন ভারতে এক বছরে টিবিতে তিন মিলিয়নের কম বাসিন্দা সংক্রমিত হন, তখন ছত্রাক সংক্রমণের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।'
Open Forum Infectious Diseases- জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, যোনিমুখের সংক্রমণ, যা মূলত ইস্টের জন্য় হয়, তার জন্য প্রায় আড়াই কোটি মহিলা বারবার সংক্রমিত হন। চুলেও ছত্রাক সংক্রমণ হয়। যা tinea capitis- নামে পরিচিত। সাধারণ বহু স্কুল পড়ুয়া এই সমস্যায় ভোগে। সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ছত্রাক সংক্রমণের কারণে মাথার ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে চুল পড়ে যায়।
প্রাণঘাতী সংক্রমণও রয়েছে:
মোল্ড ইনফেকশন, যা একধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। ফুসফুস এবং সাইনাসে এই ধরনের সংক্রমণ হয়ে থাকে। যা থেকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, Mold বা ছত্রাক থেকে অ্যাসপারগিলোসিস (Aspergillosis) হয়। এটা শ্বাসযন্ত্রের একটি সংক্রমণ। অন্তত ১৭ লক্ষ মানুষ এর শিকার। ছত্রাকের কারণে ফুসফুসে অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন অন্তত ৩৫ লক্ষ মানুষ।
সংবাগ সংস্থা পিটিআই সূত্রের খবর, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চোখের ছত্রাকজনিত সংক্রমণে ভোগেন অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ। অন্যদিকে অন্তত ২ লক্ষ মানুষ মিউকরমায়োকোসিস (Mucormycosis)-এর শিকার। যা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামেও পরিচিত। কোভিড ঢেউয়ের মাঝেই বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের মুখে এর কথা শোনা গিয়েছিল।
ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্লোবাল অ্যাকশন ফল ফাঙ্গাল ডিজ়িজ -এর তরফে প্রফেসর ডেভিড ডেনিং (David Denning) এর মতে সাম্প্রতিক কিছু বছরে ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য রোগ ধরা পড়ার সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, 'ছত্রাকজনিত সংক্রমণ এবং রোগ কোনও দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এবং উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটায়।' পাশাপাশি তাঁর মতে, 'ভারতের বড় একটি অংশে চিকিৎসা পরিকাঠামো সংক্রান্ত কারণে রোগ চিহ্নিত করার সুযোগ কম থাকায় শিশুদের মধ্যে হিস্টোপ্ল্যাসমোসিস এবং ফাঙ্গাল অ্যাসথমার মতো রোগ চিহ্নিতকরণও ধাক্কা খায়।'
আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে বার বার হাত ধুচ্ছেন? ওসিডি নয়তো? সতর্ক হোন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা