Immunity Booster: আজকাল আমরা প্রায় সকলেই অত্যন্ত দৌড়ঝাঁপের জীবনে অভ্যস্ত। শুধু যাঁরা চাকরি করার জন্য বাড়ির বাইরে বেরোন তাঁরাই নন, যাঁরা বাড়িতে থেকে গৃহস্থালীর কাজ সামলান, তাঁদের জীবনেও ব্যস্ততা কিছু নয়। আর এই জীবনযাত্রার মধ্যে অনেক সময় আমাদের অজান্তেই কিছু ঘাটতি হয়ে যায় আমাদের শরীরে। গুরুত্বপূর্ণ উপকরণের ঘাটতি হলে শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি হতে বাধ্য। তাই সতর্ক থাকা ভীষণ ভাবে জরুরি। তবে অনেক সময়েই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আমরা বিভিন্ন লোকের থেকে শুনে বা জেনে অনেক জিনিস খেয়ে নিই এবং ভাবি যে আমাদের 'ইমিউনিটি' বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সুদৃঢ় হবে। কিন্তু অনেকসময়েই তা হয় না, উল্টে বাড়ে বিপদ। শরীর-স্বাস্থ্য ভাল হওয়ার বদলে আরও খারাপ হয়ে যায়। তাই কীভাবে সাবধান থাকবেন, সেই প্রসঙ্গে রইল সহজ কিছু টিপস।  


পুষ্টিবিদ ঋদ্ধি খান্না জানিয়েছেন, এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলি খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কমে যায়। ঋদ্ধির কথায় আমাদের শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য কোনও জিনিসেরই বাড়াবাড়ি হওয়া ভাল নয়। জিঙ্ক হোক বা ফ্যাট কিংবা কার্বোহাইড্রেট- যেকোনও উপকরণই অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে থাকা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। জিঙ্কের বিষয়ে ঋদ্ধি খান্না জানিয়েছেন, এটি একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এটি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকেন বা সেবন করেন। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে জিঙ্ক জাতীয় সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার বেশ বেশি মাত্রায় হতে শুরু করেছে। সেই সময়ে এইসব জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট বেশ কিছু অসুখের, রোগের ক্ষেত্রে নিরাময়ে চমৎকার ভাবে কাজ করেছিল। ফলে জনপ্রিয়ও হয়েছিল।


পুষ্টিবিদ ঋদ্ধি খান্নার কথায়, সবসময় যে জিঙ্ক জাতীয় খাবার খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালই হবে, এমনটা ভাবা কিন্তু উচিত নয়। বরং অতিরিক্ত মাত্রায় জিঙ্ক সেবন করলে শরীরে একাধিক সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে জিঙ্ক শরীর-স্বাস্থ্যে জমে গেলে তা আমাদের শরীর আয়রন এবং কপার অর্থাৎ তামার শোষণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, কপার বা তামা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইউমিনিটি বৃদ্ধি করে। তাই ঋদ্ধি পরামর্শ দিয়েছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনওভাবেই মাত্রাতিরিক্ত ভাবে জিঙ্ক সেবন করা উচিত নয়। আর যাই খান না কেন তার পরিমাণের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। 


ফ্যাটজাতীয় খাবারের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে। ঋদ্ধি জানিয়েছেন, কী ধরনের ফ্যাটজাতীয় খাবার আমরা খাই সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি। আজকাল জাঙ্ক ফুডের জনপ্রিয়তা খুবই বেশি। আর আমরা যেহেতু অনেকেই জাঙ্ক ফুড খেয়ে থাকি, তাই শরীরে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটই বেশি প্রবেশ করে। অনেকে আবার তেল, ঘি বেশি খেয়ে ফেলেন, যেটাও শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা হেলদি ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ভাল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো এবং বেশ কিছু বাদামে। অন্যদিকে পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে বেশ কিছু মাছ, চিয়া সিড এবং আখরোটের মধ্যে। ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা ৫ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 


এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে সবজি এবং ফল অতিরিক্ত ভালভাবে ধুয়ে খাওয়া, ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত শরীরচর্চা করা এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট খেলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়। তাই এইসব অভ্যাস এড়িয়ে চলা জরুরি। আর শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তাহলে আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। অসুস্থতা আপনাকে কাবু করবে না। 


তথ্যসূত্র- আইএএনএস