ত্রিথেশ নন্দন, নয়াদিল্লি: পরিবেশ বাঁচাতে বড়সড় পদক্ষেপ ভারত সরকারের। ১০০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক সামগ্রী (Single Use Plastic Items) ব্যবহারের উপর আসতে চলেছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। শুধু ব্যবহারই নয়, প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির উপরেও কড়া নিষেধাজ্ঞা আসতে চলেছে পয়লা জুলাই থেকে।


কী কী বারণ:
১ জুলাই, ২০২২ থেকে ১০০ মাইক্রনের (100 Micron) নীচে থাকা প্লাস্টিক (Plastic) সামগ্রী



  • আমদানি

  • মজুত

  • বিলি বা বণ্টন

  • বিক্রি

  • ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে


দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য থাকা এমন প্লাস্টিক সামগ্রী। খাবারের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিক কাপ, গ্লাস, চামচ। প্যাকেজিং ও মোড়কের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীও এই তালিকায় পড়ছে। মিষ্টির বাক্স, সিগারেটের প্যাকেটও এই তালিকায় পড়ছে। এছাড়াও, ফ্লেক্স, ব্যানারে যে ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, সেটাও নিষিদ্ধ তালিকায় পড়ছে। বেলুন, লজেন্স, আইসক্রিমের মোড়ক যে ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় সেটিও নিষিদ্ধ তালিকায় পড়তে চলেছে পয়লা জুলাই থেকে। 




কেন এই পদক্ষেপ?
২০১৯ সালে চতুর্থ ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলিতে (United Nations Environment Assembly) ভারতেই একটি রেজোলিউশন আনে যেথানে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহারের দূষণের কথা বলা হয়েছিল। ২০২২ সালে পঞ্চম ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলিতে প্লাস্টিক দূষণ রুখতে সচেতনতা নেওয়ার পদক্ষেপের কথা বলে।  


ভারতের পদক্ষেপ:



  • কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (Central Pollution Control Board) -এর তরফে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

  • প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে।

  • ৫ এপ্রিল লঞ্চ করা হয়েছে PRAKRITI MASCOT

  • প্লাস্টিক দূষণ কমাতে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে পরিবেশ মন্ত্রক।

  • বেআইনি প্লাস্টিক সামগ্রী আমদানি মজুত, বিলি বা বণ্টন, বিক্রি অথবা তৈরি রুখতে নজরদারি করবে টাস্কফোর্স।

  • নিয়ম ভাঙলে ৫ বছরের জন্য জেল অথবা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। অথবা দুটিই একসঙ্গে করা হতে পারে।  




প্লাস্টিক দূষণ:
প্রতি বছর ভারতে ৪১ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য (Plastic Waste) তৈরি হয়। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মোট প্লাস্টিক সামগ্রী যা ব্যবহার হয়, তার প্রায় ১০ থেকে ৩৫ শতাংশই সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক (Single use Plastic) সামগ্রী। প্লাস্টিক সামগ্রী পুনর্ব্যবহার করলে দূষণের ঝুঁকি অল্প হলেও কমে যায়। কিন্তু সেই হার খুবই কম। সারা বিশ্বে যত প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। তার মাত্র ৯ শতাংশ রিসাইক্লিং (Recycling) করা হয়।  ১২ শতাংশ ধ্বংস করা সম্ভব হয়।  বাকি ৭৯ শতাংশই মাটি, সমুদ্রে মিশে পরিবেশ দূষণ করে। সূত্র: CPCB


ক্ষতির বহর:



  • মুম্বই, কেরল ও আন্দামান-নিকোবর সংলগ্ন সমুদ্র বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দূষিত সমুদ্র।

  • বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর কারণে প্রায় ২৬৭ প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত।

  • সামুদ্রিক কাছিমের অন্তত ৮৬%, সামুদ্রিক পাখির ৪৪% এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্তত ৪৩% প্লাস্টিক দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

  • প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ভারী ধাতু সমুদ্রের জলে মেশে। 
    সূত্র: TERI


বিদেশেও কড়া পদক্ষেপ:
২০০২: প্রথম দেশে হিসেবে বাংলাদেশ এই জাতীয় প্লাস্টিক ব্য়াগে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে।
২০১৯: নিউজিল্যান্ড সামগ্রিক ভাবে প্লাস্টিক ব্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
২০২০: ধাপে ধাপে নিষিদ্ধকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে চিন।
জুলাই, ২০১৯ পর্যন্ত ৬৮টি দেশ বিভিন্ন ধাপে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে।


আরও পড়ুন: কেন উদ্ধবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন একনাথ শিণ্ডে?