সুগার ছিল, সঙ্গে করোনা পজিটিভ। চোখ ফুলে গিয়েছিল। সুগার কমিয়ে এনেছিলেন ডাক্তাররা। তারপর বাড়াবাড়ি হওয়ায় হাসপাতালে HDU-তে ভর্তি করা হয়ছিল ৩২ বছরের তরুণীকে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের হানা বুঝেই উঠতে পারেনি পরিবার।  ডাক্তার বলেছিলেন, ধারনা করছি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মাত্র ৫ দিনের মাথাতেই প্রাণ গেল সোদপুরের বাসিন্দার। এর আগেও CMRI হাসপাতাল দাবি করেছিল, ওই হাসপাতালে করোনামুক্ত হওয়ার পর  মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলার।


করোনা আবহে দানা বাঁধছে নতুন রোগ নিয়ে আতঙ্ক। যার উপসর্গগুলি নতুন করে জানতে পারছে মানুষ। কিছুটা যেন অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের  মতোই। করোনার মতো এবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকেও মহামারী ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। প্রত্যেক রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, এই রোগকে ‘মহামারি আইন’-এর তালিকাভুক্ত করা হোক। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মোকাবিলায় বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।


সেই সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য দফতর একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে নতুন এই বিপদ মোকাবিলা করার জন্য। মহারাষ্ট্রে আতঙ্ক অনেকটাই বেশি। ৯০ এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন এই রোগে। তাই করোনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আতঙ্ক বেশি জাঁকিয়ে উঠছে মনে। 


তবে এই রোগ কতটা আতঙ্কের ? কীভাবেই বা বাঁচা যায় আতঙ্ক থেকে ? ভাইরাস-যুদ্ধে পর্যুদস্ত মানুষের জন্য একটাই আশার খবর, মিউকরমাইকোসিস দুর্বল শরীরেই হানা দেয় সহজে। অর্থাত্ এখানেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে কোমর্বিডিটি। ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার (Consultant Surgeon, Surgical Oncologist) বলছেন, ভয়ঙ্কর ভাবে ইমিউনো সাপ্রেশন না হলে ঝট করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শরীর-কব্জা করবে না। শরীর অন্য কোনও কারণে দুর্বল হলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক্কেবারে তলানিতে ঠেকলেই হতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণ। সুস্থ মানুষ রাস্তায় হাঁটছে আর তাকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ধরে নিল, এটা সম্ভব নয় !


সুস্থ সবল মানুষ সাধারণ কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললে অনেকটাই সুরক্ষাবলয়ে থাকতে পারবেন বলেই মনে করছেন পালমনোলজিস্ট ডা. অংশুমান মুখোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, 



  •  বাগানে বা মাটি নিয়ে কাজ করলে, জুতো, পা-হাত ঢাকা জামা কাপড় পরে কাজ করুন। কাজের পর ভালভাবে হাত-মুখ ধোওয়া জরুরি।

  • ওরাল হাইজিন মেনে চলুন। দিনে দুইবার ব্রাশ করুন।

  • খালি পায়ে মাটিতে হাঁটবেন না।

  • গা ঘষে স্নান করুন

  •  কোভিড সেরে উঠেছেন সবে ? নজর রাখুন নিজের শরীরে। সামান্য কিছু উপসর্গ দেখলেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

  • ডায়াবেটিক হলে ব্লাডে গ্লুকোজের মাত্রায় নজর রাখুন।


এ বিষয়ে চিকিত্সক দীপ্তেন্দ্র সরকার  জানালেন, '' সরকারি নির্দেশিকা বলছে,  চোখ ও নাকে ব্যথা ও লাল হয়ে যাওয়া।, জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি' ইত্যাদি হলেই সতর্ক হতে হবে। মহামারীর মতই প্রস্তুতি নিতে হবে একে রোখার জন্য। তাই এর ওষুধ অ্যাম্ফোটিরিসিন-বি -র কালোবাজারি এড়াতে সরকারকে এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। কোভিড সেন্টারগুলিতেও প্রস্তুতি রাখতে হবে।"


এছাড়া যে বিষয়টিতে নজর রাখতে হবে, সেটি একেবারেই চিকিতসকদের হাতে। স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি। করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে একটা স্তরে গিয়ে স্টেরয়েড ব্যবহার ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু খুব প্রয়োজন না পড়লে স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগাম টানতে হবে। চিকিত্সক অংশুমান মুখোপাধ্যায় জানালেন, ভাইরাস আক্রমণ হলেই শরীরের বিভিন্ন অর্গ্যানে ও ফুসফুসে ইনফ্ল্যামেশন হলে স্টেরয়ড দিতেই হয়। সেক্ষেত্রে সতর্কতা নিতেই হবে। 


হঠাত করেই বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের এমন প্রাদুর্ভাব কেন ? 


ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণ বরাবরই ছিল। কিন্তু সেটা এনডেমিক পর্যায়ে ছিল। ক্যান্সার, এইডস বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে যাঁদের কিংবা ডায়ালিসিস চলছে, এমন অতি দুর্বল শরীরের উপর সহজেই হানা দিত কালো ছত্রাক । কিন্তু করোনা অতিমারীর কারণে যখন বহু মানুষেরই শরীরে ইমিউনিটি লেভেল তলানিতে ঠেকেছে, তখন এই রোগও ছড়াচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে। জানালেন চিকিত্সক দীপ্তেন্দ্র সরকার ও অংশুমান মুখোপাধ্যায়। 


চিকিত্সক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, "এটি বেশ উদ্বেগের বিষয়। এখনও পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ৫-৬ জনের মধ্যে থাকলেও আমাদের অতিমারী বা মহামারীর মতোই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।''