কলকাতা : বাচ্চা মায়ের দুধ টানতে পারছে না। মায়ের স্তনে যথেষ্ট দুধও আসছে না। পেট ভরছে না , কাঁদছে। বাচ্চা জন্মানোর পর থেকেই মায়েদের এই অভিযোগগুলি তৈরি হলই। তারপরই আরেকটি সমস্যা মাথা চাড়া দেয়। কবে থেকে বাচ্চা জল খাবে? সলিড খাওয়ার বয়স হতে না হতেই মায়েদের অভিযোগ শুরু হয়ে যায়, শিশু মাছ খাচ্ছে না, ডিম খাচ্ছে না ! কেন? এরপর আরেকটি কমন সমস্যা - বাচ্চা খাচ্ছে না। যা খাবার দেওয়া হয় তাই নিয়েই ঘ্যানঘ্যান। আসলে এগুলি কোনওটাই বাচ্চাদের সমস্যা নয়। সমস্যাটা হল মা-বাবা বা তার পরিবারের কিছু ভুল ধারণা বা প্রচলিত কিছু পদ্ধতি। সদ্য জন্মানো শিশু থেকে ২-৩ বছরের বাচ্চার বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খাবার খাওয়ানোরও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। সেগুলি মেনে চলতেই হবে । এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডঃ অনন্যা ভৌমিক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার।
সদ্যোজাত বাচ্চার ক্ষেত্রে -
- মায়ের দুধ যথেষ্ট আসে না বলে কোনও কথা নেই
মায়ের দুধ যেন সব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমানে পায়, সেই মিশন নিয়েই এই সপ্তাহ পালন। মা ও সন্তানের শারীরিক সুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে মাতৃদুগ্ধ দান ও পানের উপর। শুধু তাই নয়, দুজনের ইমোশনাল বন্ডিংও অনেক ক্ষেত্রে এর উপর নির্ভরশীল। বিষয়টির গুরুত্ব অনেকেই বোঝেন না, কিংবা শারীরিক সমস্যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মা সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করানো বন্ধ করে দেন। এতে যেমন আছে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা, তেমন কিছু পারিপার্শ্বিক সমস্যাও। কিন্তু যে কোনও পরিস্থিতিতেই বাচ্চাকে দুধপান করাতেই হবে। বাচ্চা যতবার কাঁদবে ততবারই। বাচ্চার স্পর্শ-স্বরের সঙ্গে মায়ের যে মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, তাতে করেই হরমোন ক্ষরিত হয়ে, স্তনের দুধ তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু করে। তাই বাচ্চাকে কাছে রেখে বারবার দুধ খাওয়াতেই হবে। অনেকক্ষেত্রে হয়ত বাচ্চাকে ধরার পোজিশনে ভুল হয়ে যাওয়ার কারণেই, দুধ টানতে পারে না সন্তান। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জানালেন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার। সেই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে বাচ্চা জন্মানোর পর স্তনের হলুদ দুধ খাওয়ানো মাস্ট। এটি বাচ্চাকে অনেক রোগ থেকে বাঁচায়। - বাচ্চাকে টিন ফুড দেবেন না
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডঃ অনন্যা ভৌমিক জানালেন, অনেকেই পরামর্শ দেন, মায়ের দুধে বাচ্চার পেট ভরছে না, তাই বাইরের টিন-ফুড খাওয়াতে। কিন্তু সেটা না করাই ভাল। কারণ বাচ্চার প্রয়োজনীয় দুধ কিন্তু সব মায়ের শরীরেই তৈরি হয়। শুধু দরকার ধৈর্য হারিয়ে না ফেলা ও বাচ্চা কাঁদলেই তাকে ফিড করানো।
- বাচ্চাকে বাইরের জল দেবেন না
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডঃ অনন্যা ভৌমিক জানালেন, কোনও মতেই বয়স ৬ মাস হওয়ার আগে শিশুকে জলও খাওয়াবেন না। বাচ্চার খাবার হবে শুধুই স্তনের দুধ।
- ভুলেও বাচ্চাকে মধু খাওয়াবেন না
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানালেন, অনেকেরই ধারণা , মধু শীতে শরীর গরম রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু বাচ্চার জন্য মধু কোনও উপকারে আসে না। পুষ্টিবিদরা বলছেন, মধু থেকে যদি ইনফেকশন দানা বাঁধে, তা কিন্তু ভয়ঙ্কর আকার নেয়। - বাচ্চার ৬ মাস বয়স হলে
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডঃ অনন্যা ভৌমিক জানালেন, শিশু ৬ মাসের হলে তাকে অল্প অল্প করে জল খাওয়াতে হবে। তবে তা ২০ মিনিট ফুটিয়ে। অল্প অল্প করে জলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে ঘরের খাবার শুরু করা যেতে পারে। খিচুরি, ভাত বা কখনও পাতলা করে ডাল বা পায়েসও দেওয়া যেতে পারে।
- বাচ্চাকে মাছ ডিম মাংস একসঙ্গে নয়
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডঃ অনন্যা ভৌমিক জানালেন, বাচ্চার ডায়েটে ৬ মাসের পর আগে মাছ, তারপর ডিম ও তারপর চিকেন দিতে হবে। কখনওই সবকিছু একসঙ্গে নয়। তাহলে কোনও খাবারে শিশুর কী প্রতিক্রিয়া বোঝা যাবে না। ডিমের ক্ষেত্রে কিন্তু আগে ডিমের সাদা ও পরে ডিমের কুসুম দিতে হবে।
- মায়ের দুধ দেওয়া ধীরে ধীরে কমাতে হবে
পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুকে ২ বছর অবধি স্তনদান করা হেলদি প্র্যাকটিস। তবে বাইরের খাবার শুরু হলে , তার ফাঁকে ফাঁকে ফিড করাতে হবে। তবে ৬ মাস বয়স অবধি শিশুর খাবার এক্সক্লুসিভলি স্তনের দুধই।