কলকাতা : এবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার মধ্যেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কিছু শিশু। মাল্টি সিস্টেম ইমফ্লামেটরি সিস্টেম ইন চিলড্রেন  (Multi System Inflammatory Syndrome) । এই অসুখ কোভিড পরবর্তীতে যথেষ্ট ভুগিয়েছিল প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর এই রোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছিল রোগীরা। অনেক ক্ষেত্রে হয়ত শিশুর বাবা-মা জানতেনই না, তাঁদের সন্তানের করোনা হয়েছিল। তার কারণ, বাচ্চাদের টেস্ট করানোর প্রতি অহীহা, ফলে কোভিড-আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতেই পারেননি অভিভাবকরা। ফলে পরবর্তীকালে লক্ষণগুলি নিয়ে প্রথম থেকে সতর্ক হননি তাঁরা। এবার দেখা যাচ্ছে, কোভিড পজিটিভ থাকাকালীনই কেউ কেউ  মাল্টি ইমফ্লামেটরি সিস্টেম ইন চাইল্ড দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একটি সাড়ে তিন বছর ও নয় বছরের শিশুর মধ্যে এই লক্ষণ দেখা যায় এবং তাঁদের পরিস্থিতি যথেষ্ট সিরিয়সও হয়ে যায়। তবে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তারা এখন সুস্থতার পথে। 


কী এই অসুখ ? 


শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দেব রায় জানালেন, মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন (Multi System inflammatory syndrome)  একেবারে সদ্যোজাত থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছানো ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই এই রোগ দানা বাঁধতে দেখা যেতে পারে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবন কেড়ে নিতে পারে এই অসুখ। 

ডা. অগ্নিমিতা গিরি জানালেন, করোনার এই ঢেউতে শিশুরা বেশির ভাগ মৃদু উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছে সে। তাই হয়ত অভিভাবকরা বাচ্চাদের করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, শিশু করোনা আক্রান্ত কি না না জানলে কোভিড আক্রান্ত থাকাকালীন বা পরে এই ধরনের জটিলতা বাড়তে সমস্যায় পড়বেন বাড়ির লোকেরা। বেশি দেরি হলে শিশুকে আইসিইউ অ্যাডমিশন অবধি করাতে হয়েছে।  তাই শিশুদের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। 


কী কী উপসর্গ মূলত দেখা যাচ্ছে ? 


বেশ কয়েকদিন জ্বর না কমা। ক্রমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে।  চিকিৎসকরা মনে করছেন প্রাথমিক স্তরেই যদি অভিভাবকরা আক্রান্ত শিশুটিকে নিয়ে আসেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রোগীকে সুস্থ করা যাচ্ছে নচেৎ চিকিৎসা জটিলতা বাড়ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু ঘটছে। অসুখ একটা স্তরে পৌঁছে গেলে বাচ্চার শরীরে বিভিন্ন অরগ্যান আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সময় রোগীকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে । এই অসুখের  কাওয়াসাকি ডিসিজের মতো। 


করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা যখন দেখা যায় , তখন দেখা যাচ্ছিল কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর এই সমস্যা নিয়ে আসছিল শিশুরা। সেক্ষেত্রে কারও কনজাংটিভাইটিস এর মত চোখ লাল,  কিন্তু পুঁজ নেই এমন সমস্যা হচ্ছিল। ঠোঁট ফেটে  লাল হয়ে থাকছিল। সেই সঙ্গে গায়ে দেখা দিচ্ছিল Rash । কারও কারও আবার  গলার গ্ল্যান্ড ফোলা দেখা যাচ্ছে ।এসব উপসর্গ গুলি দেখামাত্র সাধারণ জ্বর বা ঋতু পরিবর্তন কালীন অসুস্থতা না ভেবে সরাসরি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া শ্রেয় ।


অসুস্থতা একটু বেশি দূর গড়িয়ে গেলে দেখা যায় এই অসুখ ক্ষতি করছে হৃদপিন্ড ও ফুসফুস, কিডনি , মস্তিষ্ক , শ্বাসনালী,  খাদ্যনালী , চোখ ত্বক, ইত্যাদিরও। 


সমস্যা জটিল হলে আর কী কী ঘটতে পারে ? 



  •  বমির প্রবণতা

  • ডায়রিয়া

  • পেটে যন্ত্রণা

  • শ্বাসকষ্ট

  • বুক ধড়ফড় করা

  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া

  • ত্বকে গুটি গুটি rash

  • শরীর অবসন্ন ভাব

  • মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।