পল্লবী দে, কলকাতা: কিডনি দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও খনিজ উপাদান পরিস্রুত করে শরীরে উপাদান সমতা বজায় রাখার কাজটি করে থাকে এই অঙ্গটি। কিন্তু রোগ বাসা বাঁধে এখানেও। অনেকেই ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা ক্রনিক রেনাল ফেলিওর বা দীর্ঘদিনের কিডনির সমস্যায় ভোগেন। এক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি খাওয়ারের দিকে নজর দেওয়াও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিডনির অসুখ হলে নানা ভ্রান্ত ধারণা থাকে। যেমন- প্রোটিন খাওয়া যাবে না। কিন্তু এর ফলে যে আরও নানা রকম রোগের শিকার হতে পারেন রোগী, সেদিকেই নজর দেওয়ার পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ অরিত্র খাঁ।
এবিপি লাইভের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, "আমাদের ভ্রান্ত ধারণা আছে যে কিডনির সমস্যা হয়েছে মানেই প্রোটিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কিডনির সমস্যা মানেই কিন্তু প্রোটিন বন্ধ করে দেওয়া নয়। প্রোটিন শরীরে নেওয়া বন্ধ করে দিলে দেহে নাইট্রোজেন সমতা কমে যায়। সেক্ষেত্রে রোগীর কোষ ক্ষয় (muscle loss) শুরু হয়। শুধু তাই নয় সারকোপিনিয়া (sarcopenia) এবং শরীরে ভাঙনমূলক ক্রিয়াকলাপও শুরু হতে পারে। এর ফলে ভীষণ শীর্ণকায় হতে শুরু করবেন রোগী। ধীরে ধীরে হিমোগ্লোবিন কমতে শুরু করে দেহে, রক্তাল্পতা (anemia) দেখা দেয় শরীরে। সেই জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কিন্তু তাঁদের ডায়েট ঠিক করা হয়।"
কিডনির রোগীদের জন্য এই ডায়েট কীভাবে করা হয়ে থাকে?
পুষ্টিবিদ ও কিডনি ডায়েট বিশেষজ্ঞ অরিত্র খাঁ জানান, রোগীদের ক্ষেত্রে প্রথমেই রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার রেট (eGFR), Blood Urea Nitrogen, ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট-এগুলি দেখা হয়। সব রকম ইলেক্ট্রোলাইট, ফসফরাসও দেখে নেওয়া হয়। এই দিকগুলো দেখে নিয়ে একজন কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ডায়েট তৈরি করা হয়।
দীর্ঘদিনের কিডনির সমস্যায় কী ধরনের ডায়েট রাখা হয়?
অরিত্র খাঁ বলেন, "এই ক্রনিক কিডনি ডিজিজ স্টেজ ওয়ান থেকে স্টেজ ফোর পর্যন্ত থাকে। এখন রোগী কোন স্টেজে রয়েছে তা দেখে নিয়ে আমরা ডায়েটে ক্যালোরি নির্ধারণ করি। সাধারণত লো প্রোটিন ওয়ান (৪০-৪৫ গ্রাম) এবং লো প্রোটিন টু (২০-২৫ গ্রাম) দেওয়া হয়। সারাদিনে এর থেকে বেশি প্রোটিন খাওয়া যাবে না। হাইপোক্যালেমিয়া (Hypokalemia) (পটাসিয়াম কমে যাওয়া), হাইপোনেট্রিমিয়া (Hyponatremia) (সোডিয়াম কমে যাওয়া) এই সমস্যা এসে যায়।
এই সব রোগীর ক্ষেত্রে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন বাদ রাখা হয়। সেক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে ডিমের সাদা অংশ, সপ্তাহে একদিন বা ২ দিন ডিমের কুসুম। মাছ খেলেও তা ৪০ থেকে ৫০ গ্রামের মধ্যে খাওয়া যেতে পারে। তবে বড় মাছ নয়। চিকেনও খাওয়া যেতে পারে। অনেকের ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি থাকে। সেখানে উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাওয়া বাদ রাখা হয়। উদ্ভিজ প্রোটিন খাওয়া যায় বলেই জানান তিনি।
পাশাপাশি পুষ্টিবিদ এও জানান, এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে পটাসিয়াম-এর পরিমাণ কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ পটাসিয়াম রয়েছে এমন খাওয়ার ডায়েট থেকে বাদ রাখা হয়। যেমন- ধনেপাতা, সজনেডাটা, পালং শাক, আলু, কাঁচা পেঁপে। আসলে যাঁদের কিডনির সমস্যা থাকে তাঁদের রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যাকে বলা হয় হাইপারক্যালামিয়া। সেক্ষেত্রে প্রোটিনিউরিয়া হতে থাকবে (অর্থাৎ দেহ থেকে মূত্রের মাধ্যমে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া)। কিডনি নষ্ট হতে শুরু করবে। মেডিকেল ডায়েট থেকে তাই এগুলি রেস্ট্রিকশন করার চেষ্টা করা হয়। আবার ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার (পেয়ারা, দুধ, গুড় ইত্যাদি), যাঁদের হয়ত পুষ্টিগুণ ভাল, কিন্তু কিডনির রোগে তা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। নুনের ভাগও কমাতে হবে।
তাই কিডনির অসুখ হলেই প্রোটিন খাওয়া যাবে না, এমন ভ্রান্ত ধারণা না রাখাই ভাল বলে জানান পুষ্টিবিদ।