কলকাতা : ৫৬ দিন জীবন-মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে লড়াই। করোনায় একটি ফুসফুস প্রায় বিকল । গ্যাংগ্রিন হয়ে বাদ দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল আঙুল। করোনা আক্রান্ত ছিল দেড় বছরের মেয়েও। এমন কঠিন যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েও জীবনে ফিরলেন অনির্বাণ ভৌমিক। করোনাকে হারালেন। মৃত্যুভয়কেও করলেন জয়। সপরিবারে ঘুরে দাঁড়ালেন বড়সড় হোঁচট খেয়েও। যদিও সহজ ছিল না লড়াইটা একেবারেই। ফুসফুস হয়ে পড়েছিল বিকল। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে একমো সাপোর্টে থাকার ১৫ পেরিয়ে গেলেও ডাক্তারটা শোনাতে পারেননি আশার কথা। বরং রোজই আসছিল দুঃসংবাদ। ভয়ঙ্কর সেই পরিস্থিতির কথা এবিপি লাইভের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন অনির্বাণ ও স্ত্রী অলিম্পিয়া। 
ব্রুয়েই থেকে বাড়িতে আসা ছুটিতে। ২০২০ তে   দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কথা শুনতেন ফোনে, খবরে। চিন্তায় থাকতেন পরিবারের মানুষদের নিয়ে। বারবার সাবধান করতেন সকলকে। কিন্তু ভাবেননি কোনও একদিন এই মারণ ভাইরাস তাঁকেই ক্ষত বিক্ষত করবে। 

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে দেশে আসেন অনির্বাণ। সঙ্গে  দেড় বছরের ফুটফুটে মেয়ে। মেনে চলতেন করোনাবিধি  অক্ষরে অক্ষরে। কিন্তু করোনার কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হল  তাঁর গোটা পরিবার। মারণ-ভাইরাসের কবলে পড়েছিল ছোট্ট শিশুটিও। আর অনির্বাণ নিজে আক্রান্ত হন, হেপাটাইটিস এ-তেও। প্রথমে হেপাটাইটিস এ ধরা পড়ে, তার  ২ দিন পর করোনা পজিটিভ  রিপোর্ট আসে । সময়টা এপ্রিল মাস। কলকাতায় তখন করোনা-বেডের আকাল ভয়ঙ্কর। তারই মধ্যে বহু চেষ্টায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অনির্বাণকে। কিন্তু ভাল হওয়ার বদলে ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। ক্ষীণ হয়ে আসছিল আশা। ফুসফুসের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ দেখে রোগীকে স্থানান্তরিত করা হয় ECMO সাপোর্টে। যেখানে ফুসফুসকে বিশ্রাম দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে চালানো হয় ফুসফুসের কাজ। এরই মধ্যে সারিয়ে তোলা হয় এই অঙ্গকে। কিন্তু ডাক্তাররা আশার আলো দেখছিলেন না। রোজই প্রায় আসছিল নেতিবাচক রিপোর্ট। জানালেন অনির্বাণের স্ত্রী অলিম্পিয়া। 'একদিন চিকিত্সকরা বললেন ওঁর আঙুলে গ্যাংগ্রিন হয়েছে। বাদ দিতে হতে পারে। শিউরে উঠেছিলাম আমি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্রাই গ্যাংগ্রিন হওয়ায় রক্ষা পায় আঙুল। নইলে বাদই দিতে হত ! '


জীবনের আলো ক্রমেই যেন ক্ষীণ হয়ে আসছিল। কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল একটি ফুসফুস। কিন্তু অবচেতনেও কোথাও প্রবলভাবেই জীবিত ছিল মনের জোর। মেয়ের কাছে ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছে। আর ছিল মেয়ের আকুল 'বাবা' ডাক। স্বামীকে কাছে পাবেনই আবার, দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন স্ত্রী অলিম্পিয়া। তিনি জানালেন, 'মেয়ে সারাদিন বাবা... বাবা করে খুঁজত। একমোতে যখন জ্ঞান থাকার কথাই নয়, মেয়েকে ভিডিও কলে দেখে ওর চোখ দিয়ে জল পড়ত। মেয়ের বাবা ডাকের জোরেই বোধ হয় ওঁর ফিরে আসা, সেই সঙ্গে ছিল অ্যাপোলো গ্লিনিগলসের চিকিত্সকদের হার-না-মানা জেদ। '



অবশেষে একমোতে থাকার ২৪ দিন পর আস্তে আস্তে চিকিত্সায় সাড়া দিতে শুরু করেন তিনি। প্রথম- প্রথম নিজের স্ত্রীকেও চিনে উঠতে পারেননি। তবে কয়েকদিনের মধ্যে অনেকটাই সামলে ওঠেন তিনি। আপাতত নিজের পায়ে ভর দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছেন অনির্বাণ। বিশ্বাস, খুব শিগগিরি সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে আগের মতোই কাজে ফিরবেন তিনি।