ওয়াশিংটন : কোভিড অতিমারি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন টিকার। সেই টিকা হিসেবে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম টিকার প্রয়োগ করা হচ্ছে। অন্যথা নয় আমাদের দেশ ভারতও। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, এই সব টিকার কোম্পানি হয়ত আলাদা হতে পারে। উৎপাদক দেশের নাম হয়ত আলাদা হতে পারে। কিন্তু একটা জায়গায় এরা সবই এক গোত্রের। তা হল, প্রত্যেকটি টিকাই আপনাকে নিতে হবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে বা বলা ভাল সুচের মাধ্যমে। কিন্তু, কেমন হত যদি আপনি এক মুহূর্তে নাকের কাছে একটু স্প্রে করে নিলেন। আর আপনার টিকা নেওয়া হয়ে গেল! না, ইঞ্জেকশনের ব্যথার ভয়। না, বিষয়টার জন্য অনেক দূরে ছুটে যাওয়ার ঝক্কি। আরও মজার বিষয় হল, এই টিকার এক ডোজই যথেষ্ট।
সম্প্রতি, এমনই কোভিড টিকার খোঁজ পাওয়া গেল। ইউনিভার্সিটি অফ লোয়া এবং ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়া একত্রে গবেষণা চালাচ্ছিল কোভিড ১৯-এর টিকা তৈরিতে। সেখানেই তারা যৌথভাবে একটি টিকা তৈরি করেছে। এবং এই টিকা তারা ইতিমধ্যে ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করেও দেখেছে। গবেষকদের দাবি, ইতিমধ্যে তাঁরা ইঁদুরের উপর এই টিকা প্রয়োগ করে দেখেছেন যে, করোনা থেকে বাঁচতে এই টিকা ব্যবহারের উপযোগী। ইতিমধ্যে গবেষকদল নাকি প্রমাণ পেয়েছে যে, এই টিকার জন্য এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীকে কোভিড সংক্রমণ রোখা যাবে।
গবেষকদলের অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্ব অধ্যাপক ও চিকিৎসক পল ম্যাকক্রে বলেছেন, 'এখন যে টিকাগুলো বিশ্বজুড়ে পাওয়া যাচ্ছে, তা সবই কার্যকরী। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, গোটা বিশ্বের এখনও অনেক-অনেক মানুষ টিকা পাননি। অর্থাৎ, কোভিড থেকে বাঁচতে দরকার বেশি পরিমাণ টিকার সরবরাহ এবং অবশ্যই সেটা যেন ব্যবহার করাও সহজ হয়। তাতেই কোভিড সংক্রমণকে যথার্থভাবে রোখা যাবে। আমরা যে নতুন টিকা তৈরি করেছি, মানবদেহে তার ব্যবহারের যদি সুফল পাওয়া যায়, তাহলে কোভিড এবং সার্সের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই অনেক সহজ হবে।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জাতে যেমন 'ন্যাসাল স্প্রে' ব্যবহার করা হয়, এই টিকাও সেরকম। এই টিকা কোনও সুচের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয় না। সুবিধা আছে আরও। অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে যেমন দুটো করে ডোজ নিতে হচ্ছে, এই টিকার ক্ষেত্রে একটি ডোজই যথেষ্ট। আরও সুবিধার বিষয় হল, এই টিকা বাড়ির সাধারণ রেফ্রিজারেটরেও সংরক্ষিত করে রাখা যাবে তিন মাস পর্যন্ত। যেহেতু অনেকই সুচের জন্য ইঞ্জেকশন নিতে ভয় পান, এই টিকা যেহেতু স্প্রে করেই নেওয়া যাবে, তাতে ভয়েরও কোনও ব্যাপার নেই।
ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার চিকিৎসক এবং অধ্যাপক চিকিৎসক বিয়াও হি বলেছেন, 'এই টিকা গবেষণাকেন্দ্রটি গত ২০ বছর ধরে আমরা তিল-তিল করে গড়েছি। এবং কোভিড অতিমারীর একেবারে শুরুর দিন থেকেই আমরা এই টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। আমাদের আবিষ্কৃত এই নতুন টিকা মানুষকে শুধু কোভিড থেকে বাঁচাবেই না। এই রোগের সংক্রমণও রুখবে দ্রুত গতিতে।' এখন দেখার যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গোটা পৃথিবীর কয়েক কোটি মানুষ মারা গিয়েছেন। সেই মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচতে সুচহীন টিকা স্প্রে করেই মানুষ কেমন উপকার পায়। গবেষকরা তো আশাবাদী। যদি সত্যিই এমন হয়, তাহলে কোভিড অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে এই টিকা সত্যিই এক অন্য মাত্রার ভূমিকা নেবে।