কলকাতা: দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠতেই তৃতীয় ঢেউয়ের (Corona Third Wave) আতঙ্ক শুরু হয়েছে। শরতের আকাশ যখন আগমনী সুর গাইছে, তখনই সমীক্ষা বলছে, সাবধান! উত্সবে একটুও গা-ফিলতি নয়। একটু ভুল পদক্ষেপ নিলেই বিরাট আকারে অক্টোবরেই ধাক্কা দিতে পারে তৃতীয় ঢেউ। তার অভিঘাতটা নেহাত কম হবে না । দেশজুড়ে চলছে ভ্যাকসিনেশন। এরই মধ্যে মানুষ আশা করছে দ্বিতীয় ঢেউতে এত মানুষ সংক্রমিত হওয়ার পর বোধ হয় হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, লক্ষ্য এখন বহুদূর। সার্ভে বলছে কোনও দেশের জনগণের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তখনই তৈরি হয়, যখন জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ সংক্রমিত হন। আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঠিক কতটা দূরে ? ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভ কি করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে আমাদের বাঁচাতে পারবে? এবিপি লাইভকে এই প্রশ্নগুলিরই জবাব দিয়েছেন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার।
- কাদের ঝুঁকি সবথেকে বেশি ?
ডা. সরকার জানালেন, আরও একটা ধাক্কা থেকে পুরো দেশকে বাঁচাতে যত সংখ্যক মানুষের ভ্যাকসিনেশন হওয়া জরুরি ছিল, তার থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে আমরা। ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার যে ভাবনা প্রধানমন্ত্রী ভেবেছিলেন, বাস্তবে তা হওয়া একপ্রকার অসম্ভবই। অন্তত পরিসংখ্যান ও ভ্যাকসিনেশনের গতিপ্রকৃতিই তাই বলছে। অন্যদিকে আরও একদল মানুষ এখনও ভ্যাকসিন নিতে চাইছেন না। কারও কারও আবার একটা ডোজই ভ্যাকসিন হয়েছে। জনসংখ্যার এই ভাগটি কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউতে আক্রান্ত হতেই পারেন, সেই সঙ্গে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। - করোনা Third Wave এ কারা কিছুটা হলেও সুরক্ষিত ?
তৃতীয় ঢেউয়ে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারেন, যাঁদের ভ্যাকসিন হয়ে গিয়েছে কিংবা যাঁরা দ্বিতীয় ঢেউতে ভাল রকম লড়াই করে সুস্থ হয়েছেন। করোনার সেকেন্ড ওয়েভে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হয়েছিলেন, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি থেকে যাবে, এমনটাই বলছে সমীক্ষা। সেক্ষেত্রে, বিপদ কিছুটা কম। আর যাঁদের দুটি করে ভ্যাকসিন হয়ে গিয়েছে তাঁরা কিছুটা হলেও সেফ। - কোথায় কেমন সংক্রমণ ঘটতে পারে?
ডা. সরকার জানালেন, আমাদের দেশের করোনা আক্রান্ত হওয়ার হিসেব বা হার্ড ইমিউনিটির পরিসংখ্যানটি এলাকা ভিত্তিক হওয়া দরকার। পশ্চিমবঙ্গেরই একেকটি জেলায় একেকরকম সেরো পজিটিভিটি। যেসব জায়গায় সেরো পজিটিভিটি বেশি,সেখানে তৃতীয় ঢেউয়ের অভিঘাত কম হওয়ার সম্ভাবনা কম। যেখানে সেরো পজিটিভিটি কম, সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা থার্ড ওয়েভে বেশি হতেই পারে। - স্কুল খোলার ভাবনা কতটা সঠিক ?
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, থার্ড ওয়েভের পরিস্থিতি দেখে নভেম্বরে স্কুল খোলার কথা ভাবা হবে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েই ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার মনে করছেন, যেহেতু শিশুদের ভ্যাকসিন এখনও শুরুই হয়নি, সেখানে তাঁরা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়তে সক্ষম হবে না। সেক্ষেত্রে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। করোনায় শিশু মৃত্যুহার কম হলেও, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা তো কম নয়। তাই একটা ভুল সিদ্ধান্তের অনেক বড় মাশুল দিতে হতে পারে।