জয়পুর : করোনা ক্ষতি করছে হৃদযন্ত্রের। কোভিডে আক্রান্ত হলে ঠিক কী সমস্যায় পড়তে পারেন হার্টের রোগী। উত্তর দিচ্ছেন জয়পুরের স্ট্রাকচারাল হার্ট ডিজিজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রবীন্দ্র সিং রাও।
কোভিডে আক্রান্ত হলে ক্ষতি হচ্ছে হৃদযন্ত্রের। এমনকী যুবকরাও এই সমস্যার থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না। কীভাবে কোভিড-১৯ মানুষের হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করেছে-এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী ?
উত্তর : কোভিড-১৯ ইনফেকশনে হার্টের সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হতে পারে সংক্রমিতের। আবার সামান্য হার্ট রেট বেড়েই সমস্যা শেষ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হার্টের ব্লাড ভেসেলে জমাট বেঁধে যেতে পারে রক্ত। একই ঘটনা ঘটতে পারে ফুসফুসের ক্ষেত্রেও। ডাক্তারি পরিভাষায় একে পালমোনারি এমবোলিজম বলে।
এখানেই শেষ নয়। রোগীর দেহে করোনা ভাইরাসের ফলে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশিতে প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়তে পারে। তবে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর সাধারণভাবে রোগীর হার্ট রেট কম থাকে। তবে তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যায়। তবে কোভিডের ফলে হার্ট মাসলের ক্ষতি হয়। তা অনেক সময় আক্রান্ত হয়ে ফুলে যায়। যার জেরে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। মূলত, কোভিডের ফলে হৃদযন্ত্রে মায়োকারডিটিস হয়ে যায়। করোনা ভাইরাস হার্টে ঢুকলেই এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কী কারণে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে এই ধরনের রোগীর মৃত্যু হয় ?
উত্তর : হার্টের রোগী বলতেই মূলত হার্ট অ্যাটাকের রোগীকেই ধরা হয়। তবে করোনা আক্রান্ত হার্ট অ্যাটাকের রোগীর থেকে সাধারণ হৃদ রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। এ ক্ষেত্রে তাঁদের হার্ট অ্যাটাক হাসপাতাল বা বাড়ি যেখানেই হোক না কেন ঝুঁকি থেকেই যায়। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, মহিলাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। হাসপাতালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া মহিলাদের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ৯ গুণ বেশি।
জীবনযাত্রা বদলে যাওয়ার ফলেই কি আমাদের হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে ? এ বিষয়ে আপনার কী মতামত ?
উত্তর : কোভিড ইনফেকশনের সঙ্গে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বা হাইপারটেনশন আপনাকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ২৮.৪ মিলিয়ন অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে এইসব রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছে। গত কিছু দশক ধরে ভারতে করোনারি হার্ট ডিজিজ ১.৬ শতাংশ থেকে ৭.৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। গ্রামের ক্ষেত্রে এই বিশাল পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। শহরের জনসংখ্যার ক্ষেত্রে এই শতাংশের হিসেবটা ১ থেকে ১৩.২ শতাংশে পৌঁছেছে। শারীরিক ব্যায়াম না করার ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। সঙ্গে দোসর হিসাবে যোগ দিয়েছে মানসিক চাপ। অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে মানুষ।
কোভিডকালে দেখা যাচ্ছে, অনেক হার্টের রোগী করোনায় আক্রান্ত হতেই রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। যদিও 'ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন'-এর গবেষণা বলছে, রক্তচাপের ওষুধের সঙ্গে কোভিড১৯-এর ঝুঁকির কোনও সম্পর্ক নেই। রক্তচাপের ওষুধের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। প্রয়োজনে ডাক্তার ওষুধ বদলেও দিতে পারেন। কিন্তু সাধারণ রক্তচাপের ওষুধ কোভিডকালে চালিয়ে যাওয়া উচিত।
সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড রোগী কীভাবে হার্টের যত্ন নেবেন ?
উত্তর : কোভিড পরবর্তী কার্ডিয়াক কেয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো হার্টের ওষুধ নিয়ে যেতে হবে রোগীদের। ব্লাড থিনারসের সঙ্গে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট সুস্থ রাখতে ৪৫ মিনিটের রোজ ব্যায়াম প্রয়োজন। সঙ্গে সুষম আহার ও ইতিবাচক চিন্তাধারা হার্ট সুস্থ রাখার পক্ষে জরুরি। হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক রাখতে 'আন প্রসেসড ফুড' খাওয়া উচিত।
কোভিডের সময় শরীরের ওজনের বিষয়ে সচেতন হোন। শরীরে যাতে কোনওভাবে জলের পরিমাণ কম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এই সময় ধূমপান করবেন না। এমনকী খাবার বা মদ্যপানের ক্ষেত্রেও নিজেকে সংযত রাখুন। বাড়িতে সবসময় এক মাসের ওষুধের স্টক বজায় রাখা এই সময় বুদ্ধিমানের কাজ। করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলেও সামাজিকতা বজায় রাখুন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলুন । এতে হার্ট সুস্থ থাকবে।
ওজন কমাতে ৫ ফাইনাল টিপস
ঘরে সাহায্যের লোক না থাকায় এখন কিটো ডায়েট করা সম্ভব নয়। তাই লো-কার্ব ডায়েটের দিকে যান। সব স্বাভাবিক হলে ফের কিটো ডায়েটের দিকে ঝুঁকবেন।
'ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং'-কোভিডকালে দীর্ঘ সময় ধরে উপবাস খুব ভালো আইডিয়া। প্রথমে ব্রেকফাস্ট বন্ধ করে ১২ ঘণ্টা উপবাস রাখার চেষ্টা করুন। পরবর্তীকালে এই উপোসের সময়টা ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়ে যান। সপ্তাহে পাঁচদিন দীর্ঘ সময় ধরে উপোস করুন।
ভারী খাবারের মাঝের সময় বার বার হাল্কা খাবার নেবেন না।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে স্কিপিং, ডান্সিং, যোগ ব্যায়াম ছাড়াও অ্যারোবিকস এক্সারসাইজ করুন।
হাই ক্যালোরি ডায়েটের থেকে লো ক্যালোরি ডায়েটের দিকে ঝুঁকুন।
( সাক্ষাৎকারের সৌজন্যে- আইএএনএস লাইফ )