নয়াদিল্লি: ইঞ্জেকশনের জায়গা ফুলে যাওয়া, যে হাতে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে, সেই হাতে ব্যথা থেকে শুরু করে হাল্কা জ্বর, মাঝারি ক্লান্তিভাব, মাথা যন্ত্রণা, শরীরে শিড়শিড়ানি এমনকী ডায়রিয়া --- চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এগুলি হল কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণোত্তর কিছু সাধারণ উপসর্গ। তবে তাঁদের মতে, ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্রই যেমন দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি, এক্ষেত্রে চিন্তার কোনও কারণ নেই। বাড়িতে থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
দ্য কোয়ালিশন অফ ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটির একজিকিউটিভ ডিরেক্টর সুজিত রঞ্জন জানান, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর, কেন্দ্রে অন্তত ৩০ মিনিট থাকাটা জরুরি। সেই সময় গ্রহিতার শরীরে ভ্যাকসিনের কী প্রভাব হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। স্বাস্থ্য়কর্মীরা ওই সময় দেখবেন যাতে ভ্যাকসিন নেওয়ার আধ-ঘণ্টার মধ্যে গ্রহিতার শরীরে কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। তবে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরলের মধ্যে বিরল।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য। সাধারণত, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরে ইমিউনিটি বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তবে, কয়েকজনের মধ্য হাল্কা থেকে মাঝারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসক তেজস্বিনী দীপক জানান, ভ্যাকসিন নিলেই যে রোগ যে আপনাকে ছুঁতে পারবে না, তেমনটা নয়। অর্থাৎ, পূর্ণ গ্যারান্টি নেই। তবে, অতিমারীর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন নিয়ে সমষ্টিগতভাবে মোকাবিলা করাই উচিত। গ্রহিতার শরীরের রসায়নের ওপর নির্ভর করে কিছুক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে, সেগুলি বাড়িতেই নিরাময় সম্ভব।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ক্লান্তিভাব থেকে শুরু করে মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা এবং কিছু অন্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে, প্রচুর পরিমাণ জল খাওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম, সুষম আহার, হাল্কা ব্যায়াম এবং যথাসম্ভব কম পরিমাণ চা-কফি খাওয়া জরুরি। শরীরে ব্যথা হলে একটা প্যারাসেটামল ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইঞ্জেকশন নেওয়ার জায়গায় ব্যথা সাধারণত একদিনের মধ্যে কমে যায়। তবে জ্বর ও শরীরজুড়ে ব্যথা কমতে সময় লাগে ২-৩ দিন। এই সময়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই। নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, এগুলি ছোটখাটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মাত্র। ইঞ্জেকশনের জায়গায় ব্যথা হলে ভিজে তোয়ালে পেঁচিয়ে রেখে দিতে পারেন। ব্যথা কমানোর জন্য প্রয়োজনে ওষুধ খেতে পারেন। জ্বর আসলে অ্যান্টি-পাইরেটিক্স জাতীয় ওষুধ ও প্রচুর জল খান। জ্বর হলে, শরীরকে বিশ্রাম দেওয়াটাই ভাল।
দিল্লির জিটিবি হাসপাতাল ও ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক খান আমির মারুফ বলেন, প্রথমত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে ভাবারই প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই ম্যানেজ করে নেবেন। অনেকে ইন্টারনেটে পড়ে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন। এটা ভীষণই ক্ষতিকারক প্রবণতা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ব্যথা বা শারীরিক সমস্যা ২-৩ দিনের পর দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যান।
মারুফ বলেন, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ২ সপ্তাহ পর থেকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে শুরু করে। তবে, ভ্যাকসিন ১০০ শতাংশ রোধক নয়। সংক্রমণের সম্ভাবনা তখনও থাকে।
দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক নবনীত কৌর বলেন,ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রদাহ কমানোর খাবার খান। যেমন স্ট্রবেরি, চেরি, কমলালেবু, ম্যাকরেল, সবুজ পাতাওয়ালা শাকসব্জি, বাদাম। প্রসেস্ড ও জাঙ্ক ফুডের পরিমাণ কমিয়ে দিন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, ঘুমও ভাল হবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভ্যাকসিন গ্রহণের পর মদ্যপান ও ধূমপান নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও, চিকিৎসকদের মতে, এই দুই জিনিসকে দূরে রাখাই ভাল। একইসঙ্গে এ-ও মনে করিয়ে দেন, ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাও জরুরি।