কলকাতা : ' ধুর ! ভ্যাকসিন নিয়ে হবেটা কী ?  সেই তো করোনা হচ্ছে। ' , এমনটা ভাবনা থেকে ভ্যাকসিনে দ্বিতীয় ডোজটি এড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকে। কোথাও কোথাও আবার দ্বিতীয় ডেজ নিতে লাইন দেওয়ার অনীহা থেকেও ভ্যাকসিন ছুট হচ্ছেন অনেকে। মোটের উপর ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয়টি না নেওয়ার হরেক রকম অজুহাত নিয়ে তৈরি অনেকে। কিন্তু তাঁরা কি আদৌ জানেন, ঠিক সময়ে ভ্যাকসিনের পরের ডোজটি না নিলে কী কী সমস্যা হতে পারে ? কিংবা কেউ যদি দুইরকম ভ্যাকসিন নেন দুটি ডোজে ? কী ক্ষতি ? নাকি কোনও ক্ষতিই নেই ? এবিপি লাইভের সঙ্গে সববিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় চিকিত্সক দীপ্তেন্দ্র সরকার। 


 



  • ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ না নিলে কী ক্ষতি ? 

    চিকিত্সক সরকার জানালেন, যদি কোভিশিল্ডের প্রসঙ্গে আলোচনা করি, তাহলে দেখা গেছে এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি নেওয়ার ৩ সপ্তাহ পর আলফা ও বিটা স্ট্রেন থেকে ৫0-৫৫ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৩০ শতাংশ প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে সপ্তাহ তিনেক পর। বর্তমানে আলফা ও বিটা স্ট্রেনের থেকে বেশি মাথা ব্যথা ডেল্টা নিয়েই। কারণ দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশিরভাগ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেই। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজটি হয়ে গেলে, আলফা-বিটার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। ডেল্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ৬০ শতাংশ। তাই কোনওভাবেই মিস করা যাবে না পরের ডোজ। তাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখন দুটি ডোজই সুলভ করে দেওয়া হচ্ছে। 


  • কেউ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ মিস করলে কি ক্ষতি ? 

    দ্বিতীয় ভ্যাকসিন না নিলে প্রথম ভ্যাকসিনটি নিয়েও কোনও লাভ হবে না। দেখা গেছে, প্রথম ডোজটি নেওয়ার ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে। তারপর থেকেই ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া কমতে থাকে। বা আদৌ থাকে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। কিন্তু প্রথম ডোজের প্রভাব সর্বাধিক কতটা সময় থাকে, তারউপর ভিত্তি করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয়টি দেওয়ার। এখন কেউ যদি সেই ব্যবধান বাড়িয়ে ১৩২ দিন করে দেয়, তাহলে কোনও প্রোটেকশন তো থাকবেই না, উপরন্তু প্রথম ডোজের উপকারিতাও চলে যাবে। শরীর বুঝবেই না, দ্বিতীয় ডোজ যেটি গ্রহীতা বেশি ব্যবধানে নিলেন, তা বুস্টার নাকি নতুন ভ্যাকসিনেশন !! 


  • ১২ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ নেওয়ার কি কোনও ক্ষতি আছে ? 

    না। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের প্রভাব ৩ মাস বা ১২ সপ্তাহ অবধি থাকে, সেই সর্বোচ্চ সময়সীমা দেখেই সরকার ঠিক করে ভ্যাকসিনের ২ য় ডোজের সময়। কারণ প্রথমদিকে দেশে চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিনের যোগান ছিল না। তাই প্রথমে জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া জরুরি ছিল। এরপর যদি ভ্যাকসিনের জোগান বাড়ে, তাহলে হয়ত সরকার এই ব্যবধান কমাতে পারে। ইউকে-ও কিন্তু একই পদ্ধতিতে এগিয়েছে। তাই সরকারি সিদ্ধান্ত ঠিক কি ভুল এই নিয়ে চর্চা না করে মন দেওয়া দরকার, ভ্যাকসিন ঠিক সময়ে নিয়ে ফেলার বিষয়টিকে। তাহলে হয়ত তৃতীয় ঢেউয়ের অভিঘাত কিছুটা এড়ানো যেতে পারে।