ডায়াবেটিস। সরাসরি ঘাতক রোগ না হলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী, গভীর। মধুমেহ আসলে সায়লেন্ট কিলার। সিঁধ কেটে ঢোকে শরীরে। হয়ত যখন ধরা পড়ল, তখন ব্লাড সুগার লেভেল হাই। তারপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর। ডায়াবেটিসের প্রভাবে কিডনি, লিভার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই এর প্রভাব পড়ে চামড়াতেও। ক্ষতি হয় স্নায়ুর কাজকর্মেও। যাকে বলা যেতে পারে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়। কার কতদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে, তার উপরই নির্ভর করে রোগী ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হবেন কি না। যাঁর ঠিক সময়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাঁর ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা কম!

  


নার্ভের বিভিন্নরকমের সমস্যা হতে পারে ডায়াবেটিসের জন্য।



  • সবথেকে বেশি দেখা যায় পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি - পা থেকে সমস্যা শুরু হয়। পায়ের পাতায় লক্ষণ চোখে পড়ে। হাতের আঙুল থেকে শুরু হতে পারে। লক্ষণ গুলি হল -

  • অসাড় ভাব

  • ঝিম ধরে যাওয়া

  • শিরশিরানি হওয়া

  • পরবর্তীতে হাত-পা জ্বালা 

  • রাতে শোওয়ার সময় বেশি জ্বালা ধরে। অনেকটা লঙ্কার জ্বালার মতো

  • অনেক সময় অবশ হয়ে যায়। যাকে হাইপো অ্যাস্থেশিয়া বলে। আঘাত লাগলে সাড় না পাওয়া, ব্যথা না বোঝা, এই হাইপো অ্যাস্থেশিয়ার লক্ষণ।

  • অনেক সময় হাতে গরম জল পড়লে বা পায়ে পেরেক ফুটলেও টের পাওয়া যায় না। অসাড়ে পায়ের গভীরে ইনফেকশন ছড়াতে থাকে। যাকে ডায়াবেটিক ফুট বলা হয়ে থাকে। হাড় অবধি ইনফেকশন ছড়িয়ে যায়। 

  • ডায়বেটিক ফুটে অনেক সময় ইনফেকশন এতদূর ছড়ায়, যাতে পায়ের একাংশ বাদও দেওয়া হতে পারে। যাকে বলে - diabetic foot amputation

  • নার্ভ একবার ড্যামেজ হলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া কঠিন । তবে সুচিকিৎসায় এর প্রতিরোধ সম্ভব

  • অটোনমিক নিউরোপ্যাথি। এর অর্থ, শরীরের মধ্যে আভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রতঙ্গের যে নার্ভের সঞ্চালন হয়, তার সমস্যা। যার মুখ্য কারণ ডায়াবেটিস। 

  • এই ধরনের নিউরোপ্যাথি রেচনতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অসাড়ে প্রস্রাব হওয়ার মতো লক্ষণ হয়। ইউরিন ইনফেকশন দেখা যায়। 

  • প্রস্রাবের সময় প্রদাহ হয়ে থাকে । 

  • মহিলাদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে শুষ্কতা আসতে পারে। 

  • হার্ট রেটে পরিবর্তন আসে। 

  • বসা থেকে দাঁড়ালে ব্লাড প্রেসার কমে যায়। 

  • সুগার কমে গেলে বুঝতেও পারেন না  অটোনমিক নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্তরা। 

  • পাকস্থলীর সঙ্কোচন প্রসারণ কমে যায়। সহজে হজম হয় না খাবার।  

  • প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি। এতে সাধারণত কোমর-ঘাড়ের কাছের স্নায়ু ও পেশীর সমস্যা হতে পারে। কোমর ও থাইতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতে পারে। সেখানকার পেশী কমজোরি ও সরু হয়ে যেতে পারে।

  • এছাড়াও নার্ভের আরও অনেক কঠিন সমস্যা হতে পারে। 

  • মনোনিউরোপ্যাথিতে একটি নার্ভ হঠাৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি নার্ভের সঞ্চালন স্থান ধরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। যেমন চোখের নার্ভ আক্রান্ত হলে নানা সমস্যা হতে পারে। এর থেকে ডাবল ভিশন আসতে পারে। এছাড়া আরও কিছু সমস্যা আসতে পারে। 

    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে এই সমস্যা গভীরে যায় না। বা গেলেও নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণই হল ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি আটকানোর সহজ পন্থা। 



    ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়