কলকাতা: রক্ততঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া মানবদেহের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কারও কারও ক্ষেত্রে জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটি ব্য়হত হয়ে থাকে। এই রোগটিই হল হিমোফিলিয়া (Hemophilia)।
হিমোফিলিয়া একটি জিনগত বিরল রোগ, যার ফলে শরীরের রক্ত ঠিকমতো জমাট বাধে না। শরীরের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। কোনও জায়গায় আঘাত লাগলেও অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় এই রোগে আক্রান্তদের। 


কত প্রকার?
সাধারণত হিমোফিলিয়া ২ প্রকার। একটি হিমোফিলিয়া এ, অন্যটি হিমোফিলিয়া বি।  এর মধ্যে হিমোফিলিয়া এ- প্রজাতি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। সেই তুলনায় অতি বিরল হিমোফিলিয়া বি।


হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হলেই সবার যে একরকম ভাবে রক্তপাতের সমস্যা হবে তা নয়। বিভিন্ন বিষয়ের উপর তার মাত্রা নির্ভর করে। কারও ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার হওয়ার পর রক্তপাত বন্ধ করতে সমস্যা হয়। আবার কারও ক্ষেত্রে সামান্য আঘাত লাগলেও শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। বেশ কিছু উপসর্গ দেখে চেনা যায় এই রোগ।


কী ধরনের উপসর্গ
যেকোনও কেটে যাওয়া জায়গা বা আঘাত লাগা জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত
অস্ত্রোপচার, দাঁত সংক্রান্ত চিকিৎসার পর অত্যধিক রক্তপাত
গাঁটে, হাঁটুতে প্রায়শই রক্ত জমে যাওয়া, ফুলে যাওয়া
মল বা মূত্রেও অনেকসময় রক্ত দেখা যায়
যাদের এই রোগ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে মাথায় সামান্য আঘাত লাগলেও রক্তপাত হতে থাকে। শুরু হয় প্রবল মাথাব্যথা।


বিপদ কোথায়
অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ: মাংসপেশির ভিতরে রক্তপাত ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ ফুলে যায়। ক্ষতি হয় স্নায়ুরও। 
গলা বা ঘাড়ের সমস্যা: গলা, নাক বা ঘাড়ে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়ে থাকে
গাঁটে অস্বাভাবিক ব্যথা: শরীরের বিভিন্ন গাঁটে, হাঁটুর ভিতরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। দ্রুত চিকিৎসা না শুরু হলে সেই জায়গার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। 
সংক্রমণের থাবা: হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা সহজেই বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হতে পারেন। তেমন হলে ঘটতে পারে প্রাণ সংশয়ও
এছাড়াও আরও একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এই রোগে আক্রান্ত হলে।    


চিকিৎসা
সেই অর্থে প্রাণঘাতী রোগ না হলেও হিমোফিলিয়া অত্যন্ত জটিল রোগ। সচেতন হলে নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন সাবধানে থাকাও। বিশেষ ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতির সাহায্যে এই রোগ থেকে হওয়া নানা সমস্যা ঠেকিয়ে রাখা যায়। কোনওরকম উপসর্গ চোখে পড়লেই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।  


আরও পড়ুন: মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগের লক্ষণগুলি কী কী?