করোনা অতিমারী ২০২০ সাল থেকে আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ভাইরাসের থাবা কেড়ে নিয়েছে একের পর এক প্রাণ। কিন্তু করোনা তাঁদেরই বেশি ক্ষতি করেছে, যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে। বিশেষত যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাঁদের সহজেই ঘায়েল করতে পেরেছে মারণ ভাইরাস, দেখা গেছে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিকিত্সকদের কথায়  হাই ব্লাড প্রেসার মহামারীর থেকে কম কিছু নয় ! শুধু ব.স্করা নয়, কমবয়সীরাও রীতিমতো ঘায়েল হচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। আর তার ফলস্বরূপ কমবয়সেই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো সমস্যা। সম্প্রতি হু একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে বলেছে, ব্লাড প্রেসার ১৪০ বাই ৯০ না হওয়া অবধি, ওষুধ খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যেতেই পারে। কিন্তু সত্যিই কি তাই ? Blood Pressure এর সমস্যা নিয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনায়  বিশেষজ্ঞ ডা. অর্পণ চক্রবর্তী (Dr. Arpan Chakraborty, ECMO Physician & Critical Care Consultant, Medica Hospitals)। 



  • কোন বয়স থেকে ব্লাড প্রেসার নিয়ে সতর্ক হতে হবে ? 

    উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাটি এখন আর শুধু বয়স্কদের অসুখ নয়। বর্তমান ট্রেন্ড কিন্তু ভয়ংকর দিকে গড়াচ্ছে। ২০ পেরনো ছেলে-মেয়েরাও আক্রান্ত হচ্ছেন অহরহ।  এমনটা নয় কিন্তু। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা চাপ, স্ট্রেস মধ্য কুড়ি থেকেই ডেকে আনছে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। চিকিত্সকরা বলছেন, যাঁদের পরিবারে হাই ব্লাড প্রেসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের ২০ পেরলেই বিপি মনিটর করা শুরু করতে হবে। হু-এর নির্দেশিকা অনুসারে, ব্লাড প্রেসার যদি ১৪০/৯০ এর বেশি হয়, তবে তো ওষুধ চালু করতেই হবে। কিন্তু লাইফস্টাইল মডিফিকেশন শুরু করতে হবে সময় থাকতেই। দরকারে ২০ পেরলেই।  আজকাল মাঝ ২০ বয়সের হাইপারটেনশনের রোগী সংখ্যায় প্রচুর। অবহেলায় ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। ঘটে যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাক বা সাডেন কার্ডয়াক ডেথ-এর মতো ঘটনাও। 


  • ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়া নিয়ে WHO  এর নির্দেশিকা ঠিক কী বলছে ?

    নতুন জারি করা WHO-র নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, সাধারণ রক্তচাপের উচ্চ মাত্রা হল ১৪০।  নিম্ন মাত্রা ৯০। অর্থাৎ ১৪০/৯০ -এর থেকে বেশি যদি ব্লাড প্রেসার হয়, তাহলে খেতেই হবে ওষুধ।  তবে কো-মর্বিডিটি থাকলে তার আগেই শুরু করতে হবে ওষুধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ, সহ-অসুস্থতা থাকলে ১৩০ বাই ৮০ হলেও প্রেসারের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে পুরোটাই চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে।  




  • ব্লাড প্রেসারের উচ্চ ও নিম্ন মাত্রা দেখেই কি শুধু ওষুধ খাওয়া শুরু করা যেতে পারে ? 

    একেবারেই নয় ! শুধু ব্লাড প্রেসারের কথা ভাবলে চলবে না, দেখতে হবে রোগী ডায়াবেটিক কিনা, ধূমপানের অভ্যেস আছে কিনা তাঁর, অথবা তাঁর কি কিডনির অসুখ আছে? তাই শুধু দুটো সংখ্যা নয়। একজন রোগীর শারীরিক অবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনেই শুরু করতে হবে চিকিত্সা। হু-এর নির্দেশিকা অনুসারে ১৪০ / ৯০ বিপি হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। কিন্তু তার থেকে সামান্য কম-বেশি হলেও ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। আর সেটা যদি হয় কম বয়সেই, তাহলে তো মোটেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ, এই বয়সেই কাজের চাপ, রোজগারের চিন্তা, চাকরির স্ট্রেস, সবথেকে বেশি। সেই সঙ্গে খাওয়াা-দাওয়া বা ঘুমের ঘাটতি তো এখন খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। 


  • কারও কারও প্রেসার ওঠা-নামা করে খুবই ... সেক্ষেত্রে ?

    অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। দেখা যায়, দিনের কোনও সময় প্রেসার বেশি আবার কোনও সময় স্বাভাবিক। তিনি কি ওষুধ খাবেন না ? এই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে চিকিত্সককেই। বিপি মাপার ক্ষেত্রেও একটা নিয়ম আছে। কখনও দেখা যায়, কারও কারও চিকিত্সকের কাছে এলেই হয়ত ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। সেটা হয়ত কিছুটা চিন্তা বা স্ট্রেসের জন্য। সেক্ষেত্রে সারাদিন মনিটরিং করে চার্ট বানিয়ে ডাক্তারকে জানাতে হবে। বাড়িতে ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন এখন কিনতে পাওয়া যায় সহজেই। সেই মেশিনে সারাদিনের বিভিন্ন সময় ব্লাড প্রেসারের রিডিং নিন। আবার কখনও দেখা যায়, কিন্তু যাঁদের সারাদিন বিপি নর্মাল অথচ ঘুমের সময় বেশি, সেটা কিন্তু ভাল কথা নয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যেতে হবেই। 



আপনার ব্লাড প্রেসার একেবারে ঠিকঠাক কিনা, তা জানতে চিকিতসকের উপরই নির্ভর করুন। নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদ ঘটাবেন না।