পায়েল মজুমদার, কলকাতা: বাড়ি বা আশপাশের কোনও পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্য়ক্তির শরীরে কি হঠাতই সোডিয়াম-পটাশিয়াম (sodium potassium level) মাত্রা কমে গিয়েছে? বা ধরুন, জানা কোনও অসুস্থতা ছাড়াই হঠাৎ করে জ্ঞান হারাচ্ছেন? তা হলে সাবধান হোন। কারণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পঞ্চাশের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে এটি নিউমোনিয়ার (symptoms of pneumonia) উপসর্গ হতে পারে। এবং শীতের সময়টা ভাইরাল নিউমোনিয়ার (viral pneumonia) প্রকোপ বাড়ে, এমনই অভিজ্ঞতা তাঁদের। সুতরাং, বছরের এই আপাত আরামের সময়টা আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার।


নিউমোনিয়া কী?
শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো বেঁচে থাকার প্রাথমিক শর্তপূরণে জরুরি যে অক্সিজেন, তা রক্তে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে ফুসফুস। নিউমোনিয়ায় এই ফুসফুসই সংক্রমিত হয়। ফলে আক্রান্তের পক্ষে শ্বাস নেওয়া অত্য়ন্ত কষ্টকর হয়ে ওঠে, রক্তেও অক্সিজেন কম পৌঁছয়। সহজ করে বললে, ফুসফুসের যে অ্যাভিওলি বা এয়ার স্যাক রয়েছে তাতে তরল বা পুঁজ জমে যাওয়াতেই শ্বাসের সমস্যা তৈরি হয়। এতে কখনও একটি, কখনও দুটি ফুসফুসই এতে আক্রান্ত হয়। কতটা সমস্যা হচ্ছে তা নির্ভর করে সংক্রমণের তীব্রতার উপর। 


উপসর্গ:
সাধারণত কাশতে বা শ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যথা, কাশির সঙ্গে মিউকাস, ক্লান্তি, খিদের অভাব, বমি, জ্বর, কাঁপুনি দেওয়া, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা যায় নিউমোনিয়ায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে কখনও সখনও আরও কিছু উপসর্গও থাকতে পারে।যেমন, চেতনার হেরফের। ফর্টিস হাসপাতালে পালমনোলজিস্ট, চিকিৎসক অংশুমান মুখোপাধ্যায় নিউমোনিয়ার উপসর্গকে বয়সের ভিত্তিতে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।



  • ১০-৫০ বছর: এই বয়সিদের মধ্যে শুকনো কাশি, বুকে ব্যথা, ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর, নাকে ও গলায় যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, কফ, কফের সঙ্গে রক্তের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা না হলে গুরুতর সেপসিসও হতে পারে এঁদের।

  • পঞ্চাশোর্ধ্ব: এঁদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার উপসর্গ বহু ক্ষেত্রেই খুব চেনা নয়। সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রা পড়ে যাওয়া, হঠাৎ সংজ্ঞা হারানো বা আচমকা মলমূত্র ত্যাগ, এগুলিই এক্ষেত্রে সাধারণত উপসর্গ হয়ে থাকে।


কারণ:
ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস, দুরকম সংক্রমণ থেকেই নিউমোনিয়া হতে পারে। সাধারণত চেনা ফ্লু ভাইরাস, কোল্ড ভাইরাস, আরএসভি ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে। ব্যাকটিরিয়ার ক্ষেত্রে দুটি মূল উৎস রয়েছে। এক, স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি, দুই মাইকোপ্লাসমা নিউমোনি। যদিও শীতে ভাইরাল সংক্রমণের সমস্যাই বেশি বাড়ে, জানালেন চিকিৎসক মুখোপাধ্যায়। কেন? সেই ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভাইরাসের বাড়বৃদ্ধির সময়। পাশাপাশি এই সময়টায় পরাগ বা পোলেনেরও সময়। যাঁদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা শ্বাসনালীতে সংক্রমণ হতে পারে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সময় ভাইরাল সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা বেশি। আর সেখান থেকেই ভাইরাল নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।'   


মোকাবিলার উপায়...
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে ভাইরাল নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়লেও একে আটকাতে বছরভরই সচেতন থাকতে হবে। প্রথমত, স্নান করার পর বেশিক্ষণ গা-হাত-পা এবং চুল ভিজে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিতে হবে, পরামর্শ চিকিৎসক অংশুমান মুখোপাধ্যায়ের। দ্বিতীয়ত, প্রবল গরমের থেকে হঠাৎ এসি-র কড়া ঠান্ডায় ঢোকা নৈব নৈব চ। রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে ঠান্ডা কোনও কিছুই খাওয়া বা পান করা যাবে না। রাতে এসির সঙ্গে পাখা একসঙ্গে মিশিয়ে চালানো যাবে না। শহরাঞ্চলে যাঁরা মর্নিং ওয়াক করেন, তাঁদের জন্য আলাদা পরামর্শ রয়েছে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। শীতে অন্তত খুব ভোরে বা সন্ধেয় না হাঁটাই ভাল, বলছেন তিনি। কারণ এই সময়ে বাতাস সবচেয়ে দূষিত থাকে। হাঁটতে হলে রোদ উঠে যাওয়ার পর হাঁটা ভালো, বলছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে প্রতিষেধকের উপর। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া, এই দুটির টিকাই নেওয়া জরুরি, মনে করেন চিকিৎসক মুখোপাধ্যায়। তবেই নিউমোনিয়ার আক্রমণ  প্রতিহত করা যাবে।


আরও পড়ুন:সাধারণের ডিম-ভাতেও কোপ! ফের বাড়ল দাম, পকেটে টান মধ্যবিত্তের