হায়দরাবাদ : চিকিৎসাশাস্ত্রে বিরল অস্ত্রোপচারের নজির মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। এবারও তেমনই একটা ঘটনা ঘটল, যা অবাক করে। অস্ত্রোপচার করে সরানো হল 'দৈত্যকার কিডনি' । হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। কারণ, যে কিডনিতে ২০ লিটারের তরল বর্জ্য বা মূত্র থাকে তা তো বিশালাকারেরই! এহেন কিডনিতে সফল অস্ত্রোপচার করলেন এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ নেফ্রোলজি অ্যান্ড ইউরোলজির চিকিৎসকরা। 


বিশাল পরিমাণ তরল বর্জ্য জমে যাওয়ায় বাঁ কিডনির সাইজ বেড়ে যায় ৯০ সেন্টিমিটার। যার প্রভাব পড়ে রোগীর শরীরের অন্যান্য অঙ্গে।


গত ১০ বছর ধরে তলপেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার ৪৭ বছরের ওই রোগী। পরে তাঁর তলপেট ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে। প্রায় এক দশক ধরে এহেন একটা রোগকে অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছিল। সাম্প্রতিককাল তা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে। যার জেরে তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছিলেন ওই রোগী। অগত্যা AINU-র চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন ওই রোগী। খুব সাবধানতার সঙ্গে এই রোগের চিকিৎসা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন চিকিৎসকরা। যাতে Hemodynamic Instability- ঝুঁকি এড়ানো যায়।


AINU-র সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট সৈয়দ মহম্মদ ঘৌউস জানান, ওই রোগী সাম্প্রতিককালে খুব ভুগছিলেন। নিয়মিত তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা হতো। এর পাশাপাশি খিদেও কমে যাচ্ছিল। AINU-তে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেখা যায়, ওই রোগীর বাঁদিকের কিডনিটি বিশালাকার এবং কর্মক্ষমহীন হয়ে পড়েছে। ওই কিডনিতে তরল বর্জ্য বা মূত্র জমে যাওয়ায় রোগীর তলপেটও বড় হতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, অন্ত্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গও তাদের স্বাভাবিক জায়গা থেকে সরে যাচ্ছিল।


তিনি আরও জানান, কিডনি অপসারণের জন্য নেফ্রেকটোমি নামে বিশেষ একপ্রকার অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০ লিটার তরল বর্জ্য বের করা হয় ওই কিডনি থেকে। এই আকারের একটা কিডনির অস্ত্রোপচারের জন্য খুবই দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। অপারেশনের পরেও যার ভাল করে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।


অপারেশনের পর রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার আগে তিন দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এমনকী তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পরও AINU-র বিশেষজ্ঞ দল নিয়মিত তাঁর অবস্থার পর্যালোচনা করছেন। চিকিৎসকরাও বলছেন, দ্রুত রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাছাড়া উনি এখন স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন এবং ওজনও ঠিক হচ্ছে। এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় চিকিৎসক ঘৌউসকে সাহায্য করেছেন ডক্টর রাজেশও ও ডক্টর আমিশ।