কলকাতা: ফুসফুসে ক্যানসার (Lung Cancer)। শব্দগুলি শুনলেই যেন শিরদাঁড়া বেয়ে আতঙ্কের হিমস্রোত বয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) তথ্য অনুযায়ী, কোলন, স্তন এবং লিভার ক্যানসার মিলিয়ে গোটা বিশ্বে যত জনের মৃত্যু হয়, তার থেকে বেশি প্রাণ কাড়ে একা ফুসফুসের ক্যানসার। এমন ঘাতক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রত্যেক বছর, ১ অগাস্ট, পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে। আর সেই সঙ্গে আরও একবার আলোচনায় উঠে আসে ধূমপান ও ধূমপায়ীদের বিপদের কথা। কিন্তু ধূমপান (Smoke) করেন না এমন অনেকেরও পরে ফুসফুসে ক্যানসার হয়ে থাকে। কেন হয় এমন? 


বিপদ কোথায়?
ধূমপান করেন না এমন মানুষদের মধ্যে ফুসফুসে ক্যানসারের হার বাড়ছে, মনে করেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। ঘরে-বাইরে ভয়ঙ্কর দূষণ এবং পরোক্ষ ধূমপান এসব ক্ষেত্রে ফুসফুসে কর্কট রোগের অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। এই নিয়ে Global Cancer Observatory বা Globocan নামে একটি ওয়েব-বেসড সংগঠনের বক্তব্য, যাঁরা ধূমপান করেন না তাঁদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জিনগত মিউটেশনও (জিনের গঠনে বদল) ফুসফুসে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।  সাধারণত, বিশ্বজুড়ে ক্য়ানসার আক্রান্তের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে এই সংগঠন। ২০২০ সালে তারা ফুসফুসে কর্কট-রোগ নিয়ে যে পরিসংখ্যান দিয়েছিল, তাতে দেখা যায় বেশিরভাগ আক্রান্তের বয়সই ৫০-৭০ বছরের মধ্যে। ভারতের ছবিটাও খুব কিছু আশাব্যঞ্জক নয়। মেডিক্যাল অঙ্কোলজি বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, এ দেশে ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে সকলের উপরে রয়েছে Lung Cancer। এর অন্যতম কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগটি অনেকদূর ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত ধরা পড়ে না। তাই ডায়াগনসিসের পরও সে ভাবে চিকিৎসার সুযোগ থাকে না বহু সময়ই। তবে পুরোপুরি আশা ছাড়ার কোনআ জায়গা নেই।  Globocan-এর মতে, এখন টিউমারের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা যায়। তাই ফুসফুসে ক্যানসারেরও একাধিক নতুন পদ্ধতিতে চিকিৎসা হচ্ছে। বিশেষত, যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে 'টার্গেটেড থেরাপি' কার্যকরী হতে পারে। বাড়াতে পারে জীবনকালের মেয়াদও, বলছেন ডাক্তাররা। সোজা কথায়, ধূমপান না করলে ফুসফুসে ক্যানসার হবে না, এই ধারণা সর্বাংশে ঠিক নয়। কিন্তু হলেও বেশ কিছু চিকিৎসা কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


কী করবেন ধূমপায়ীরা?
ডাক্তারদের একাংশ মনে করেন, হেভি স্মোকারদের ক্ষেত্রে ফি-বছর 'স্ক্রিনিং সিটি স্ক্যান' দারুণ কাজে লাগতে পারে। এটি হালকা ডোজের স্ক্যানিং করে দেখা হয়, ফুসফুসে কোনও ধরনের অস্বাভাবিকতা রয়েছে কিনা। থাকলে,একেবারে গোড়াতেই তা ধরা সম্ভব। বাঁচানো যেতে পারে বহু প্রাণও। যদি সারানোর মতো হয়, তা হলে এখনও সার্জারিই ফুসফুসে ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রধান ভরসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। তবে এখন এই অপারেশনের প্রক্রিয়াও উন্নত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অপারেশনের মাধ্যমে ফুসফুসের যে অংশে টিউমার রয়েছে সেই টুকুই কেটে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে কোন ক্ষেত্রে কী চিকিৎসা হবে, তা নির্ভর করছে অনেকগুলি ফ্যাক্টরের উপর। কোন ধরনের ক্যানসার, কোন পর্যায়ে রয়েছে, আক্রান্তের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় সূচক-সহ একাধিক বিষয় দেখে নিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা। কিন্তু চিকিৎসার থেকে প্রতিরোধ ভাল। ফুসফুসে কর্কটের ছোবল এড়াতে ধূমপান থেকে দূরে থাকার কোনও বিকল্প নেই, এটাও মনে করাচ্ছেন তাঁরা।   


আরও পড়ুন:অভিষেকের ডাকা বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি বাতিল হাইকোর্টে