কলকাতা : মোনোপজ ? সে তো দেরি আছে। এই ভাবনা ভেবে অনেকেই ভুলে থাকার চেষ্টা করেন জীবনের এক বড় পরিবর্তনের পর্যায়কে। কিন্তু কিছু কিছু লক্ষণ চোরাস্রোতের মতো ঢুকে পড়ে শরীরে। যা আপাত ভাবে বুঝেই উঠতে পারেন না মহিলারা মেনোপজের লক্ষণ বলে। চল্লিশের কোঠার শেষ থেকে মাঝ পঞ্চাশ - এই সময়টাই ঋতুবন্ধের সময়। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই হলেই সমহিলাদের ভাবায় ঋতুবন্ধ। হঠাৎ দেখা গেল কেউ  বেশিই খিটখিটে হয়ে পড়লেন, কারও আবার হঠাৎ ওজন গেল, কেউ আবার ভুগতে শুরু করলেন হাড়ের যন্ত্রণায়। মাঝে মাঝেই মুড সুইং পরিবারের মানুষগুলোকেও বিব্রত করে তুলল। কেউ হয়ত বুঝলেনই না, এটা একটা পরিবর্তনের সিগন্যাল। উল্টে তাঁর উপর বিরক্ত হলেন। মহিলাদের জীবনে এই এক সময়, যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গেলে দরকার চিকিৎসকের পরামর্শ। কোনও কোনও সময় দরকার হতে পারে মনোবিদের সাহায্যও। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আইএলএস হাসপাতালের ডিরেক্টর ও গাইনিকলজিস্ট ডা, অরুণা তাঁতিয়া (Dr. Aruna Tantia) 


MENOPAUSE - এর সময় 


মোটামুটি ৪০ এর শেষ থেকে ৫০ এর মাঝামাঝে ঋতুবন্ধের সময়। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে ৪০ এর আগে এটি হতে পারে।  যখন একে অকাল ঋতুবন্ধ (premature menopause) বলা হয়। যখন ৫৪  বছরের পরও পিরিয়ড হতে থাকে তখন তা উদ্বেগজনক এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন। 


MENOPAUSE - এর লক্ষণ 


কার জীবনে মেনোপজ কীভাবে আসবে, তা একেবারেই নির্ভর করে সেই মহিলার উপর। ঋতুবন্ধের ক্ষেত্রে সাধারণত এক বছর আগে থেকেই অনিয়মিত মেনস্টুয়েশন দেখা দেয়। এই সময়ে শরীরে হরমোনের পরিবর্তনও ঘটে। তাই মন-মেজাজেরও পরিবর্তন হতে পারে। সেটাও পরিবারের লোকেদের বুঝতে হবে। একেক জনের লক্ষণ একেকরকম। তবে নিচের কোনও লক্ষণ যদি আপনার শরীরে এসে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি মেনোপজের আগমন বার্তাও হতে পারে। 


হট ফ্লাশ ( Hot Flushes  ) : বুক থেকে মাথা পর্যন্ত হঠাৎ করে তাপপ্রবাহ অনুভব হল?  তারপর কুলকুল করে ঘাম। হ্যাঁ এটা মেনোপজেরই লক্ষণ। 


নাইট সোয়েট ( Night Sweats )       :   ঘুমের মধ্যে যদি হঠাৎ করে হট ফ্লাশের অনুভূতি হয়, তাহলে তাকে নাইট সোয়েটিং বলে। 


ইনসোমনিয়া ( Insomnia )  রাতের পর রাত ঘুম আসছে না, বার বার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। আপনার বয়স যদি মাঝ চল্লিশ পেরিয়ে থাকে, তাহলে এটা মেনোপজের অ্যালার্ম হতে পারে।


যৌনাঙ্গে শষ্কতা ( Vaginal Dryness )    :  স্বাভাবিকের থেকে যৌনাঙ্গ বেশি শুষ্ক হয়ে যাওয়া 


মেজাজে পরিবর্তন  ( Mood Swings )  কারও কারও উদ্বেগ বেড়ে যায়। সহজেই রেগে যাওয়া, মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। 


যৌন ইচ্ছে কমে যাওয়া (Decreased Sex Drive )    :  শরীরে আসন্ন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে, যৌন চাহিদা কমে যেতে পারে। 


ইউরিন ইনফেকশন হওয়া ও প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা  (Stress Incontinence  )   :  অনেক সময় দেখা যায় সজোরে হাসলে বা কাশলে বা হাঁচলে প্রস্রাব বেরিয়ে আসার সমস্যা হতে পারে।


বুক ধড়ফড় ( Palpitations  )  :  এই সমস্যাটা খুবই সাধারণ। বেশিরভাগ মহিলাই ভুগে থাকেন। 


একটা বয়সের পর এই ধরনের পরিবর্তন তো আসবেই, তাই তা না চিন্তিত হয়ে ভাল থাকতে হবে। তাই এই লক্ষণগুলি নিয়ে বাড়ি বসে বিব্রত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার মাধ্যমে কীভাবে সমস্যাগুলো একটু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা আলোচনা হবে পরের পর্বে।  তবে মনে রাখতে হবে, এগুলি দেখে এড়িয়ে গেলে চলবে না, না ফেলে রেখে ডাক্তার দেখাতে হবে। নইলে বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।