কলকাতা: স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখালেই চ্যানেল পরিবর্তন করে দেওয়া। কিংবা দোকান থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কালো পলিথিন ব্যাগে মুড়ে লুকিয়ে আনার রীতি এখন শহরে অনেকটাই গেছে। এখন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে মাসকাবারি বাজারের সঙ্গেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটটি ক্যারেজে রাখেন মহিলারা। তবে এই চিত্র শহরের। গ্রাম-গঞ্জে এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা ব্যায়বহুল বলেই এড়িয়ে চলেন মহিলারা। তবুও সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যাপকিন বিলি করা হয়ে থাকে। তবুও এখনও বেশি ব্লিডিংয়ের দিনগুলিতে অনেকেই ভরসা করেন কাপড়ের উপর! কারণ দুটো। খরচ বাঁচানো আর বারবার পরিবর্তনের ঝামেলা এড়ানো।
এই পরিস্থিতিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভালো বিকল্প হয়ে উঠতে পারে মেনস্ট্রুয়াল কাপ।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রাণী লোধ (Senior consultant in Gynaecology , IVF , Laparoscopy) জানালেন এই বিষয়ে বিস্তারিত। '' যেখানে অধিকাংশ মহিলাই যথাযথ মেনস্ট্রুয়াল হাইজিনের সুযোগ পান না, সেখানে মেনস্ট্রুয়াল কাপের ব্যবহার খুবই সুবিধাজনক। এককথায় বলতে গেলে, মেনস্ট্রুয়াল কাপ যেমন সুরক্ষিত, তেমনই ইজি টু ক্যারি আবার ততটাই পকেট-ফ্রেন্ডলি।যদিও আমাদের দেশে এখনও কাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সংস্কারগত বাধাও আছে অনেকের মনে। এই বাধাগুলি কেটে যাওয়া দরকার।'
ডা. দীপান্বিতা হাজারি জানালেন, যেহেতু মেনস্ট্রুয়াল কাপ যোনির ভিতরে প্রবেশ করাতে হয় তাই অল্পবয়সী ও অবিবাহিত মেয়েরা এই কাপ ব্যবহার করতে দ্বিধা করেন, তা অসুবিধাজনকও। কিন্তু যাংরা নিয়মিত যৌনজীবন যাপন করেন বা মা হয়ে গেছেন, তাঁরা অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারেন এই কাপ।
ডা. ইন্দ্রাণী জানাচ্ছেন, এই কাপ খুবই সুরক্ষিত। শরীরের ভিতর প্রবেশ করানো হয় বলে ভয়ের কোনও কারণ নেই। তা নির্দিষ্ট জায়গাতেই আটকে থাকে। আলাদা করে কোনও অস্বস্তি দেয় না। তাছাড়া হাঁটাচলা দৌড়ালেও তা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
যোনিপথের মাপ অনুসারে বিভিন্ন সাইজের কাপ পাওয়া যায়। স্মল, মিডিয়াম ও লার্জ। প্রথমবার ব্যবহারের আগে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার পদ্ধতি জেনে নিনতে হবে।
এটি সিলিকন দিয়ে তৈরি বলে খুবই আরামদায়ক। পিরিয়ডের সময় রক্ত গিয়ে জমা হয় ওই কাপে। যা কয়েকঘণ্টা পর বের করে ফেলে পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করতে হয়। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমে।
একটি কাপ ব্যবহার করা যায় বেশ কয়েক মাস । খরচ স্যানিটারি ন্যাপকিনের থেকে অনেক কম।
একবার কাপটি পরলে কয়েক ঘণ্টা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। এটি পরে নিলে শরীরচর্চা থেকে নাচ, সাইকেল চালানো থেকে খেলাধুলো, সব কাজই করা যায় নির্দ্বিধায়। বারবার প্যাড বদলানোর ঝামেলা থাকে না।
কোনটি পারফেক্ট সাইজ, তা জানতে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন। কাপটি ভ্যাজাইনাতে প্রবেশের আগে
শহরের মেয়েরাও অনেকেই ঝুঁকছেন মেনস্ট্রুয়াল কাপের দিকে।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ ভাঁজ করে যোনিপথে প্রবেশ করাতে হয়। প্রবেশ করানোর পর নিজে থেকেই কাপের ভাঁজ খুলে যায় এবং নিজেকে যোনির মধ্যে ফিট হয়ে যায় কাপ।
কী করবেন, কী করবেন না
- ব্যবহারের পর যেন গরম জলে ভাল করে স্টেরিলাইজ করে নিতে হবে।
- এক জনের কাপ কখনওই অন্য জন ব্যবহার করবেন না।
- স্যানিটারি ন্যাপকিনের তুলনায় এটি অনেক বেশি সময় ব্যবহার করা যায়।
- এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল, এতে জামাকাপড়ে দাগ লাগার কোনও সম্ভাবনা থাকে না।