নয়াদিল্লি: ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যে ফুসফুসের ক্যান্সার দেখা যাচ্ছে, তা এশিয়া এবং পশ্চিমের রোগের থেকে ব্যতিক্রম বলে মত বিজ্ঞানীদের। বিশেষ করে ভারতে যাঁরা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দেশের জটিল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ জনবিন্যাস রোগের জিনগত গঠনের উপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা হচ্ছে। (Lung Cancer Report)
ভারতের যে সমস্ত মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে আরও একটি চমকপ্রদ দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ ভারতীয়ই জীবনে কখনও ধূমপান করেননি। তার পরও কী করে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা? বিজ্ঞানীদের দাবি, এর নেপথ্যে বায়ুদূষণের ভূমিকা থাকতে পারে। ধূমপান না করেও শুধুমাত্র বায়ুদূষণের জেরেই তাঁরা মারণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মত বিজ্ঞানীদের। (Uniqueness of Lung Cancer in South-East Asia)
The Lancet-এর eClinical Medicine Journal-এ ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পরিবর্তনশীল জলবায়ু, যেমন বায়ুদূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণ ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠেছে, যা ফুসফুসের ক্যান্সারকেও ত্বরান্বিত করছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পশ্চিমি দেশগুলির তুলনায় ভারতে প্রায় একদশক আগেই থাবা বসাচ্ছে ফুসফুসের ক্যান্সার। পশ্চিমি দেশগুলিতে সাধারণ ভাবে ৫৪ থেকে ৭০ বছর বয়সিদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হলেও, ভারতে তার চেয়ে কম বয়সিরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: Diabetes Issues: সুগার রয়েছে ? হার্ট ও কিডনির খেয়াল রাখবেন কীভাবে
মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের গবেষকরাও এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। গবেষকদের মতে, সাধারণ কিছু নির্দেশিকা যদিও রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেমন পরিবর্তন ঘটছে, সেক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিসংখ্যানকে মাথায় রেখে নির্দেশিকা আনতে হবে।
ভারতে কম বয়সিরা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন কেন, সেই নিয়েও যুক্তি তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, ভারতের তরুণ জনসংখ্যাই এর জন্য দায়ী। ভারতের তরুণ জনসংখ্যার গড় হার যেখানে ২৮.২ বছর, সেই নিরিখে আমেরিকায় ৩৮ বছর, চিনে ৩৯ বছর। বায়ুদূষণ, জিনের চরিত্রবদল এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। যে কারণে ১৯৯০ সালে যেখানে ফুসফুসের ক্যান্সারের হার প্রতি ১ লক্ষে ৬.৬২ শতাংশ ছিল, ২০১৯ সালে তা প্রতি ১ লক্ষে ৭.৭ শতাংশে এসে পৌঁছয়। পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে এই অনুপাত যথাক্রমে ৪২.৪ শতাংশ এবং ১৪.২ শতাংশ। পুরুষদের তুলনায় কম সংখ্যক মহিলা ধূমপান করেন বলেই এই ফারাক বলে মত বিজ্ঞানীদের।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS)-এর গবেষকরাও এ নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। এশিয়ায় ফুসফুসের ক্যান্সার যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। ২০২২ সালের World Air Quality Report-কে সামনে রেখে গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে ৩৭টিই দক্ষিণ এশিয়ার। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় প্রথম যে চারটি রয়েছে, তাতেও শামিল ভারত। চিন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং তাইল্যান্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগও সবচেয়ে বেশি। ফেল ২০২০ সালে এই দেশগুলিতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক মানুষ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, ৯ লক্ষ ৬৫ হাজারের বেশি। এশিয়ায় এই মুহূর্তে ফুসফুসের ক্যান্সার অন্যতম বড় বিপদ হিসেবে উঠে এসেছে, এর নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তনেরও ভূমিকা রয়েছে বলে মত গবেষকদের।