কলকাতা: শরীরের যেমন অসুখ হয়, মনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তবু, মনের ক্ষেত্রে অসুস্থতার কথা সহজে আমাদের অধিকাংশই মেনে উঠতে পারি না। এর অন্যতম বড় কারণ, মানসিক স্বাস্থ্য ও অসুখের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা ধরনের ধ্যানধারণা যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।আজ, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে মনের (World Mental Health Day 2023) অসুখের সঙ্গে সেই 'মিথ' (Myths Reof Mental Illness) গুলি  নিয়ে আরও একবার আলোচনা করা যাক?



ভ্রান্তি ও বাস্তব...



  •    অনেকে মনে করেন, আবেগের বহিঃপ্রকাশ, বিশেষত কান্না, চরিত্রগত দুর্বলতার লক্ষণ। বাস্তব তা নয়। যে কোনও ধরনের আবেগ-জড়ানো ঘটনায় কান্নার মতো প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। অন্য দিকে, দীর্ঘ দিন ধরে আবেগ চেপে রাখলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিজের আবেগকে প্রথমে মেনে নেওয়া, তার পর ভাল করে  বোঝা ও সবশেষে সেটি নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্যের অন্যতম দিক লুকিয়ে।

  • কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন, পেশাদার মনোবিদ বা মনোবিশেষজ্ঞের সাহায্য় চাওয়া মানেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি  'উন্মাদ'। এই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল। স্ট্রেস বা অ্যাংজাইটি থেকে বেরিয়ে আসতে বা পার্সোনাল গ্রোথের জন্যও থেরাপি/কাউন্সেলিং কাজে লাগতে পারে।

  • প্রচার, আলোচনা সত্ত্বেও বহু মানুষ এখনও মনে করেন, মানসিক সমস্যা কোনও বাস্তবিক সমস্যাই নয়। অবসাদ, উদ্বেগ, বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে শুরু করে স্কিৎজোফ্রেনিয়া-সহ একাধিক অসুস্থতা যে বাস্তবেই বহু মানুষকে কষ্ট দেয়, তা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।

  • নিজের সমস্যা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করা মানে সে আসলে দুর্বল, এমন বিশ্বাসও রয়েছে অনেকের মধ্যে। বাস্তব কিন্তু তা নয়। বরং পরিবার থেকে পেশাদার কাউন্সেলর, যে কোনও কারও কাছেই নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বললে সাহায্য মিলতে পারে।

  • নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের মানুষেরই মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে, এমনও মনে করেন কেউ কেউ। এটিও সত্যি নয়।  বয়স, লিঙ্গ, জাত নির্বিশেষে যে কোনও মানুষ এর শিকার হতে পারেন।

  • থেরাপি বা কাউন্সেলিং যে কেউ করতে পারেন, এমনও একটি ধারণা রয়েছে। সেই কারণে, ভাল বন্ধু থেকে শুরু করে প্রিয় মানুষ, অনেকের কাছেই মন খুলে সমস্যার কথা বলেন কেউ কেউ। কিন্তু এটিও ভুল। থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ জরুরি। তাই পেশাদার ছাড়া এই পরিষেবা পাওয়া সম্ভব নয়।

  • কাউন্সেলিং বা থেরাপি শুরু করলে সেখান থেকে বেরোনো সম্ভব নয়, এই বিশ্বাসও রয়েছে কারও কারও। বিষয়টি একেবারে সঠিক নয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে যা শেষ হলে সংশ্লিষ্ট থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলর সেই পরিষেবা নিজেই শেষ করেন, অন্তত করার কথা।
    কাজেই বিভ্রান্তিকর জল্পনায় কান না দিয়ে মনের কথা, তার ভাল-মন্দে নজর রাখুন।


আরও পড়ুন:কতটা হাঁটলে ঝরবে মেদ, থাকবেন সুস্থ?