ওয়াশিংটন: যে সকল করোনা সংক্রমিতের শারীরিক ওজন বেশি বা যে সকল কোভিড-আক্রান্ত স্থূলকায়, তাঁদের মধ্যে তীব্র সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি বলে দাবি করা হয়েছে একটি গবেষণায়। বলা হয়েছে, রোগাদের তুলনায় মোটা রোগীদের সংক্রমণ বেশি তীব্র হতে পারে। একইসঙ্গে, বেশি ওজনের রোগীদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনও বেশি প্রয়োজন হতে পারে। 


সম্প্রতি, 'ডায়াবেটিস কেয়ার' শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রে এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, স্থূলকায় ব্যক্তিরা যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁদের সংক্রমণ ভারী বা তীব্র হতে পারে। যদিও, মৃত্যুর ঝুঁকি ততটা নেই বলেও দাবি করা হয়েছে ওই পত্রে।


গবেষকরা জানিয়েছেন, ১১টি দেশে মোট ৭ হাজার ব্যক্তির ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। গবেষণার দায়িত্বে থাকা অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা জানান, মোট ১৮টি হাসপাতালে ভর্তি থাকা কোভিড রোগী সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। 


এর মধ্যে, এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩৪.৮ শতাংশ রোগী বেশি ওজনের। আরও এক-তৃতীয়াংশ (৩০.৮ শতাংশ) স্থূলকায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, এই দুই শ্রেণির রোগীদের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশিমাত্রায় লেগেছে। পাশাপাশি, এই দুই শ্রেণি মিলিয়ে এদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশের ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়েছে।


তবে, গবেষণায় আরও একটি চমকপ্রদ তথ্যও উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, মৃত্যুর হারের নিরিখে মোটা ও স্থূলকায় রোগীরা অনকেটাই পিছিয়ে রোগা বা সুস্বাস্থ্য বা তুলনামূলক কম ওজনের রোগীদের থেকে। 


গবেষক দলের এক সদস্য তথা ইমিউনোলজিস্ট সিরুন বেকারিং বলেন, এর আগে কখনও স্থূলকায় নিয়ে এত ভিন্ন প্রকৃতির তথ্যকে এক জায়গায় এনে একটি বৃহৎ গবেষণা চালানো হয়নি। তিনি বলেন, একাধিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছে, তীব্র কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাড়তি শারীরিক ওজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 


নতুন গবেষণা সেই ফলাফলকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখানে ঝুঁকির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগেই ইঙ্গিত মিলেছে যে, হৃদজনিত সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাকলে সংক্রমণের মাত্রা তীব্র হতে পারে। এখন দেখা যাচ্ছে, শরীরের 'বিএমআই' অধিক হলেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে।


স্থূলকায় বা বাড়তি ওজনের সঙ্গে কোভিড সংক্রমণের সম্পর্ক কী? বেকারিং-এর দাবি, একটা সংযোগ থাকতে পারে। তা হল, অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক ওজন বেশি হলে, বা কোনও ব্যক্তি স্থূলকায় হলে, তাঁর শরীরে প্রদাহের একটা ধাত থাকে। এর ফলে, সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 


এছাড়া, এমনিতে মোটা মানুষদের একটা শ্বাসজনিত সমস্যা থাকে। ফলত, সেক্ষেত্রেও, কোভিড আক্রান্ত হলে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বৃ্দ্ধি পেয়ে যায়।