কলকাতা : চলে গেলেন সঙ্গীতশিল্পী বাপি লাহিড়ি ( Bappi Lahiri ) । ভুগছিলেন অনেকদিনই । এক মাস হাসপাতালেও ছিলেন করোনা আক্রান্ত হয়ে। তারপর সুস্থতার মুখ দেখলেও , ভাল হতে আর পারলেন না পুরোপুরি।  অবস্থা খারাপ হল, হাসপাতালে ফের ভর্তি হলেন, তারপর ছেড়ে গেলেন এই পৃথিবী। হাসপাতালের তরফে জানানো হল, তিনি অবস্ট্রাকটিভ স্লিম অ্যাপনিয়ায় ( obstructive sleep apnea ) আক্রান্ত ছিলেন।  কী এই অসুখ, যা ৭০ এ পৌঁছানোর আগেই কেড়ে নিল প্রাণ? এই রোগ নিয়ে  সবচেয়ে বেশি সার্চ করেছেন ভারতীয়রা। তাই বাপি লাহিড়ির মৃত্যুতে গুগলে ট্রেন্ডিং হয়ে যায়  Obstructive Sleep Apnea। 


এবিপি লাইভকে বিশিষ্ট চিকিৎসক  শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানালেন , এই রোগ আসলে শ্বাসযন্ত্র ও শ্বাসনালীর জটিল সমস্যা । তবে বিরলও নয়। 



অনেকেই নাক ডাকার সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু কারও কারও নাক ডাকা অস্বাভাবিক বেশি ! যে পেশীগুলির মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতিটি চলে. তা ঘুমিয়ে পড়া কালীন শ্লথ হয়ে পড়ে। কাজের গতি কমে যায়। এর ফলে শ্বাসনালী সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ঘুমের মধ্যে সঠিক ভাবে শ্বাস নেওয়া যায় না। সরু নালী দিয়ে যখন শ্বাসবায়ু যেতে চায়, তখন যে চাপ তৈরি হয়ে শব্দ হয়, তাকেই বলে নাক ডাকা।


  যত বেশি বাড়ে নাক ডাকা, বুঝতে হবে সমস্যা বাড়ছে। এক সময় আর শ্বাস বের হতে না পেরে ঘুম ভেঙে যায়। তখন আবার পেশীগুলো সচল হয়ে যায়। দেখা গিয়েছে, স্থূলকায় ব্যক্তিদের সমস্যা বেশি হয়। জিভ পুরু হয়ে যায়, আলজিভ বড় হয়ে যায়। রোগের গুরুত্ব অনুসারে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। 

আরও পড়ুন :


"বাপিদা'র গান ছাড়া স্টার হয়ে উঠতে পারতাম না", শোকবার্তা গোবিন্দর


এই রোগের  উপসর্গ - নাক ডাকা, আরও সজোরে নাক ডাকা, তারপর হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া। এভাবে বারবার ঘুম ভাঙলে নর্মাল স্লিপের সাইকলটাই নষ্ট হয়ে যায়। ঘুমের চারটি সাইকল একেবারেই ঠিকঠাক হয় না। ক্লান্তি দূর হয় না। ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্তি থাকে। একটু বসে থাকলেই ঘুম পায়। আক্রান্ত ব্যক্তি ঢুলতে থাকেন নিজের অজান্তেই।  কাজের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। ছোট্ট ঘুমের মধ্যেও নাক ডাকতে দেখা যায়। এই উপসর্গ এতটাই বেড়ে যেতে পারে স্থান-কাল-পাত্র মানে না। হয়ত খুব জরুরি মিটিং চলছে, তার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লেন। কিংবা প্রবল কোলাহলের মধ্যেও ঘুম এসে গেল। 


এই অসুখে স্থূলতা বাড়ে। ধীরে ধীরে ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ ডেকে আনতে পারে। মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করতে পারে। এই রোগ দীর্ঘকাল ধরে চললে বড় রকম ক্ষতি করে। যা ঘটে গেল বাপি লাহিড়ির সঙ্গে।  


এই অসুখের নানাভাবে চিকিৎসা হয় । 



  • অ্যাডিনয়েড টনসিল (adenoid tonsillitis) থেকে সমস্যা হলে, টনসিল অপারেশন করে দেওয়া হয়।

  • ইউভিলা বা আলজিভ কেটে দেওয়া হয়।

  • জিভের পুরু অংশও অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়।

  • সি প্যাপ মেশিন ব্যবহার করা যায়। এর দ্বারা জোর করে অক্সিজেন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘুমের মধ্যেও অক্সিজেনের ঘাটতি হয় না।

  • এই উপসর্গগুলি নিয়ে এলে স্লিপ স্টাডি করা হয়। সারা রাত সিপ্যাপ মেশিন ব্যবহার করলে ঘুমের সাইকলটি স্বাভাবিক হয়। 

  • এছাড়া রোগের প্রকোপ আটকাতে ওজন কমানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ