নয়াদিল্লি: প্যারাসিটামল, সেট্রিজিন-সহ বেশ কিছু ওষুধের ককটেল নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু প্যারাসিটামল বিনা ভারতীয়দের চলে না একেবারেই। জ্বর হোক বা মাথাব্যথা, অথবা গায়ে-হাতে যন্ত্রণা, সবেতে প্যারাসিটামলইব ভরসা সাধারণ মানুষের। কিন্তু একটুতেই প্যারাসিটামল খাওয়ার অভ্যাস মারাত্মক হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কোন সমস্যায় প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত, দিনে কতগুলি খাওয়া উচিত, সেই নিয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়া প্রয়োজন বলে মত তাঁদের। (Paracetamol Usage)


সাধারণ মানুষের জীবনে প্যারাসিটমল ট্যাবলেটের বহুল ব্যবহার চোখে পড়ে। প্যারাসিটামল নিরাপদ বলেও ধরা হয়। কিন্তু যথেচ্ছ প্যারাসিটামল খেলে যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্যারাসিটামল প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন্স উৎপাদনে বাধা দেয়, যা কি না এক ধরনের রাসায়নিক। শরীরে প্রদাহজনিত সমস্যা, ব্যথা-যন্ত্রণার জন্য ওই রাসায়নিকই দায়ী। সেটির উৎপাদনে বাধা দিয়ে স্বস্তি জোগায় প্যারাসিটামল। (Paracetamol Side Effects)


অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের সমান প্রদাহবিরোধী উপাদান না থাকলেও, প্যারাসিটামল সাময়িক স্বস্তি জোগায়। তেমন ঝুঁকিও থাকে না। কিন্তু বাকি সবকিছুর মতো, প্যারাসিটামলও বেশি খাওয়া উচিত নয়। এতে যকৃতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। প্যারাসিটামল খেলে, তার বিপাকেও যকৃৎই সহায়তা করে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারে প্যারাসিটামলকে ভাঙে যকৃৎ, যার কিছু অংশ বিষাক্ত। সাধারণ অবস্থায় বিষাক্ত পদার্থগুলিকে সংশ্লেষের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে দেয় যকৃৎ। 


কিন্তু বেশি পরিমাণ প্যারাসিটামল খেলে, বিষাক্ত পদার্থকে আলাদা করতে ব্যর্থ হয় যকৃৎও। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন জানিয়েছে, অতিরিক্ত প্যারাসিটামল খেলে, যকৃতের পক্ষেও বিষাক্ত পদার্থ আলাদা করা সম্ভব হয় না, বরং যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই একান্ত প্রয়োজন পড়লে, দিনে ২-৩টির বেশি প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত নয় বলে মত সেখানকার বিশেষজ্ঞদের। 


ভারতের ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO)-র সুপারিশ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্করা দিমে ৪ গ্রাম প্যারাসিটামল খেতে পারেন। ৭ থেকে ১০ গ্রামের অতিরিক্ত একেবারেই নয়। ০.৫ থেকে ১ গ্রাম অর্থাৎ ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রামে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে ডোজ। চার থেকে ছ'ঘণ্টা অন্তর খাওয়া যেতে পারে।  তবে ওষুধের দৈনিক ডোজ ৪ গ্রাম অতিক্রম না করাই ভাল। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীরের প্রতি কেজি ওজনের নিরিখে ডোজের মাত্রা ১৫০ মিলিগ্রাম অতিক্রম করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ইচ্ছেমতো প্যারাসিটামল খাওয়া একেবারেই উচিত নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


প্যারাসিটামলে যে উচ্চমাত্রার জৈবিক উপাদান রয়েছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার ৮০ শতাংশই শরীর শোষণ করে নেয়। কিন্তু বেশি মাত্রায় প্যারাসিটামল খেলে সেটি বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয়, NAPQI (N-acetyl-p-benzoquinone imine). সাধারণত NAPQI শরীরে মিশে যায়, কিন্তু মাত্রা উচ্চ হলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোষগুলি, প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয়, যার দরুণ কার্যক্ষমতা হারায় যকৃৎ। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া, যথেষ্ট প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।